শেষ জীবনে ভাতের নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা রাজুবালা!
ডেস্ক রিপোর্ট | উইমেননিউজ২৪.কমআপডেট: ০৮:০৬ পিএম, ২৯ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার
বিজয়ের মাসে চলে গেলেন সিরাজগঞ্জ জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজুবালা দাস (৭০)। শেষকৃত্যর আগে আজ সকালে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শণ করা হয়। প্রয়াত রাজুবালা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নিজ বাড়িতে পাক-বাহিনীর আক্রমণের শিকার হন। সে সময় তার স্বামীকে বেঁধে রেখে ও শিশু সন্তানকে আছড়ে ফেলে তাকে ধর্ষণ করে পাক আর্মিরা। ২০১৫ সালে সরকার নারী মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতিদান প্রক্রিয়া শুরু করলে প্রথম দফাতেই তিনি তালিকাভূক্ত হন এবং মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি লাভ করেন।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) গভীর রাতে সদর উপজেলার চাঁদপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার পাইকসা ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামে বসবাস করতেন এই মুক্তিযোদ্ধা।
সে সময় মুক্তিযুদ্ধের বিভৎস স্মৃতি স্মরণ করে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। সেই দিনের স্মৃতি স্মরণ করে রাজুবালা দাস বলেন, ‘আজাকারদের সঙ্গে কইরে নিয়ে আসে মিলিটারী। সবাই পলাইয়া গেল। যারা পলাইতে পারে নাই। তাদের ওপর শুরু হলো নির্যাতন।’ উদাস দৃষ্টি ছড়িয়ে হতাশা আর ক্ষোভের নিশ্বাস ছেড়ে কথাগুলো বলে যান তিনি।
কুলিন হিন্দু সমাজে জন্মগ্রহণ করেন রাজুবালা। শৈশব আর কৈশোর কেটেছিল আর দশটি হিন্দু পরিবারের মেয়েদের মতো। তবে আর দশটি হিন্দু পরিবারের মেয়েদের চেয়ে রাজুবালা ছিল আলাদা। সদা চঞ্চল, সদা হাস্যময়ী, পড়শীদের সকলের সঙ্গে মিশতো আন্তরিকতা দিয়ে। সমবয়সী মেয়েদের নিয়ে এবাড়ি ওবাড়ি ঘুরে বেড়ানো, বনভোজন আর নানা ধর্মীয় উৎসবে অংশ নিয়ে মেতে থাকত রাজুবালা। তার ওই চঞ্চলা স্বভাবের জন্য গুরুজনদের বকাও খেয়েছে বিস্তর, এতে খনিকের জন্য দমে গেলেও আবার মেতে উঠত নিজের স্বভাবজাত বৈশিষ্টে।
নারীদের এত খাঁচাছাড়া পাখির মতো হতে নেই, এমন বিবেচনায় মেয়েকে সাংসারিক দায়িত্বে বাঁধতে চাইলেন অভিভাবকরা। একদিন বাবা রাজুবালার বিয়ে ঠিক করে ফেললেন। লাল বেনারসি শাড়ি পরে বধুবেশে শ্বশুর বাড়ি স্বামীর সংসারে চলে গেলেণ রাজু। কিন্তু মেহেদীর রং মোছার আগেই এক তুমুল ঝড়ে তছনছ হয়ে গেল রাজুবালার স্বপ্ন, তার সংসার। তখনো বিয়ের আমেজ কাটেনি রাজুবালার।
বিয়ের মাত্র ৩ মাসের মাথায়ই শুরু হলো স্বাধীনতা যুদ্ধ। চলতে থাকল পাকিস্তানি হানাদার আর তাদের এদেশীয় দোসর দালালদের নির্যাতন নিপীড়নের কাজ। বাদ পড়েনি রাজুবালাদের গ্রামও।
সেদিনের সেসব স্মৃতির কথা জানতে চাইলে কিছুক্ষণ মাথাটা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকেন রাজুবালা। তার দু গাল বেয়ে টপ টপ করে ঝড়তে থাকে অশ্রু। বড় বড় চোখের অশ্রুতে ভিজতে থাকে শুকনো মাটি। তারপর ধীরে ধীরে মাথা তুলে রাজুবালা বলতে শুরু করেন, সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। ২ জন রাজাকার, ১০-১২ জন মিলিটারী ঘরের সামনে আইসা আমার স্বামীরে ডাক দিলো। কইলো তোর বউ কই? কিছু বলার আগেই হেরা আমার স্বামীরে ধইরা হাত-পা বাইন্ধা ফালায়। বুট দিয়া লাথি মারতে থাকে। দুই জন আইসে আমার মুখে কাপড় দিয়া আমারে কোলে তুইলা নিয়া যাইতে লাগল। আমি অনেক জোরাজুরি করার পর মিলিটারীরা রাইফেলের বাট দিয়া কপালে একটা গুঁতো দেয়। কপাল থেইকা রক্ত ঝরতে থাকে। হেরা কইলো, কোনো কথা কইলে গুলি কইরা মাইরা ফালামু। আমারে জোর কইরা বাড়ির পাশের জঙ্গলে নিয়া যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হারামির বাচ্চাগুলান একের পর এক শুকুনের মতো ঠোঁকরাতে থাকে। কতজন আইসলো গেল মনে কইরতে পারি নাই। একসময় জ্ঞান হারাইয়া ফালাই।
যখন জ্ঞান ফিরল, দেখি মাথার কাছে বসে আমার স্বামী কানতেছে। শরীরের নীচের ভাগ যেন আলাদা হয়ে গেছে, কোনোভাবেই নড়াচড়া করার শক্তি ছিল না।
স্বামীর যতন আর সেবায় কয়েকদিনের মধ্যেই একটু সুস্থ্ হয়ে উঠি, একটু একটু হাঁটাচলা করতে থাকি। কিন্তু জায়গা হইলো না শ্বশুর বাড়িতে। শ্বশুর-শাশুড়ি সাফ জানিয়ে দিলো আমার মতো কলংকিনীর হাতের কোনো রান্না তারা খাবে না। কিন্তু আমার স্বামী তাদের কথায় কান দিলেন না। তিনি কইলেন, আমার বউ তো আর ইচ্ছা কইরা মিলিটারীগো কাছে যায় নাই, তোমরা তার হাতের খাবার খাইলে খাও না খাইলে না খাও, আমি তারে ছাড়তে পারব না।
তাই আমার জন্য স্বামীকেও ছাড়তে হলো বাপের ভিটে। বাড়ির পাশেই একটা একচালা ঘর বানাইলো। সারা দিন দিন মজুরের কাজ কইরা যা আয় হইত তা দিয়াই আমগো সংসার চলতে লাগল।
কিন্তু সমাজের প্রায় সকলেই একঘরে কইরে রাখে আমাদের। রাস্তায় বেরোলেই বিভিন্ন রকম বাজে কথা কইতে থাকে। আমার স্বামীরে বিভিন্ন কথা কইয়া খ্যাপাইতে থাকে। সমাজের কটু কথা সহ্য করতে না পেরে সে স্ট্রোক করে মারা যায়। আর সমাজের অবহেলা, অবজ্ঞা আর ঝি-এর কাজ করেই এখনো বাঁইচে আছি আমি। আর কী জাইনতে চান কন?’
ঘৃণা, ক্ষোভ, হতাশা, ক্ষুধা, দারিদ্র্য যে মানুষকে কী পরিমাণ আঘাত করতে পারে, রাজুবালাকে না দেখলে কেউ হয়তো এর যথার্থ অনুমানই করতে পারবেন না।
তার একটাই দাবি ছিলো, মরার আগের কয়টা দিন যেন আর না খেয়ে থাকত হয়। কথার শেষ দিকে চোখের জলের স্রোতের কারণে আর কথা বলতে পারছিলেন না রাজুবালা। আর আজ তো তার চারদিক ঘিরে শুধুই স্তব্ধতা…!!
সূত্র : ইন্টারনেট
- চুয়াডাঙ্গা জুড়ে প্রতিদিনই বাড়ছে তাপমাত্রা
- পর্তুগালে বাংলাদেশি স্থপতি মেরিনা তাবাসসুমের স্থাপত্য প্রদর্শনী
- তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে রাজশাহী
- হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউ পুড়ে ছাই, রক্ষা পেল ৭ শিশু
- সবজির বাজার চড়া, কমেনি মুরগির দাম
- সারা দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
- কৃষক লীগ নেতাদের গণভবনের শাক-সবজি উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী
- চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি
- শিশু হাসপাতালের আগুন সম্পূর্ণ নিভেছে
- শিব নারায়ণ দাশের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
- পরলোকে জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ন
- মানুষ এখন ডাল-ভাত নয়, মাছ-মাংস নিয়ে চিন্তা করে
- ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট
- আজ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন
- তীব্র তাপপ্রবাহ, সতর্ক থাকতে মাইকিং
- খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরো বাড়ল
- ২৯ ফেব্রুয়ারি বা লিপ ইয়ার নিয়ে ১০টি মজার তথ্য
- জমজমাট ফুটপাতের ঈদ বাজার
- ২৬৩ সাংবাদিকের জন্য ২ কোটি টাকা অনুমোদন
- জাপার সভায় গান গাইলেন রওশন এরশাদ
- কচি-কাঁচার আয়োজনে ভাষা দিবসে সাংস্কৃতিক আয়োজন
- দেশে ধনীদের সম্পদ বাড়ছে
- এবার বাংলা একাডেমি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার পাচ্ছেন যারা
- বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা
- গুলবদন বেগম: এক মুঘল শাহজাদির সাহসী সমুদ্রযাত্রার গল্প
- যে বিভাগে বিচ্ছেদের হার বেশি
- রোমান্টিক যুগের অন্যতম কবি জন কিটস
- ৭ই মার্চ পরিস্থিতি, কেমন ছিলো সেই দিনটি
- ঘরের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ
- সদরঘাট ট্র্যাজেডি: সপরিবারে নিহত সেই মুক্তা ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা