যেসব বিদেশি গাছ শত শত দেশি প্রজাতির বিলুপ্তির কারণ
বিবিসি বাংলা অনলাইন | উইমেননিউজ২৪প্রকাশিত : ১১:৩৪ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ শনিবার
ফাইল ছবি।
বাংলাদেশে ইউক্যালিপ্টাসের মতো আরও কিছু বিদেশি প্রজাতির গাছ গবেষক ও উদ্ভিদবিদদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা মনে করেন এসব গাছ বাংলাদেশের পরিবেশ ও জীব বৈচিত্রের অপরিসীম ক্ষতি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও গবেষক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলছেন, বিদেশি কিছু বৃক্ষ বাংলাদেশের মানুষই যেমন এনেছে, আবার কিছু উদ্ভিদ নিজেই বাংলাদেশের ইকোসিস্টেম বা বাস্তুসংস্থানের মধ্যে ঢুকে পড়েছে।
আর বিদেশি এসব গাছ ও গুল্মের ক্রমাগত বর্ধনের ফলে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের প্রকৃতি থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে অন্তত এক হাজার প্রজাতির নিজস্ব গাছ।
"গাছপালা, পশুপাখি, প্রকৃতি সব মিলিয়ে বাংলাদেশের আদি অকৃত্রিম যে ইকোসিস্টেম ছিল, সেই ইন্টিগ্রেশনটা ভেঙ্গে গেছে বিদেশ থেকে আনা ও আসা বনজ বৃক্ষসহ নানা ধরণের উদ্ভিদের চাপে। এর মানে হলো যেসব বৃক্ষ আনা হয়েছিলো বিভিন্ন সময়ে এগুলো আমাদের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।
মূলত বিদেশি প্রজাতি, যেমন: রেইনট্রি, সেগুন, আকাশমণি, আকাশিয়া, শিশু, বাবলা ও ইউক্যালিপ্টাস জাতীয় গাছের জন্য প্রচুর জায়গার দরকার হয় এবং এগুলো দেশি গাছের তুলনায় অনেক দ্রুততার সাথে বেশি পরিমাণে পুষ্টি মাটি থেকে শুষে নেয়।
এছাড়া এগুলো প্রচুর পরিমাণ পানি শোষণ করে আর এসব গাছ তাদের সাথে অন্য প্রজাতির গাছকে বাঁচতে দেয়া বলে দেশীয় প্রজাতিগুলো বিলুপ্তির দিকে চলে গেছে। এভাবেই নষ্ট হয়েছে জৈববৈচিত্রের ভারসাম্য, বলছিলেন ড. উদ্দিন।
আগ্রাসী সব বিদেশি বৃক্ষ
ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ব্রিটিশ আমলে এ অঞ্চলে আনা হয়েছিলো রেইনট্রি, মেহগনি, চাম্বুলসহ কিছু গাছ। আবার আশির দশকে আনা হয়েছে আকাশমণি, ইউক্যালিপ্টাস, শিশু, ইপিলইপিল, বাবলা ও খয়ের জাতীয় গাছ।
এছাড়া রিফুজিলতা, স্বর্ণলতা, মটমটিয়া, পিসাইস, পার্থেনিয়াম, কচুরিপানাসহ বেশ কিছু লতা ও গুল্ম অনুমতি ছাড়াই দেশে ঢুকে পড়েছে।
"উভয় ধরনের উদ্ভিদ মিলে গত কয়েক দশকে আমাদের নিজস্ব ইকোসিস্টেমকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে," বলছিলেন তিনি।
তিনি বলেন এক সময় আসবাবপত্র বানাতে ও জ্বালানী কাঠের জোগান দিতে গিয়ে সংকটের মুখে পড়ছিলো বাংলাদেশের বনাঞ্চল। তখন বনকে রক্ষা করতে গিয়ে দ্রুত বর্ধনশীল বিদেশি প্রজাতির গাছ উদ্যোগ শুরু হয়েছিলো।
আর এসব গাছ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো বনভূমি, সড়কের পাশে, এমনকি মানুষের ঘরবাড়ির পাশের জায়গা জমিতেও।
"এতে করে বাংলাদেশের বনভূমির ওপর চাপ কমেছে সত্যি, কিন্তু কয়েক দশক পর এসে বোঝা যাচ্ছে যে বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে গেছে," বলছে জসীম উদ্দিন।
যেভাবে ক্ষতি করে এসব গাছ
ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলছেন, বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিদেশি প্রজাতির গাছগুলো দ্রুত বর্ধনশীল, অন্যদের চেয়ে আগে বাড়ে, অন্য কোনো উদ্ভিদকে সে আশ্রয় দেয়না, আবার নিজে খায় বেশি (অর্থাৎ পানি বা সার প্রয়োজন হয় অনেক বেশি), বংশবৃদ্ধির প্রবণতা বেশি।
"আমাদের দেশীয় গাছপালাকে ঘিরে অনেক লতাগুল্ম জন্ম নেয় ও বেড়ে ওঠে। আবার এসব গাছপালার ওপার নির্ভর করে নানা ধরণের পাখি, কীট, পতঙ্গের বসবাস ছিলো। কিন্তু বিদেশি প্রজাতির গাছগুলো তাদের সহযোগী উদ্ভিদ হিসেবে দেশীয় গাছকে গ্রহণ করেনি"।
ফলে লতাগুল্ম সহ অনেক বড় ধরণের গাছও আর টিকে থাকতে পারেনি বলে বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।
তিনি বলেন, এক সময় বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার প্রজাতির বৃক্ষ ছিলো, কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণার পর ৩৮৩২টি পর্যন্ত রেকর্ড করা গেছে।
অর্থাৎ হাজারখানেক প্রজাতির বৃক্ষ এখন আর দেখা যায় না।
তবে বনজ গাছের চেয়ে লতাগুল্ম ধরণের কিছু বিদেশি উদ্ভিদ বেশি আগ্রাসীভাবে বাংলাদেশের বাস্তুসংস্থানে ঢুকে পড়েছে বলে জানান তিনি।
"রিফুজিলতা, স্বর্ণলতা, মটমটিয়া, পিসাইস, পার্থেনিয়াম, কচুরিপানা - এ জাতীয় প্লান্ট অনুমতি ছাড়াই দেশে ঢুকে পড়েছে। আপনি দেখবেন কয়েক দশক আগে যেখানে সহজেই শাপলা ও পদ্ম মিলতো, সেখানে এখন কচুরিপানা আবার শালবনে ইউক্যালিপ্টাসের সাথে রিফুজিলতা হয়ে গেছে"।
যেভাবে ছড়ালো বিদেশি গাছ
ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলছেন, কিছু সরকারিভাবে আমদানি করা হয়েছে আবার কিছু সাধারণ মানুষও বিস্তার ঘটিয়েছে। সাম্প্রতিক দশকে বিদেশি গাছের বিস্তার হয়েছে নার্সারির মাধ্যমে।
"নার্সারি মালিকরা উদ্ভিদবিদ নয়। তারা গাছ চেনে না। দেশি বা বিদেশি গাছ আলাদা করতে পারে না। তারা শুধু বিক্রি করে। যেমন ধরুন: ওয়াক্কাচুয়া নামে একটি গাছ দেখতে ছাতিম গাছের মতো, যেটি এসেছে চীন থেকে। এগুলো এখন দেদারছে বিক্রি হচ্ছে নার্সারিতে"।
তিনি বলেন, তারা নার্সারির ওপর জরিপ করে দেখেছেন যে, নার্সারিগুলোতে দেশীয় বনজ গাছ বিক্রি হয় খুব কম।
এমনকি বিদেশি যেসব প্রজাতি আসছে সেগুলো আনার ক্ষেত্রেও অনুমোদনের ধার কেউ ধারে না বলেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
তবে ঢাকার আগারগাঁওয়ের একজন নার্সারি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলছেন, সব গাছই এক সময়ে সরকারি নার্সারি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে যা পরে ব্যক্তিগত নার্সারিগুলোর হাতে এসে বিস্তার পেয়েছে।
"আমরা তো আমদানি করি নাই কিছু। বনজ গাছ বিক্রি হয় কম। বিদেশিগুলো বিক্রি বেশি, কিন্তু সেগুলো তো এক সময় সরকারি নার্সারি থেকেই পেয়েছে সবাই," বলছিলেন তিনি।
যদিও এখন অনেক নার্সারি মালিক সরাসরি বিদেশ থেকেও নানা প্রজাতি এনে এখানে বংশবৃদ্ধি ঘটিয়ে বিক্রি করছেন এবং এভাবে বিস্তার হচ্ছে অনেক বিদেশী প্রজাতির প্লান্ট।
উত্তরণের উপায়:
ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলছেন, তারা মনে করেন কয়েকটি পদক্ষেপের মাধ্যমে আবার বিদেশি ক্ষতিকর গাছের বিস্তার রোধ করে দেশীয় বনজ গাছের সুসময় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে:
* দেশীয় নিজস্ব গাছপালা নার্সারিতে নিয়ে আসা।
* নার্সারি থেকে বিদেশি গাছ সরানো
* দেশীয় ফলমূল ও বনজ বৃক্ষের মাদার ট্রি থেকে বীজ আনা
* বিদেশে থেকে অনুমতি ছাড়া গাছ আনা বন্ধ করা
মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, বলেন এসব পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব হলে আগামী কয়েক দশক পর আর স্বপ্নেও দেশি গাছ পাওয়া যাবে না।
অবশ্য সরকারের বন বিভাগ সুফল প্রকল্প নামে একটি প্রকল্পের আওতায় সরকারি বনভূমিতে পঞ্চাশটির বেশি দেশীয় প্রজাতির বনজ বৃক্ষ লাগানোর কাজ করছে এবং আগামীতে তাদের এটি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
- বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের
- টাইটানিকের সেই দরজা নিলামে, ৮ কোটিতে বিক্রি
- ইফতারে রাখতে পারেন চিয়া দিয়ে তৈরি ৩ খাবার
- আজও ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর
- শহরের চেয়ে গ্রামে বিয়ে-তালাক বেশি
- বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া
- ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার ফল যেভাবে জানবেন
- চাকরির সুযোগ দেবে ইবনে সিনা
- ট্রেনে ঈদযাত্রা: ৭ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু
- গাজায় নিহত বেড়ে ৩২ হাজার ৪৯০
- অ্যানেস্থেসিয়ার ওষুধ বদলানোর নির্দেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের
- ওয়াশিং মেশিনে মিলল কোটি কোটি টাকা!
- ঘরের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ
- রোজা রেখে মুখে দুর্গন্ধ? দূর করতে করণীয়
- ব্যাটিং ভরাডুবি বাংলাদেশের, সহজ লক্ষ্য অস্ট্রেলিয়ার
- ‘অণুছড়া’ এবং ‘আমার ছড়া কথা বলে’ চলে এসেছে
- বইমেলায় আইরীন নিয়াজী মান্নার ৭টি বই
- বইমেলায় কানিজ কাদীরের কবিতার বই ‘মন’
- আজ জমবে বইমেলা
- টুথপেস্ট ও হ্যান্ডওয়াশে ক্যান্সারের ঝুঁকি!
- আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতি যেভাবে কাজ করে
- সংরক্ষিত নারী আসনে আ. লীগের ৪৮ প্রার্থীর নাম ঘোষণা
- সেলাই প্রশিক্ষণে ভাগ্য বদল কুষ্টিয়ার নারীদের
- জিমন্যাস্টিক্স বিশ্বকাপ: ব্রোঞ্জ জিতলেন প্রণতি
- ২৬৩ সাংবাদিকের জন্য ২ কোটি টাকা অনুমোদন
- এসএসসি পরীক্ষা: এক মাস সব কোচিং সেন্টার বন্ধ
- জাপার সভায় গান গাইলেন রওশন এরশাদ
- যুদ্ধশিশু ও এতিম দেখিয়ে শিশু পাচার: পুরনো ঘটনার তদন্ত দেশে
- মাছ চাষে স্বাবলম্বী দিনাজপুরের গৃহবধূ সাদেকা বানু
- জেনে নিন চিয়া সিডস খাওয়ার সঠিক নিয়ম