ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ১৮:১৩:৪৭ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
চট্টগ্রামে আজ শুরু উইম্যান এসএমই এক্সপো হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউ পুড়ে ছাই, রক্ষা পেল ৭ শিশু সবজির বাজার চড়া, কমেনি মুরগির দাম সারা দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি

মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান

মো. আলতাফ হোসেন হৃদয় খান | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ১০:৫৪ পিএম, ২৯ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নারী তার সর্বাত্মক শক্তি নিয়োগ করেছিল স্বাধীনতার মতো একটি বড় অর্জনে। যুদ্ধে পুরুষের পাশাপাশি নারী অংশগ্রহণ করেছিল জীবনবাজি রেখে। অথচ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নারীর অবদান সেভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। নারীর ভূমিকা কেবল নির্যাতনের শিকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নারীকে মূলধারায় না আনার একটি কারণ, এ যুদ্ধে ব্যাপকভাবে অংশ নিয়েছিল নিম্নবর্গের নারীরা। নারীর ইতিহাস সুশীল সমাজের কাছে ইতিহাসের উপাদান হিসেবে গৃহীত হতে শুরু করে স্বাধীনতার তিন দশক পর।


মুক্তিযুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণ বিষয়ে গবেষণা পর্যায়ে কিছুটা কাজ হয়েছে। কিন্তু সাধারণ শিক্ষিতজন এবং নিরক্ষর অধিকাংশ মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণ ব্যাপকভাবে প্রচার পায়নি। নারীযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে গুটিকয় নারী। যুদ্ধের অনিবার্য পরিণতি হিসেবে নারীর ধর্ষণের ঘটনা প্রচার লাভ করেছে অনেক বেশি। যে কারণে রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষিতরা অবলীলায় বলে যান, ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা...।


প্রকৃতপক্ষে নারীরা মুক্তিযুদ্ধে অনেক বড় সহায়ক শক্তি ছিল। নারী সক্রিয় ছিল কখনও সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে, কখনোবা যুদ্ধক্ষেত্রের আড়ালে। যেভাবেই হোক, মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের বিশ্বাস ছিল অবিচল, সাহস ছিল কঠিন। তারামন বিবির মতো বহু মুক্তিযোদ্ধা আছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস জুগিয়েছেন, প্রেরণা জুগিয়েছেন এমন নারীর সংখ্যাও অসংখ্য। অজানা-অচেনা আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা-শুশ্রূষা করেছেন বহু নারী নিজের শ্রম দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে। অনাহারী, অর্ধাহারী ক্ষুধার্ত মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কখনও মমতাময়ী মায়ের মতো, কখনোবা বোনের মতো। নিজেরা খেয়ে না খেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খাবার রান্না করে পাঠিয়ে দিয়েছেন। চরম দুঃসময়ে পাকিস্তানি হানাদারের হাত থেকে রক্ষা করতে নিজেদের ঘরে আশ্রয় দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের।


পুরুষের পাশাপাশি নারীর বুদ্ধি-বিচক্ষণতা, আন্তরিকতা ও সাহসের ফল স্বাধীনতা। স্বাধীনতা যুদ্ধে অস্ত্র হাতে রণাঙ্গনে শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন অনেক নারী। যেমন কাঁকন বিবি, তারামন বিবি, শিরিন বানু মিতিল, আশালতা, রওশন আরা প্রমুখ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গোবরা ক্যাম্পে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছেন অনেক নারী। জানা যায়, নারীযোদ্ধাদের জন্য অনুরূপ আরও তিনটি ক্যাম্প প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে। ‘গোবরা ক্যাম্পে’ মেয়েদের দেয়া হতো তিন রকম ট্রেনিং : ১. সিভিল ডিফেন্স, ২. নার্সিং, ৩. অস্ত্র চালনা ও গেরিলা আক্রমণ।


ভারতে শরণার্থী শিবিরে ডাক্তার, নার্স ও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অসংখ্য নারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের সেবা করেছেন। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী হিসেবে অংশ নিয়েছেন অনেক নারী শিল্পী। নারী কবি, লেখক, সাংবাদিক ও শিল্পীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছিলেন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে। তাদের লেখায় এবং শিল্পীদের গানেও রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা। শুধু তাই নয়, পথে-প্রান্তরে অলিগলিতে গান গেয়ে অনেকে অর্থ সংগ্রহ করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য-সহায়তার জন্য। দুর্ভাগ্যজনক, মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য নারীরা সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছ থেকে বিশেষ কোনো স্বীকৃতি পাননি। অনেক নারীযোদ্ধাই হারিয়ে গেছেন।


মো. আলতাফ হোসেন হৃদয় খান : প্রাবন্ধিক ও সমাজকর্মী