ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ১৭:১৭:১৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউ পুড়ে ছাই, রক্ষা পেল ৭ শিশু সবজির বাজার চড়া, কমেনি মুরগির দাম সারা দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি কৃষক লীগ নেতাদের গণভবনের শাক-সবজি উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি শিশু হাসপাতালের আগুন সম্পূর্ণ নিভেছে

মায়ের সংগ্রামে জীবন বাঁচলো নোরার

বিবিসি বাংলা অনলাইন | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০২:১৩ এএম, ৩১ জুলাই ২০১৮ মঙ্গলবার

স্বামীকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে জেলবন্দী আছেন ১৯ বছর বয়সী সুদানি তরুণী নোরা হোসেইন।
১৯ বছর বয়সী সুদানি এই তরুণীকে প্রাণে-বাঁচাতে কোন একটা অলৌকিক কিছুর প্রত্যাশা করছিলেন তার বাবা-মা। ঠিক এ সময় তার মায়ের অদম্য ইচ্ছে, সাহস ও চেষ্টায় প্রাণে বেচে গেলেন তরুণী নোরা। গত ২৬ জুন দেশটির আপিল আদালত নোরার মৃত্যুদণ্ডাদেশ খারিজ করে দিয়ে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন।


অবশ্য, লোকে এই কথা ছড়িয়ে ছিলো, নোরাকে তার বাবা-মা পরিত্যাগ করেছে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। উল্টো নোরাকে বাঁচাতে হন্যে হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল সবাই। গত এক বছর ধরে নোরা জেলে। বছরখানেক পর এই প্রথম মায়ের সাক্ষাৎ পেয়ে অঝর ধারায় কান্নায় ভেঙে পড়েছিল সে।


তখনই নোরার মা জয়নব আহমেদ বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, স্বামীর হাতে প্রথমবার ধর্ষণের শিকার হবার পর নোরা আসলে আত্মহত্যাই করতে চেয়েছিল। কিন্তু পরের দিন নোরার স্বামী যখন আবার একই কাজ করতে যায় তখন আত্মরক্ষার্থে ছুড়ি নিয়ে প্রতিরোধ করে তার মেয়ে। আর সেসময়ই ঘটনাচক্রে ছুরিকাহত হয়ে মারা যায় নোরার স্বামী আব্দুল রহমান মোহাম্মদ হাম্মাদ।


নোরাকে মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে বাঁচাতে শুরু হয় জাস্টিস ফর নোরা নামে একটি অনলাইন প্রচারণা।বিশ্বব্যাপী তুমুল আলোড়ন তোলা এই ক্যাম্পেইনে যোগ দিয়েছিলেন সুপারমডেল নাওমি ক্যাম্পবেল ও অভিনেত্রী এমা ওয়াটসন।


মি. হাম্মাদ যখন নোরাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন তখন নোরার বয়স ছিল মোটে ১৬। এই বিয়েতে নোরার খুব যে অমত ছিল তা নয়। তবে, তক্ষুনি বিয়েটা না করে নোরা কিছুদিন দেরী করতে চাইছিল। কারণ সে পড়ালেখা করতে চেয়েছিল। আইন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে শিক্ষক হতে চেয়েছিল সে। কিন্তু সামাজিক অনিরাপত্তার ভয়ে নোরার বাবা তাকে জোর করে এই বিয়ে দেন।


নোরার বাবা বলতেন, এই বয়সেই আশপাশের বহু মেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে গর্ভবতী হয়ে যাচ্ছে। তাই, এসব কিছু ঘটার আগেই বিয়ে হওয়া ভালো।

নোরাকে যখন তার অমতে বিয়ে দেয়া হচ্ছিলো তখন বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা অসম্পূর্ণ রেখেই সে বাড়ি থেকে পালিয়ে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে তার এক আত্মীয়ের কাছে আশ্রয় নেয়। সেই আত্মীয়ের বাড়ি থেকে নোরাকে এই কথা বলে ফেরত আনা হয়েছিল যে, বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার বাকি কাজ আর সম্পন্ন করা হবে না। কিন্তু নোরা ফিরে এলে বিয়ের কাজ ঠিকই সম্পন্ন করা হয়। তবে, তক্ষুনি তাকে স্বামীর সাথে থাকতে যেতে হয়নি।

বিয়ের পর দুই বছর ধরে নোরা তার বাবা-মায়ের সাথেই বাস করছিলো। তবে, একটা পর্যায়ে পরিবারের অভিভাবক ও বয়োজ্যেষ্ঠরা এই নিয়ে খুব নাখোশ হন। এরপর ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে জবরদস্তিমূলকভাবেই নোরাকে তার স্বামীর সাথে আলাদা বাসায় যেতে বাধ্য করা হয়।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, আলাদা বাসায় গিয়েও নোরা সেই ফ্ল্যাট থেকে পালিয়ে আসতে চেয়েছিল।কিন্তু তার স্বামী ফ্ল্যাটে তালা মেরে রাখতো বলে সে পালাতে পারেনি। এভাবেই সপ্তাহখানেক ধরে আলাদা বাসায় থাকলেও নোরা শারীরিক সম্পর্ক থেকে বিরত ছিল। এমনটা সিএনএনের পক্ষ থেকেও জানা যায়। নানাভাবে সে তার স্বামীকে যৌন সম্পর্ক করা থেকে দূরে রেখেছে।

তবে, নোরার বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, একত্রে বসবাসের নবম দিনে তার স্বামী নিজের ক`জন আত্মীয়কে নিয়ে ফ্ল্যাটে আসে। সেই আত্মীয়রা নোরার গায়ের পোশাক টেনে ছিঁড়ে ফেলে এবং নোরাকে জোর করে ধরে রাখে যাতে নোরার স্বামী বলপূর্বক তার সাথে যৌন সম্পর্কে মিলিত হতে পারে।


এভাবেই আত্মীয়দের সহায়তায় তাদের সামনেই নোরাকে তার স্বামী ধর্ষণ করে বলে জানায় সিএনএন। প্রথম দিন ধর্ষণের পর দ্বিতীয় দিনও যখন তার স্বামী আবারো তাকে ধর্ষণে উদ্যত হয় তখনই আত্মরক্ষার্থে নোরা একটা ছুড়ি নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে। সেসময়, ধস্তাধস্তিতে নোরার হাত কেটে যায় এবং কাঁধেও সে চোট পায়।


এসময়েই দু`জনের ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে নোরার স্বামী ছুরিকাহত হন এবং মারা যান। সেই রক্তমাখা ছুরি হাতেই নোরা তার বাড়িতে বাবা-মায়ের সামনে গিয়ে হাজির হয়ে খুনের কথা স্বীকার করে। রক্তমাখা ছুরি হাতে মেয়েকে দেখে এবং ঘটনার আকস্মিকতায় তার বাবা মুষড়ে পড়েন।


কিন্তু এর জের হিসেবে নোরার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উপর বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে ভেবে নোরার বাবা মেয়েকে নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে সব খুলে বলেন। এরপরের কথা তো সবারই জানা।

একদিকে, নোরাকে পুলিশ জেলে আটক করে। তার বিচার শুরু হয়। পরে তার সাজাও ঘোষণা হয়। আর সেটা মৃত্যুদণ্ড।


অন্যদিকে, হাম্মাদের পরিবার নোরার বাবা-মাকে ক্রমাগত ভয়-ভীতি দেখাতে থাকে। তারা বলে, যদি পরিবারের বাকি সন্তানদের সুরক্ষিত রাখতে চাইলে তারা যেন জেলে আর নোরাকে দেখতে না যায়। এসবের মধ্যেই একদিন নোরাদের বাড়ি-ঘর এবং তার বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়।


এই পরিস্থিতিতে, নিজের গ্রাম আল-বাগার ছেড়ে বহু দূরের এক গ্রামে গিয়ে থাকতে শুরু করে নোরার পরিবার। নোরা কারাগারে যখন সে মৃত্যুর দিন গুনছে সে সময় তাকে চাতে যে প্রচারণা চলছিলো তা আরো শক্তিশালী রূপ নেয়।


এক পর্যায়ে ইস্ট আফ্রিকার অ্যামনেস্টির পরিচালক ড. জোয়ান নেয়নুকিও হাল ছেড়ে দেন। তিনি বলেন, বিচারিক প্রক্রিয়ার মাঝখানে এখন আসলে কোন লাভ হবে বলে মনে হয় না।

তবু আশা ছাড়েননি নোরার মা জয়নব আহমেদ। তিনি ক্রমাগত প্রার্থনা করছেন এই বলে যে, দৈব একটা কিছু ঘটুক। আর তার সন্তান বেঁচে যাক মৃত্যুদণ্ড থেকে।


পরে গত ২৬ জুন দেশটির আপিল আদালত নোরার মৃত্যুদণ্ডাদেশ খারিজ করে দিয়ে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন।