ঢাকা, শুক্রবার ২৯, মার্চ ২০২৪ ১:২১:২১ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া ট্রেনে ঈদযাত্রা: ৭ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু গাজায় নিহত বেড়ে ৩২ হাজার ৪৯০ অ্যানেস্থেসিয়ার ওষুধ বদলানোর নির্দেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঈদ কেনাকাটায় ক্রেতা বাড়ছে ব্র্যান্ড শপে বাঁচানো গেল না সোনিয়াকেও, শেষ হয়ে গেল পুরো পরিবার

মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদানের স্বীকৃতি মেলেনি আজও

অনু সরকার | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ১১:২৪ পিএম, ২৯ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমরা আলোচনা করি, টিভির টক শো কিংবা চায়ের টেবিলে এ বিষয়ে আলোচনার ঝড় তুলি। কিন্তু আমাদের আলোচনায় বেশিরভাগ সময়ই মুক্তিযোদ্ধা নারীদের নাম উঠে আসে না। কিংবা তাদের কৃতিত্ব বা অবদানের কথা প্রকাশ করা হয় না। শুধু তারা কতজন ধর্ষিত হয়েছেন তা বলি অামরা! তাই তো আজ স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও ‘মুক্তিযোদ্ধা’ স্বীকৃতি না পাওয়ার দূ:খ নিয়ে মৃত্যু্বরণ করতে হয় কাঁকন বিবিকে। চিকিৎসার অভাবে ধুকে ধুকে প্রাণ দিতে হয় তারামন বিবিকে।


মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদানগুলো যদি সঠিক ভাবে তুলে ধরা না হয় তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম জানতেও পারবে না সেই সব মহীয়সী নারীদের নাম যাদের জীবনের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। কিন্তু যে সব নারীরা তাদের জীবন বিপন্ন করে দেশকে ভালোবেসে নিজের জীবনকে বিপন্ন করে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন তাদের অবদানের কথা বাংলাদেশের ইতিহাস কখনো ভুলে যাবে না।


স্বাধীনতা যুদ্ধে অস্ত্র হাতে যুদ্ধক্ষেত্রে পাক সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন অনেক নারী। কাঁকন বিবি, তারামন বিবি, শিরিন বানু মিতিল, আশালতা, রওশন আরার মতো অনেক নারী সরাসরি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন।


ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গোবরা ক্যাম্পে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছেন অনেক নারী। ভারতে শরনার্থী শিবিরে ডাক্তার, নার্স এবং স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অসংখ্য নারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শরনার্থীদের সেবা করেছেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী হিসেবে অংশ নিয়েছেন অনেক নারী শিল্পী। এরা ছিলেন যুদ্ধের প্রেরণা।


আবার দেশের অভ্যন্তরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী, শান্তিকমিটি এবং রাজাকার বাহিনীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে এদেশের গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-বন্দরে অসংখ্য নারী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছেন। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছেন। যুগিয়েছেন খাদ্য, অস্ত্র বহন করেছেন, লুকিয়ে রেখেছেন, গোপন সংবাদ আনা নেয়া করেছেন। অথচ এই নারীরা আজও তাদের অবদানের স্বীকৃতি পাননি।


পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদরের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এদেশের প্রায় তিন লাখ নারী। তারা ধর্ষিত হয়েছেন, নৃশংস নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই শহীদ হয়েছেন, অনেকে মৃত্যুর অধিক যন্ত্রনা সহ্য করেও প্রাণে বেঁচে গেছেন। এরা নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েও নৈতিকভাবে পরাজিত হননি। এরা আপোষ করেননি পাকিস্তানীদের সাথে। মরনের মুখোমুখি দাঁড়িয়েও এরা তাদের স্বামী, পুত্র, ভাইকে ধরিয়ে দেয়নি শত্রুর হাতে।


অথচ যুদ্ধের পর এই বীর নারীরা তাদের প্রাপ্য স্বীকৃতি ও মর্যাদা পাননি। বরং তাদের অধিকাংশকেই করা হয়েছে সমাজচ্যূত। যেন ধর্ষিত আর নির্যাতিত হওয়াটা তাদেরই `অপরাধ` ছিলো।


ইতিহাস বলছে, মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করায় ভাগীরথীকে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করেছিল পাকিস্তানী সৈন্যরা। অথচ শহীদ ভাগীরথী স্বাধীন দেশে পাননি তার প্রাপ্য স্বীকৃতি।


মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে যাবার পর দেশকে নতুন করে দাড় করাতে এ নারীদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ভূমিকা ছিলো। নারীদের এই বিষয়টিও আজ আলোচনার বাইরে। যুদ্ধ চলাকালে দেশের অনেক নারী হারিয়েছিলেন তার নিজের পরিবারের উপার্জনক্ষম পুরুষ সদস্য যেমন বাবা, ভাই, স্বামী, ছেলেকে। এ সময় সংসারের অর্থনৈতিক হালও ধরেছিলেন এ সব সাহসী নারীরা। সংসারের পুরো দায়িত্ব ছিলো তাদেরই কাঁধে।


মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনে কাজ করেছেন অনেক নারী। নূরজাহান মুর্শিদ, আতিয়া বাগমারের মতো উচ্চ শিক্ষিত নারীরা প্রবাসে বাংলাদেশের পক্ষে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছেন, তহবিল সংগ্রহের কাজ করেছেন তারা। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ তার অমোঘ উচ্চারিত দাবি, ‘ইতিহাস কথা কয়’, ‘ইতিহাসকে কথা বলতে দাও’। কিন্তু সে দাবি পূরণে অনীহা ও অনিচ্ছা যেনো ক্রমান্বয়ে দূরতিক্রম্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে।


যুদ্ধের প্রথম দিকেই অনেকের সঙ্গে ভারতে পাড়ি জমান নিবেদিতা দাশ। কিন্তু দেশে যখন তুমুল যুদ্ধ চলছে, দেশের প্রতি মমত্ববোধ তাকে সেখানে নিশ্চুপ থাকতে দেয়নি। ভারতে বসেই চিন্তা করলেন কীভাবে নিজের মাতৃভূমিকে দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করা যায়। তাই দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া অন্যান্য নারীদের যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে লাগলেন তিনি। ভারতের আশ্রয়গ্রহণকারী সিলেটের নারীদের নিয়ে গড়ে তুলেন মহিলা মুক্তি ফৌজ। প্রায় ৪২ জন নারী ছিলেন এই ফৌজের সদস্য। মুক্তি ফৌজের কাজ ছিল যুদ্ধে যাওয়ার জন্য তরুণ যুবকদের উৎসাহিত করা, আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দেয়া, মুক্তিযুদ্ধে যেতে আগ্রহী যুবকদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা, নারীদের কুটিরশিল্পে প্রশিক্ষণ দেয়া এবং প্রশিক্ষণার্থীদের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে তহবিল সংগ্রহ করা। নিবেদিতা দাশের নেতৃত্বে মহিলা যোদ্ধাদের সমন্বয়ে গঠিত এই ফৌজ পরবর্তীতে ৫নং চেলা সাব সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। এই সব সেক্টরের অধীনে তারা সিলেট, ছাতক ও জগন্নাথপুরে বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেন। 

 

কলকাতার গোবরা শিবিরে প্রথম দফায় প্রশিক্ষণ নিয়ে সিলেট সীমান্তে যান দুই গীতা আর ইরা৷ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেবেন৷ কিন্তু সেখানে কোন পথ খুঁজে না পেয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার জন্য নারী নেত্রী সাজেদা চৌধুরীর কাছে টেলিগ্রাম করা হয়৷ টেলিগ্রামের উত্তর মেনে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে আগ্রহী ১৫ জন মেয়ের দলটিকে গাড়িতে করে আগরতলা পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হয়৷ সেখান থেকে তাদেরকে বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে কাজে যোগ দিতে বলা হয়৷ বিশ্রামগঞ্জে কাজ শুরু করলেও অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করার দৃঢ় ইচ্ছা ছিল তাদের৷


মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধে আড়াই লাখ নারী ধর্ষিত হয়েছে। কিন্তু ওয়্যার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি তাদের গবেষণায় বলছে, এ সংখ্যা প্রায় চার লাখ ৬০ হাজার। এমনকি ৯ মাসে যে ৩০ লাখ বাঙালি গণহত্যার শিকার হয়েছে, তার ২০ শতাংশই নারী। নির্যাতনের ধরন ছিল বর্বরোচিত : একাত্তরে যে সাড়ে চার লাখ নারীর ওপর যৌন নির্যাতন চালানো হয়, তার ধরন ছিল অমানুষিক। ঘাতকরা কেবল নির্যাতন বা ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি, ৭০ শতাংশ ধর্ষিতার সামনে হত্যা বা নির্যাতন করা হয়েছে তাদের স্বামী বা নিকট আত্দীয়কে।

 

নির্যাতিত নারীদের মধ্যে ৭০ শতাংশ নারীকে স্পট ধর্ষণ ও স্পট গণধর্ষণ, ১৮ শতাংশ নারীকে কারাগারে ও ক্যাম্পে নির্যাতন করা হয়েছে। ওয়্যার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ডা. এম এ হাসান গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ধর্ষিত ও নির্যাতিত নারীদের ৫৬ দশমিক ৫০ শতাংশ মুসলমান, ৪১ দশমিক ৪৪ শতাংশ হিন্দু এবং ২ দশমিক ০৬ শতাংশ ছিলেন অন্যান্য ধর্মের। দেশের ৪২ জেলার ৮৫ থানায় নির্বাচিত ২৬৭ জনের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে এই গবেষণা চালানো হয়।গবেষণায় আরো বলা হয়, নির্যাতিত নারীদের মধ্যে বিবাহিত ছিলেন ৬৬ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং অবিবাহিত ৩৩ দশমিক ৫০ শতাংশ।

 

ভারতে আশ্রয় নেওয়া নির্যাতিতা ও ধর্ষিতা হিন্দু নারীদের মধ্যে কুমারী বা অবিবাহিতা ছিলেন ৪৪ শতাংশ। এঁদের অধিকাংশই আর দেশে ফেরেননি। যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকা : গবেষণায় দেখা যায়,নির্যাতন-পরবর্তী সময়ে নারীদের স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল প্রকট। এসব নারী আক্রান্ত হয়েছে নানা যৌন রোগে। দীর্ঘদিন আক্রান্ত ছিলেন মানসিক রোগেও। ৮০ শতাংশ নারী বিষাদগ্রস্ততা এবং ৮০ শতাংশ অস্থিরতা, নৈরাশ্য ও মাথাব্যথায় ভুগেছেন দীর্ঘকাল। একইভাবে ৯০ শতাংশ নারী ভুগেছেন গ্লানিতে। আর ৭ শতাংশ নারীকে স্থায়ী ক্ষত নিয়েই বেঁচে থাকতে হয়েছে সারাজীবন।

 

বেঁচে আছেন এখনো অনেকে।ডা. এম এ হাসান বলেন, সংস্থার নিজস্ব ল্যাবরেটরি ও নির্বাচিত হাসপাতালে বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে নির্যাতিত নারীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। সে ফলাফলের ভিত্তিতেই উঠে এসেছে এই চিত্র।


সামাজিক লাঞ্ছনা : নির্যাতন-পরবর্তী সময়ে নারীদের সইতে হয়েছে নানা লাঞ্ছনা-গঞ্জনা। নির্যাতিত হওয়ায় স্বামী আর ঘরে তোলেনি ৭ শতাংশ নারীকে। ৯০ শতাংশ নারীকে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে স্বজন বা পরিবারের অন্য সদস্যদের দ্বারা। গ্রামাঞ্চলে নির্যাতিত নারীদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সবকিছু জানিয়ে বিয়ে দিতে হয়েছে। আর শরণার্থী হয়ে যাঁরা দেশত্যাগ করেছিলেন কিংবা যাঁরা শহরাঞ্চলে বাস করতেন তাঁদের বিয়ের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছে।


জন্ম নেয় যুদ্ধশিশু : ডা. এম এ হাসান বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় ৯০ হাজার নারীর গর্ভপাত ঘটানো হয়। জন্ম নেয় অসংখ্য যুদ্ধশিশু। তিনি আরো বলেন, তখন গর্ভপাতের জন্য উন্নত যন্ত্রপাতি ছিল না। যে যেভাবে পেরেছেন গর্ভপাত ঘটিয়েছেন। যেসব শিশু জন্ম নেয় তাদের অনেককে বিদেশে দত্তক দেওয়া হয়। অনেক শিশুকে ফেলে দেওয়া হয় ভাগাড়ে।


আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধের কথা বলি, তখন নারীমাত্রই বোঝাই বীরাঙ্গনাদের কথা। বলি, লাখো লাখো নারীর লাঞ্ছনার বিনিময়ে পেয়েছি স্বাধীন দেশ। কিন্তু সরাসরি যুদ্ধে যোগদান না করেও প্রতিমুহূর্তে আমাদের নারীরা নীরবে রেখে গেছেন অবদান। তারা ঘরে থেকে ভাই-স্বামী-ছেলেদের যুদ্ধে যাওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছেন। বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তারা রেখেছেন সাহসী ভূমিকা। কিন্তু তাদের নীরব এই অবদানের কথা, ঘটনা কখনো কারও তেমন জানা হয়নি। টুকরো টুকরো সাহসী জীবনের গল্পগুলো একত্রে আসেনি।


নারীর ত্যাগের মর্যাদা ইতিহাস দেয়নি। দেখা যাচ্ছে, একই পরিবারে স্বামী-স্ত্রী শহীদ হয়েছেন। স্বামীকে ইতিহাস তুলে এনেছে। স্ত্রীকে কবর দিয়েছে। ইতিহাস কোনোদিন দুর্বল মানুষকে স্থান দেয় না। হয়তো সে ধারাবাহিকতা এখানেও বজায় রেখেছে। তবে আমরা অবাক হই, নারী লেখকরাও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে অনেক বই লিখেছেন, সেখানেও নারীর ত্যাগের কথা তেমনভাবে তুলে ধরা হয়নি। বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসেই জেন্ডারভিত্তিক বৈষম্যের শুরু। এ মনোভাব থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। নারীর ত্যাগের কথা তুলে ধরতে হবে। তা না হলে একদিন নারীর ত্যাগের কথা পরবর্তী প্রজন্ম ভুলে যাবে। সেদিন ইতিহাস কলঙ্কিত হবে। তাই সঠিক অনুসন্ধান করে নারীর অবদানের কথা জাতির কাছে তুলে ধরতে হবে। ইতিহাসে নারীর সঠিক স্থান দিতে হবে। এ ত্যাগের কথা ভুলে গেলে চলবে না।


শুধু মুক্তিযুদ্ধ নয়, দেশের সব গণআন্দোলনে নারীর ভূমিকা ছিল। সব সময়ই নারী প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছেন। সব সফলতার পেছনে নারী-পুরুষ সবার সমান অংশগ্রহণ থাকে। মুক্তিযুদ্ধেও ছিল। আমাদের সমাজ পুরুষতান্ত্রিক হওয়ায় নারীর কথা সেভাবে ওঠে আসেনি। মনে করা হয়েছে, তারা তো ছিল-ই। এটি আলাদা করে বলার কোনো দরকার নেই।


বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নারীর জীবন অধ্যয়নের একটি বড় দিক। এই যুদ্ধে নারীর ভূমিকা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নারী তার সর্বাত্মক শক্তি নিয়োগ করেছিল স্বাধীনতার মতো একটি বড় অর্জনে। পুরুষের পাশাপাশি নারীর অংশগ্রহণ ছিল তার জীবনবাজি রাখার ঘটনা। অথচ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নারীকে মূলধারায় স্থাপন না করার ফলে নারীর প্রকৃত ইতিহাস যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। নারী মুক্তিযুদ্ধে যে গৌরবগাথা রচনা করেছিল, তা ধর্ষিত এবং নির্যাতিত নারীর ভূমিকায় অদৃশ্য হয়ে আছে। প্রকৃত অবদান খুঁজে নারীকে মূলধারায় না আনার আরো একটি কারণ, নিম্নবর্গের নারীরাই ব্যাপকভাবে এই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। নিম্নবর্গের নারীর ইতিহাস ক্ষমতাসীন সুশীল সমাজের কাছে ইতিহাসের উপাদান হিসেবে গৃহীত হতে শুরু করে স্বাধীনতার তিন দশক পরে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণ বিষয় গবেষণা পর্যায়ে খানিকটা কাজ হয়েছে। কিন্তু সাধারণ শিক্ষিতজন এবং নিরক্ষর অধিকাংশ মানুষের প্রচলিত ধারণায় মুক্তিযুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণ ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করেনি।


মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদানের যথাযথ মূল্যায়নের সময় চলে গেছে অনেক আগেই। আমরা অনেক দেরী করে ফেলেছি এই সব সাহসী আর মহান নারীদের সন্মানিত করতে। আমাদের প্রিয় লাল সবুজ পতাকার পুরুষের রক্তের পাশাপাশি মিশে আছে নারীর রক্ত, নারীর আত্মত্যাগ। সকল নারীদের এই মহান আত্মত্যাগের যথাযথ সন্মান জানাতে হবে। ৭১ এর সকল বীর নারীকে জানাই সশ্রদ্ধ অভিবাদন। অভিবাদন জানাই শহীদ সেলিনা পারভীন, শহীদ মেহেরুন্নেসা, শহীদ ভাগীরথীসহ অসংখ্য শহীদ নারীকে, অসংখ্য নির্যাতিত নারীকে, অসংখ্য যোদ্ধানারীকে। বাংলার মায়েরা মেয়েরা সকলেই বীর, সকলেই মুক্তিযোদ্ধা। এই সকল বীরের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা।