ঢাকা, শুক্রবার ২৬, এপ্রিল ২০২৪ ৩:৫৩:২৯ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস

সমুদ্র ও সাত মানবী

শান্তা মারিয়া | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৩৬ এএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ বুধবার

উপন্যাস : সমুদ্র ও সাত মানবী ৥ শান্তা মারিয়া (শেষ পর্ব)

উপন্যাস : সমুদ্র ও সাত মানবী ৥ শান্তা মারিয়া (শেষ পর্ব)

।শেষ কিস্তি।

সমুদ্রের বিশালতার মুখোমুখি হয়ে সমাজের সব ক্ষুদ্রতাকে দূরে ছুঁড়ে দিলেন উর্মি। তার ভিতরে জমে থাকা বিষন্নতার মেঘ কেটে যাচ্ছিল। রোহানের ভালোবাসার বিস্তৃত পরিসরটি যেন এতদিনে সত্যিকারভাবে তার চোখে ধরা দিল। রোহানের যে ভালোবাসা তার ভিতরে কোন মালিন্য নেই, নেই ক্ষুদ্র আসক্তি। সমাজ কী বলবে তাতে কিছুই এসে যায় না। এই সমুদ্রের অপর তীরে আছে অন্য ভূখণ্ড, অন্য সমাজ। সমাজ তো নিজেদের দশজনকে নিয়েই। এই সুবর্ণা, নাহিদ, শোভা, সামিরা, আলফাজ এদের নিয়েই সমাজ। এরা যদি তাকে সহজভাবে আজ মেনে নাও নেয়, কাল নেবে। না নিয়েই বা যাবে কোখায়। উর্মিও তো সমাজের একজন। তাকেও তো প্রয়োজন অন্যদের। 

সামিরার চোখেও ধরা পড়ছিল জীবনের সত্যিকার চেহারা। পৃথিবীর সবটুকুই তারেকের মতো স্বার্থপর নয়। অটিজমও স্বাভাবিকতারই একটি অংশ। তার আত্মজরা পরিত্যাজ্য নয়, ভুলে থাকারও নয়। ওরা এই পৃথিবীর এই প্রকৃতির প্রিয় সন্তান। সাগরের পানি কোথাও নীল, কোথাও ঘোলা, আকাশের রং কোথাও ঘন নীল, কোথাও হালকা, মানুষের মনেরও নানা রঙ, নানা ধরন। এর কোনটিকেই অস্বাভাবিক বলার অধিকার সৃষ্টিকর্তা কাউকে দেননি। 

সমুদ্রের সংস্পর্শে এসে জলিও যেন ফিরে পাচ্ছিলেন মধুচন্দ্রিমার সেই দিনগুলো। সংগঠনের প্রেসিডেন্টের পদ আঁকড়ে থাকা, মাহমুদের সঙ্গে শুষ্ক ভদ্রতা, প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠনকে অকার্যকর করার নিরন্তর চেষ্টা এসব চিন্তা ধুয়ে মুছে নিচ্ছিল ঢেউয়ের পর ঢেউ। তিনি দেখছিলেন উদার আকাশ, উজ্জ্বল সমুদ্র, অনুভব করছিলেন সাগরী বাতাসের স্পর্শ।  

সমুদ্রের সামনে কিছুক্ষণ মুগ্ধ বিষ্ময়ে দাঁড়িয়েছিলেন কঙ্কনা। সুহার্সো এসে তার হাত ধরলেন। এবার আর সাহায্যের জন্য নয়। সব দ্বিধা ঝেড়ে তার হাতটি ধরতে ইচ্ছা হয়েছিল বলেই ধরলেন। সুহার্সোর হাত ধরেই সমুদ্রের জলে এগিয়ে গেলেন কঙ্কনা। পরষ্পরের হাত ধরে অকারণেই হাসছিলেন তারা। এই হাসি স্বতঃস্ফূর্ত। এর কোনো পৃথক ব্যাকরণ নেই, নেই অনুবাদের প্রয়াস। তারা দুজনেই শুধু অনুভব করছিলেন এই স্পর্শ এই অনুভূতি ক্ষণিকের মোহ নয়, চিরন্তন। কৈশোর থেকে যে তীব্র ভালোবাসার স্বপ্ন তারা দুজনেই দেখেছেন এই সেই। সমুদ্রের মতোই তীব্র, অকুল, গভীর ও হয়তো বা বিধ্বংসী। সমুদ্রকে ব্যক্তিগত করা যায় না। সুহার্সো বা কঙ্কনাকেও নয়। ব্যক্তিগত করতে হলে যা হারাতে হবে তার নাম প্রেম। নজরুলের সঙ্গে তার জীবনটা যে ধারায় বয়ে চলেছে ঠিক সেভাবেই সেটা বয়ে যাবে সন্দেহ নেই। কিন্তু অতি নিভৃতে অন্তঃশীলা ভালোবাসায় আবহমান থাকবে সুহার্সো। হয়তো অফিসে লেখায় ব্যস্ত জীবনের ভিতরেও চকিতে তার মুখ মনে পড়বে। হয়তো কখনও কোন ই-বার্তায়, মোবাইলের ম্যাসেজে অথবা ইনবক্সের গোপন কুঠরীতে মণি হয়ে দ্যূতি ছড়াবে কোনো কথা যা একান্তই তাদের নিজস্ব। 

হয়তো কয়েক যুগ পরে ইন্দোনেশিয়ার কোন সবুজ পাহাড় মনে করিয়ে দিবে বান্দরবানের কথা। স্ত্রী সন্তান নিয়ে সুখী বৃদ্ধ সুহার্সোর হঠাৎ মনে পড়ে যাবে কঙ্কনার হাসি। হয়তো অনেক বছর বিস্মৃত থাকার পর মৃত্যুর হাতে হাত রেখে জীবন থেকে বিদায় নিতে নিতে কঙ্কনার মনে পড়বে সুহার্সোর কথা, মনে পড়বে সমুদ্রতীরের এই শহরে কেটে যাওয়া চারটি দিন। চিরন্তনের এই সঞ্চয়টুকু নিয়ে জীবনান্তরে শুরু হবে তার যাত্রা। সুহার্সো ও কঙ্কনা বুকের ভিতর আমৃত্যু বহন করবে এই অতলান্ত সাগর। তবু নজরুল ও সালিমা কোনদিন জানবে না এই সমুদ্রের অস্তিত্ব। নাই বা জানলো, নাই বা হলো সাগরে বসতি। জীবনে একবারের জন্য হলেও যে তাকে অনুভব করা গেছে তাই তো যথেষ্ট। সমুদ্রের কাছে ফিরে ফিরে আসা যায় হয়তো কিন্তু সমুদ্রকে অস্তিত্বের গভীরে একবার অনুভব করাই পার্থিব জন্মের পক্ষে যথেষ্ট নয় কি? শেষ