ঢাকা, শুক্রবার ২৯, মার্চ ২০২৪ ৫:০৭:৫৭ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া ট্রেনে ঈদযাত্রা: ৭ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু গাজায় নিহত বেড়ে ৩২ হাজার ৪৯০ অ্যানেস্থেসিয়ার ওষুধ বদলানোর নির্দেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঈদ কেনাকাটায় ক্রেতা বাড়ছে ব্র্যান্ড শপে বাঁচানো গেল না সোনিয়াকেও, শেষ হয়ে গেল পুরো পরিবার

রঙিলা পাখি কানাকুয়া : আইরীন নিয়াজী মান্না

আইরীন নিয়াজী মান্না | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৫০ এএম, ৫ মার্চ ২০১৯ মঙ্গলবার

রঙিলা পাখি কানাকুয়া

রঙিলা পাখি কানাকুয়া

চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাচ্ছিলাম। পথে গোবরতলা এলাকায় এই পাখিটি দেখি। নির্জন দুপুরে আম গাছের নিচু ডালে বসেছিলো আয়েসি ভঙ্গিতে। এর আগে এই পাখিটি প্রথম দেখেছিলাম কুমিল্লা থেকে ফেরার পথে মুন্সিগঞ্জের কাছে। 

বাহারি ডানা মেলে সে উড়ে যাচ্ছিল। তার শারীরিক সৌন্দর্য দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। কিন্তু তখন আমি পাখিটির নাম জানতাম না। পরে পাখি বিশেষজ্ঞদের জিজ্ঞাসা করে এবং বিভিন্ন বই থেকে ছবির বর্ণনা মিলিয়ে নিশ্চিত হই পাখিটির নাম কানাকুয়া। কেউ কেউ বলে কানাকোকা। বড় কুবো বা কুবো নামেও কেউ কেউ ডেকে থাকে। এরপর একাধিকবার আমি ঢাকা শহরেরই বিভিন্ন জায়গায় কানাকুয়া দেখেছি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকের পাড়ে বহুবার আমি জোড়ায় জোড়ায় কুবোদের ঘুরে বেড়াতে দেখেছি।

কুবো বেশ কয়েকটি উপপ্রজাতিতে বিভক্ত। কোন কোন উপপ্রজাতিকে অনেক সময় পূর্ণাঙ্গ প্রজাতির মর্যাদা দেওয়া হয়। কুবোর বৈজ্ঞানিক নাম: Centropus sinensis। Cuculidae (কুকুলিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Centropus (সেন্ট্রোপাস) গণের অন্তর্ভুক্ত অতি পরিচিত পাখি। পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল চত্বরে প্রায়ই এই পাখি দেখতে পাওয়া যায়। বেশ কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ বার্ড ওয়াচার সোসাইটির উদ্যোগে রাজধানীর বোটানিক্যাল গার্ডেনে পাখি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে খুব কাছে থেকে কানাকুয়া দেখেছি। বোটানিক্যাল গার্ডেনের একেবারে ভেতরের দিকে ঝোপঝাড়ের মধ্যে একটি কানাকুয়াকে হেঁটে বেড়াতে দেখেছি। 

উজ্জ্বল কালো চকচকে রঙের দেহের মধ্যে গাঢ় খয়েরি রঙের ডানা আর দীর্ঘ কালো ঝুলে পড়া লেজ দেখতে খুবই সুন্দর। প্রায় দাড়কাকের আকৃতির কানাকুয়ার চোখের রঙ টকটকে লাল। শরীরে কালোর সাথে নীলের আভা ঝিলিক দেয়। এরা খুব চটপটে নয়। শরীরের রঙের বাহারের কারণে দৃষ্টি কাড়ে পাখি প্রেমীদের।

কানাকুয়া ওড়াউড়িতে তেমন পটু নয়। বেশি দূর উড়তেও পারে না। উড়াউড়ির চেয়ে মাটিতে হেঁটে বেড়াতেই এরা যেন বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আগাছাময় প্রান্তর, উঁচু ঘাসের জঙ্গঁল চাষের জমি, অল্প-বিস্তর গাছপালা এসবই এই পাখিদের পছন্দ। লোকালয় কিংবা বাড়ির বাগানেও এদের প্রায়ই দেখা যায়। ঝোপের তলায় এদের দীর্ঘ লেজটি প্রায় মাটি ছুঁয়ে থাকে। খাবার খুঁজতে খুঁজতে ওরা ঝোপের মাথায় উঠে পড়ে এবং বেশ দক্ষতার সাথে গাছের ডালে ডালে লাফিয়ে বেড়ায়। সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় ঘুরতে পছন্দ করে। তাই কোথাও একটি কানাকুয়ার দেখা মিললে তার আশেপাশেই আরও একটির দেখা মিলবে।

এদের খাবার মেনুতে রয়েছে ফড়িং, ইঁদুর, শুঁয়োপোকা, বিভিন্ন কীট-পতঙ্গ, ছোট সাপ ইত্যাদি। কানাকুয়া অন্যান্য ছোট পাখিদের শত্রু। এরা মাটিতে ও ঝোপের মধ্যে ছোট ছোট পাখিদের বাসা খুঁজে বের করে তাদের ছানা ও ডিম খেয়ে ফেলে। 

এই পাখি বেশ গভীর ও সুরেলা কণ্ঠে ধীরে ধীরে উক্-উক্ করে ডাকে। ডাকতে ডাকতে বিরতি দিয়ে আবার ডাকটির পুনরাবৃত্তি করে। গরমের দিনে বহু দূর থেকেও এদের ডাক শোনা যায়। মাঝে মাঝে কানাকুয়া খুব দ্রুত সঙ্গীতের ঝঙ্কারের মতো কুপ্ কুপ্ কপ করে ৬/৭বার ডেকে  ওঠে। এমনকি কখনো কখনো ২০ বার পর্যন্ত ডেকে ওঠে। প্রতি সেকেন্ডে ২/৩ বার কুপ্ উচ্চারিত হয়। অদ্ভুত বিষয় হলো যখনই একটি কানাকুয়া এমন ডাক শুরু করে তখনই দেখতে দেখতে দূর থেকে আর একটি পাখি সাড়া দিয়ে ওঠে। তারপর এমন হয় গ্রীস্মের দুপুরে দ্বৈতকণ্ঠে এ সঙ্গীত চলতে থাকে দীর্ঘক্ষণ। কানাকুয়ার কণ্ঠে এই ডাক ছাড়াও আরো অনেক রকম অদ্ভুত আওয়াজ শোনা যায়। 

কুকুলিফর্মিস বর্গের অন্তর্গত হলেও জাতভাই কোকিলদের মত এরা পরজীবী নয়। গরমের সময় পাতা ও কাঠকুটো দিয়ে অনেক বড় গোলাকৃতির বাসা বানায় এরা। বাসায় ঢোকার প্রবেশ পথ থাকে এক পাশে। মিয়া-বিবি মিলেই বাসা তৈরির কাজ করে। দুজনে মিলেই বাসা বাঁধে এবং ছানাপোনাদের প্রতিপালন করে। এদের বাসাটি দেখতে অনেকটা রাগবি খেলার বলের মতো। কাঁটা গাছের বেশ নিচের দিকের ডালেই সাধারণত এদের বাসা দেখা যায়। 

এদের ডিমের সংখ্যা সাধারণত ৩/৪টি। ডিমের রঙ সাদা তবে তার গায়ে খড়ির গুঁড়োর মতো একটি আস্তরণ থাকে। 

কানাকুয়া খুব রোমান্টিক পাখি। প্রজনন ঋতুতে পুরুষ পাখিটি তার সঙ্গিনীর সামনে নানা রকম ভঙ্গিমায়  কসরৎ দেখাতে থাকে। পিঠের কাছে দীর্ঘ লেজটি তুলে নানা ভঙ্গিতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এবং ডানা দুটো দুপাশে ঝুলিয়ে রাশভারী চালে পায়চারী করে প্রেমিকার মনোহরণ করার চেষ্টা করে। 

কানাকুয়া আমাদের দেশী পাখি। ঢাকা শহরের কোলাহলপূর্ণ এলাকা থেকে প্রত্যন্ত গ্রামের সকল স্থানে কানাকুয়া দেখা যায়। গ্রাম্য হাতুরে কবিরাজদের কাছে এই পাখির মাংসের খুব কদর। কারণ তাদের ধারণা এই পাখির মাংস খেলে অনেক রকম বুকের ও শ্বাসযন্ত্রের অসুখ ভালো হয়ে যায়। এই কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে গ্রামাঞ্চলে অনেকেই কানাকুয়া ধরে হত্যা করে। কিন্তু এই হত্যা প্রবণতা বন্ধ করতে না পারলে কানাকুয়ার মতো একটি সুন্দর পাখি অচিরেই আমাদের পরিবেশ থেকে হারিয়ে যাবে।

৥ লেখক : আহবায়ক, বাংলাদেশ বার্ড ওয়াচার সোসাইটি।