ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮, মার্চ ২০২৪ ২১:১০:০৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া ট্রেনে ঈদযাত্রা: ৭ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু গাজায় নিহত বেড়ে ৩২ হাজার ৪৯০ অ্যানেস্থেসিয়ার ওষুধ বদলানোর নির্দেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঈদ কেনাকাটায় ক্রেতা বাড়ছে ব্র্যান্ড শপে বাঁচানো গেল না সোনিয়াকেও, শেষ হয়ে গেল পুরো পরিবার

শুভর স্কুল আলো দেখাচ্ছে বস্তিবাসি শিশুদের

বাসস | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:৫৩ পিএম, ২৯ মার্চ ২০১৯ শুক্রবার

নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া রেলস্টেশনে শুভচন্দ্রের স্কুল। স্থাপনা এবং অবকাঠামো ছাড়া ব্যাক্তিবিশেষের এই স্কুল এখন সুবিধাবঞ্চিন্ত শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার ঠিকানা।

২৫ বছরের যুবক চা দোকানদার শুভ চন্দ্র দাস নিজেই এ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এবং শিক্ষক। জন্মই হয়েছে তার অভাবের মধ্য। আর্থিক টানাপোড়ন এর সংসারে মা মারা যাবার পর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া ৫ম শ্রেণী পর্যন্তই। এরপর নারায়ণগঞ্জ বার একাডেমি স্কুলের তাহের স্যার এর কাছে ষষ্ঠ, সপ্তম আর অষ্টম শ্রেণীর বইগুলি পড়েন। এপর্যন্ত-ই তার পড়াশোনা।

ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিলো একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করার। অভাব এর মধ্য বড় হওয়ায় ভালোভাবে বুঝেছেন অভাব তাড়াতে পড়াশোনার প্রয়োজনীয়তা। আর তাই বেছে নিলেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরকে লেখাপড়া শেখানোর দায়িত্ব।

নারায়ণগঞ্জ এর চাষাঢ়া রেলস্টেশনের খোলা আকাশের নিচে প্লাটফর্মের ক্ষুদ্র কোনটুকুই ওদের স্কুল। স্কুল এর নাম শুভ চন্দ্র নিজের নামেই রেখেছেন “লাল-সবুজের পতাকা শ্রী শুভ চন্দ্র প্রাথমিক শিশু বিদ্যালয়”। প্রাথমিক বিদ্যালয় হলেও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের এখানে আসলে বর্ণমালার হাতেখড়ি দেয়া হয়। 
প্রাথমিক অক্ষরদানের পর শুভ নিজেই ওদেরকে নিকটস্থ সরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন।

শুভ’র সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১৬ সাল থেকেই তিনি এই স্কুল পরিচালনা করে আসছেন। বর্তমানে ৬৩জন তার স্কুলে লেখাপড়া করছে। এর পাশাপাশি ২৫-৩০জন শিশুকে সরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। এসব শিশু স্টেশন এর পাশের বস্তিবাসিদের ছেলেমেয়ে। স্কুলের ক্লাসশুরু হতো সকাল আটটায়, শেষ হতো দশটায়। বর্তমানে সময়টা পরিবর্তিত হয়ে বিকাল ৪টা থেকে ৬টা হয়েছে।

স্টেশন এর পাশে অবস্থিত চায়ের দোকানদার আলম জানান, প্রথমে রেললাইন এর পাশের খাস জমিতে একটি খুপরি ঘরেই চলতো এই স্কুল। পরবর্তীতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ডাবল লাইনের কাজের জন্য খুপরি ঘর উচ্ছেদ করলে শুভদা’র স্কুল চলে আসে ছাউনী বিহীন এই প্লাটফর্ম। ঝড়-বৃষ্টি হলে থেমে যায় স্কুলের পাঠদান।

এরপরেও পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে খুশি ভ্রাম্যমাণ এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা। তারা তাদের শিক্ষককে অনেক ভালোবাসে। ছুটির দিনে ওদেরকে বিরিয়ানি খাওয়ানো হয় বলেও জানিয়েছে স্কুলের শিক্ষার্থী সুমাইয়া, মারিয়া ও হাসিনা।

কোনো সহকারী শিক্ষক ছাড়া এসব কার্যক্রম একাই পরিচালনা করেন শ্রী শুভ চন্দ্র দাস। চাষাঢ়া, রামবাবুর পুকুরপাড়ে একটি চায়ের দোকান আছে তার। এই দোকান থেকে ৮-১০ হাজার টাকা আয় হয় তার। আর সে অর্থই ব্যয় করেন সুবিধাবঞ্চিত এই শিশুদের জন্য। এ সম্পর্কে শুভ বলেন, ‘নিজে লেখাপড়া করতে পারি নাই অর্থের অভাবে, কিন্তু আমি চাই না আমার মতো ওরাও শিক্ষা অর্জন থেকে বঞ্চিত হোক। ওদের অনেক মেধা। উপযুক্ত শিক্ষা দিলে ওরাও একদিন এই দেশের সম্পদে পরিণত হবে।’

তিন বছর ধরে নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত এই স্কুলের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আর্থিক সাহায্য পাননি তিনি। কয়েকবার স্থানীয় পত্রিকায় এ ব্যাপারটি উঠে আসলেও কোনো সংস্থা এগিয়ে আসেনি তার সাহায্যার্থে- এমনটাই জানালেন শুভ।

দিনের পর দিন স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও, বাড়েনি শুভ চন্দ্রের আয়। তার সীমিত সামর্থেই চলছে স্কুল।