মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের একমাত্র নারী কমান্ডার আশালতা বৈদ্য
অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪প্রকাশিত : ০৮:৩৭ পিএম, ৫ ডিসেম্বর ২০২১ রবিবার
ফাইল ছবি
১৯৭১ সালে আশালতা বৈদ্য ছিলেন এসএসসি পরীক্ষার্থী। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে একদিন রাজাকাররা উনার বাড়িতে এসে বাবা হরিপদ বৈদ্যর কাছে কয়েক লক্ষ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে আশালতা ও তার বোনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। এই অবস্থায় হরিপদ বাবু মেয়েদের রক্ষায় ম্বপরিবারে ভারতে চলে যাওয়ার চিন্তা করতে থাকেন।
এই ঘটনার আদ্যপ্রান্ত সমস্তকিছু কানে যায় গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার হেমায়েত বাহিনীর প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত উদ্দিনের। তিনি আশালতাকে দেশত্যাগ করে ভারতে না গিয়ে নিজের মাতৃভূমিতে থেকে দেশমাতৃকা তথা মা বোনের সম্মান রক্ষার্থে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করলেন। আশালতা বৈদ্য সিদ্ধান্ত নিলেন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার।
শুধু তাই নয়, গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার নিজ এলাকার সাহসী ৪৫ মহিলাকেও আশালতা বৈদ্য উদ্বুদ্ধ করেন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে। তাদের নিয়ে গঠন করেন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা দল। মে মাসে এ দল পুরোপুরি সংগঠিত হলে তিনি তাদের নিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
হেমায়েত বাহিনীর তত্ত্বাবধানে এই প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয় বরিশালের হেরেকান্দি হাইস্কুলে ও লেবুর বাড়ি প্রাইমারি স্কুলে। প্রশিক্ষণ হয় রাইফেল, মেশিনগান, গ্রেনেড চার্জসহ বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র পরিচালনার।
স্বল্পসময়ের প্রশিক্ষণে আশালতা বৈদ্য অস্ত্র পরিচালনা এবং যুদ্ধকৌশলের উপর আশ্চর্যজনক পারদর্শিতা লাভ করেন, যার কারণে আরও ৩০০ জন মহিলাসহ মোট ৩৪৫ জন নারী মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতৃত্ব অর্পিত হয় উনার ওপর। বিশাল এই মহিলা মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতৃত্ব পেয়ে আশালতা বৈদ্য দায়িত্ব পালনে দুঃসাহসিকভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেন।
এবার যুদ্ধে গেরিলা অপারেশন শুরু হওয়ার পালা। ১৯৭১ এর ২৪ জুন কোটালিপাড়া, হরিণাহাটি, ঘাঘর বাজার, শিকের বাজার ও রামশীলে খান সেনাদের বিরুদ্ধে সরাসরি গেরিলা যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন। এ যুদ্ধে আশালতা বৈদ্যের দুঃসাহসিকতা, সুনিপুণতা, দক্ষতা রূপকথাকেও হার মানায়। সেইদিন তার বাহিনীর হাতে বহু পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয় এবং বন্দি হয় ২৫ পাকিস্তানি সেনা। বন্দি পাকিস্তানী সেনাদের ধরে আনা হয় মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে। সেখানে তাদের বিচার করা হয়। বিচারকদের একজন ছিলেন আশলতা বৈদ্য। বিচারে তাদের সবাইকে হত্যার রায় হয়। আশালতার নির্দেশে সে রায় কার্যকর করা হয়। অর্থাৎ সকল বন্দী পাকিস্তানি সেনাদের হত্যা করা হয়।
দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা আশালতা বৈদ্যের মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে, ১৯৭১ এর এপ্রিলের শেষ দিকে তিনি জানতে পারলেন, গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মা-বাবা তাদের নিজের বাড়িতে পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা বন্দি হয়ে আছেন। এই ঘটনা জানতে পেরে আশালতা বৈদ্য নিজেই এক দুর্ধর্ষ গেরিলা অভিযান চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর মা-বাবাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে তাদের নিয়ে যান শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া গ্রামে তাদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। নিজ উদ্যোগেই সেখানে তিনি তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দেন। রামশীল নদী পাড়ে একদিন লঞ্চে করে রাজাকার কয়েক হাজার পাকিস্তানি বাহিনীকে সাথে নিয়ে আসে। সেখানে পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে আশালতা বৈদ্য এবং তার সহযোদ্ধাদের তুমুল যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধ ৩ ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল। হাজার হাজার রাজাকার ও পাকিস্তানি বাহিনী নিহত হয় মাত্র কয়েক’শ মুক্তিযোদ্ধার হাতে।
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন শ্বাসরুদ্ধকর ৯টি মাসের ১টি দিনও তার যুদ্ধ অথবা যুদ্ধের পরিকল্পনা ছাড়া কাটেনি। এই ৯ মাস দেশমাতৃকার জন্য যুদ্ধ ছাড়া অন্য কোনো চিন্তাই উনার মাথায় ক্ষণিকের জন্যও আসে নাই। মাত্র ১৫/১৬ বছর বয়সে ৩৪৫ জন নারী মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতৃত্ব দিয়ে ৮ এবং ৯ নং সেক্টরের অধীন গোপালগঞ্জে ছোটোখাটো অনেক গেরিলা যুদ্ধ ছাড়াও ২২টি বড় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন আশালতা বৈদ্য। এগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটিতে নেতৃত্ব দেন তিনি। অনেক পাকিস্তানি সেনা হত্যা করেন নিজ হাতে।
তিনি শুধু প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি, আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করেছেন নিজ হাতে। সেবা-শুশ্রূষা দিয়ে সহযোদ্ধাদের সারিয়ে তুলে তাদের সঙ্গে নিয়ে আবার যুদ্ধে গেছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি আশালতা বৈদ্য চলে আসেন ঢাকায়। ওই দিনই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে তার হাতে মুক্তিযুদ্ধের অস্ত্র সমর্পণ করেন।
দেশ স্বাধীন হলে তিনি আবার পড়াশুনায় মনোনিবেশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে তিনি উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করেন। ৮০-এর দশকে নারী উন্নয়নের লক্ষে গড়ে তোলেন সূর্যমুখী সংস্থা। বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগেও তিনি মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
আশালতা বৈদ্য তার বৈচিত্র্যময় জীবনের সেবামূলক কাজের জন্য ২০০৫ সালে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার বাছাই কমিটিতে মনোনয়ন পর্যন্ত পেয়েছিলেন। এছাড়া তিনি শ্রেষ্ঠ মহিলা সমবায়ের প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক, রোকেয়া পদক, প্রশিকা মুক্তিযোদ্ধা পদকসহ অনেক পুরষ্কার লাভ করেছেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র নারী কমান্ডারের প্রতি জানাই শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা।
- ভৈরবে বোরো ধানের বাম্পার ফলন
- রোববার যেসব এলাকায় ব্যাংক বন্ধ থাকবে
- কোলে চড়ে ভোট দিলেন বিশ্বের সবচেয়ে খর্বকায় নারী
- সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের রহস্য ফাঁস
- নিয়োগ দেবে হীড বাংলাদেশ, যারা আবেদন করবেন
- অন্দরে সবুজের ছোঁয়া, গরমে মিলবে স্বস্তি
- কুমিল্লায় সূর্যমুখী চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে
- যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী
- ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা
- বিরল এক মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী হলো দেশ
- কাপ্তাই হ্রদে ৩ মাস মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শুরু
- পার্টিতে পূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে : রওশন এরশাদ
- বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস আজ
- আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি
- গরমে শিশু ও নবজাতকের যত্ন কীভাবে নিবেন
- খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরো বাড়ল
- ২৯ ফেব্রুয়ারি বা লিপ ইয়ার নিয়ে ১০টি মজার তথ্য
- জমজমাট ফুটপাতের ঈদ বাজার
- দেশে ধনীদের সম্পদ বাড়ছে
- এবার বাংলা একাডেমি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার পাচ্ছেন যারা
- গুলবদন বেগম: এক মুঘল শাহজাদির সাহসী সমুদ্রযাত্রার গল্প
- বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা
- যে বিভাগে বিচ্ছেদের হার বেশি
- ৭ই মার্চ পরিস্থিতি, কেমন ছিলো সেই দিনটি
- ঘরের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ
- শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণের নেপথ্যে
- সদরঘাট ট্র্যাজেডি: সপরিবারে নিহত সেই মুক্তা ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা
- দিনাজপুরে ব্যাপক পরিসরে শিম চাষের লক্ষ্য
- জিমন্যাস্টিকসে শিশু-কিশোরদের উৎসবমুখর দিন
- শবে বরাত যেভাবে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে উৎসবে পরিণত হলো