ঢাকা, শুক্রবার ১৯, এপ্রিল ২০২৪ ২১:০৭:৪১ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউ পুড়ে ছাই, রক্ষা পেল ৭ শিশু সবজির বাজার চড়া, কমেনি মুরগির দাম সারা দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি কৃষক লীগ নেতাদের গণভবনের শাক-সবজি উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি শিশু হাসপাতালের আগুন সম্পূর্ণ নিভেছে

সখীপুরের একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ফাতেমার সাতকাহণ

অনু সরকার | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:১৩ পিএম, ৮ মার্চ ২০২১ সোমবার

সখীপুরের একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ফাতেমা খাতুন।

সখীপুরের একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ফাতেমা খাতুন।

একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধে দেশের মুক্তির জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন টাঙ্গাইলের ফাতেমা খাতুন৷ অথচ দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়ার সুযোগ পাননি৷ আর আজ রোগে-শোকে ভুগছেন স্থানীয় পৌরসভার ঝাড়ুদার এই বীর মুক্তিযোদ্ধা৷

মুক্তযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘পাহাড়ের কোল দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের শক্ত অবস্থান গড়া শুরু করলো৷ তখন আমি খুব সাহসী ছিলাম৷ কোনো কিছুকেই ভয় পেতাম না৷ একদিন মুক্তিযোদ্ধারা বললেন, তোমার মতো একজন সাহসী মেয়ে আমাদের দরকার৷ যাকে মুক্তিযোদ্ধা ঘাঁটিতে থাকতে হবে, রান্না করা এবং তথ্য ও চিঠিপত্র আনা-নেওয়ার কাজ করতে হবে৷’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি তখন ছেলেদের মতো চুল কেটে রাখতাম৷ নাক-কান না ফোঁড়ার কারণে আমাকে পুরোপুরি ছেলেদের মতো মনে হতো৷ ফলে আমি সহজেই মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়ে গেলাম৷’

ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘আমি কাজ করা শুরু করলাম। মুক্তিযোদ্ধারা আমাকে খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য বহেড়াতৈল ক্যাম্প থেকে সখীপুরের কোকিলা পাবর, গোহাইল বাড়ি, রতনগঞ্জ ও মরিচাসহ বিভিন্ন ক্যাম্পে পাঠাতেন৷ এছাড়া বহেরাতৈল মুক্তিযোদ্ধাদের শিবিরে অস্ত্র পাহারা দেওয়া এবং যত্ন নেওয়ার কাজ করতাম৷ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গ্রাম থেকে খাদ্য সামগ্রী সংগ্রহ করে আনতাম৷ বাড়ি বাড়ি গিয়ে মা-চাচিদের দিয়ে মরিচ, হলুদ এবং অন্যান্য মসলা বেটে নিয়ে যেতাম৷'

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বহেরাতৈল গ্রামের সিরাজ উদ্দিন ও লাল জানের মেয়ে ফাতেমা। ১৯৭১ সালে তিনি কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান ঘাঁটি বহেরাতৈলে কর্মরত ছিলেন৷ ফাতেমা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অস্ত্র হাতে যুদ্ধে যেতে চাইলে অল্প বয়সি বলে তাকে যুদ্ধে নিয়ে যাননি মুক্তিযোদ্ধারা৷ বরং ঘাঁটি পাহারা দেওয়া এবং অন্যান্য কাজের জন্যই তাকে নিযুক্ত করা হয়েছিল বলে জানান ফাতেমা৷

একদিন নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে কীভাবে কয়েকজন রাজাকারকে ফাঁদে ফেলেন তিনি, সে ঘটনা জানালেন ফাতেমা খাতুন৷

তিনি বলেন, ‘একদিন মরিচার দিক থেকে কয়েকজন রাজাকার রাইফেলকে চার ভাঁজ করে কাপড়ের মধ্যে লুকিয়ে নিয়ে আসছে৷ আর আমি মরিচার দিকে যাচ্ছিলাম৷ এসময় তারা আমাকে জিজ্ঞেস করে, এই তুমি ছেলে না মেয়ে? আমি বলি, ছেলে৷ তখন তারা বলে, তোমাকে তো মেয়ের মতো মনে হয়৷ তুমি কোথায় যাও? আমি তখন বলি, বোনের বাড়িতে যাবো৷ তখন তারা আমাকে জিজ্ঞেস করে, বহেরাতৈলে কি মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি আছে৷ আমি বলি, না, না এদিকে তাদের কোনো ঘাঁটি নাই৷ সোজা চলে যান৷ তারা আমার দেখানো পথ ধরে চলে যায়৷ সামনে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পড়ে৷ সেখানে তাদের ধরে বেদম মেরে ফেলে রেখেছিল মুক্তিযোদ্ধারা৷'

সখীপুরের একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ফাতেমা খাতুন ১৩ বছর ধরে সখীপুর পৌরসভার ঝাড়ূদার৷ দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়ার সুযোগ পাননি ফাতেমা খাতুন৷ এছাড়া ২০০৭ সালের আগ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধে ফাতেমার গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা কেউ জানতো না৷ ২০০৭ সালে পত্রিকায় ফাতেমা খাতুনের বীরত্বের কাহিনী তুলে ধরার পর স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার প্রতি সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়৷ এখনও তাকে কিছু সহযোগিতা করেছে সরকার৷

বর্তমানে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও সখীপুর পৌরসভায় মাস্টাররোলে ঝাড়ুদারের কাজ করে দুই হাজার টাকা বেতন পান এই বীর নারী৷ অভাব-অনটনে থাকা ফাতেমা বর্তমানে নানা রোগে ভুগছেন৷ টাকার অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছেন না৷

পাঁচ সন্তানের জননী মুক্তিযোদ্ধা ফাতেমার স্বামী মোবারক হোসেন একজন মানসিক রোগী৷ তার কোনো আয় নেই। ফাতেমার উপার্জনেই চলছে পরিবার৷ এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন৷