ঢাকা, শুক্রবার ১৯, এপ্রিল ২০২৪ ২:৪১:৩৬ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই দেশ আরও উন্নত হতো টাইমের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা নান্দাইলে নারী শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা তীব্র গরমে জনজীবনে দুর্ভোগ, বাড়ছে জ্বর-ডায়রিয়া কারাগার থেকে সরিয়ে গৃহবন্দী অবস্থায় সুচি কৃষকরাই অর্থনীতির মূল শক্তি: স্পিকার মধ্যপ্রাচ্যের দিকে নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ড. রাজিয়া খানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:১৪ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ সোমবার

সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ড. রাজিয়া খান

সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ড. রাজিয়া খান

দেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ড. রাজিয়া খানের নবম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ২৮ ডিসেম্বর। লেখালেখি ছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন মঞ্চে অভিনয় করেছেন। তার পুরো নাম রাজিয়া খান আমিন হলেও তিনি রাজিয়া খান নামে পরিচিত।

পঞ্চাশের দশকে যখন বাংলাদেশের সাহিত্যের একটি গতি নির্দিষ্ট হচ্ছিল, সেই সময়ের একজন প্রতিভাবান লেখক৷ ‘বটতলার উপন্যাস’ গ্রন্থে তার আধুনিক মনস্কতার ছাপ স্পষ্ট।

শৈশবে তিনি কলকাতায় ছিলেন ১০ বছর। তখন তার বয়স দশ বছর। শৈশবের সেই স্মৃতি, কলকাতার সেই রূপ তার লেখায় বারবার ফিরে এসেছে। সেই সময় কলকাতা ছিল বিরাট মেট্রোপলিটন শহর, কলকাতা শহরের সাংস্কৃতিক অঙ্গন ছিল বিশাল উদার। মুসলমান হিন্দুর বিভেদ তখনও তৈরি হয়নি। বৃটিশরা নানা ধরনের জটিলতা তৈরি করলেও সাধারণ মানুষের জীবনে তখনও তার কোনও প্রভাব ছিল না। খুব স্বাভাবিকভাবেই কলকাতার সেই উচ্ছল জীবন তার শৈশবে প্রভাব ফেলেছিল এবং তিনি সারাজীবন সেই আনন্দময় স্মৃতি মনে রেখেছেন।

বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৭৫ সালে তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান৷ এছাড়া একুশে পদক, শিল্পকলা একাডেমী পদক এবং অনন্যা সাহিত্য পুরস্কারসহ তিনি বিভিন্ন পুরস্কার ও স্বীকৃতি লাভ করেছেন।

রাজিয়া খান ১৯৩৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা তমিজউদ্দিন খান অবিভক্ত বাংলার মন্ত্রী, আইন সভার সদস্য এবং জাতীয় পরিষদের স্পীকার ছিলেন। তার মায়ের নাম রাবেয়া রাহাত খান।

রাজিয়া খান কলকাতা ও করাচিতে স্কুল, কলেজ জীবন শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স ও এম.এ. পরীক্ষায় প্রথম হন। পরে ব্রিটিশ কাউন্সিলের বৃত্তি নিয়ে ইংল্যান্ডে পড়তে যান। সেখান থেকে তার পিএইচডি ডিগ্রীর সব কাজ শেষ করে কলকাতায় আরও কিছু রিসার্চ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিভাগে পিএইচ.ডি. ডিগ্রী লাভ করেন এবং অধ্যাপনা করেন।

পঞ্চাশ দশকে সাহিত্য ও সংস্কৃতির অনুরাগী ও প্রগতিবাদী লেখক হিসেবে লেখালেখি করেছেন রাজিয়া খান। বাংলাদেশের উপন্যাসে নারীভাবমূর্তি সৃষ্টিতে নারী লেখকদের মধ্যে তাই আকিমুন রহমান তাকে প্রথম দিককার একজন মনে করেন। তার ভাষায় “প্রথমভাগের অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে রাজিয়া খান, রিজিয়া রহমান, সেলিনা হোসেন প্রমুখকে।” তার প্রথম সৃজনশীলতার ঝোঁক প্রকাশিত হয় ছন্দে। আর ১৫ বছর বয়সেই পুরোদস্তুর উপন্যাস লিখতে শুরু করেন তিনি, আর ১৮ বছর বয়সেই লেখা হয়ে যায় ‘বটতলার উপন্যাস’। ১৮ বছর বয়সে তার লেখা 'বটতলার উপন্যাস' জনপ্রিয়তা পায়। তিনি খুব বেশি লিখে গিয়েছেন তেমন নয়, কিন্তু যা লিখে গেছেন তাতে জটিলায়তন নগরজীবন-অন্তর্গত ব্যক্তিমানুষের নৈঃসঙ্গ, বিচ্ছিন্নতা ও আত্মরক্তক্ষরণের শিল্পরূপায়ন করেছেন।তার মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস 'দ্রৌপদী' এপার ওপার দুই বাংলায় বেশ সমাদৃত। রাজিয়া খান আমিনের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১২টির বেশি। লেখালেখির জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদকসহ নানা পুরস্কার পেয়েছেন।

তিনি কর্মজীবন শুরু করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে। পরবর্তীতে ইংল্যান্ড থেকে ফিরে তিনি অবজারভার পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীতে যোগ দেন এবং নিয়মিত ভাবে ব্যঙ্গ কলাম- 'কালচার কেটল' লেখা শুরু করেন। ১৯৫৮ সাল থেকে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয় পুনরায় শিক্ষকতার জীবন শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপনা করেন। পরে এই বিভাগের প্রধান হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।

শিক্ষকতা ছাড়াও তিনি দেশের খ্যাতনামা বিভিন্ন সংবাদপত্রে সাংবাদিক ও সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি ইউনিভাসিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের ইংরেজি বিভাগের ডিন ছিলেন।

মঞ্চ নাটকে এক সময় রাজিয়া খানের দৃপ্ত পদচারণা ছিল। কিশোরী বয়সে তিনি মঞ্চে কাজ শুরু করেন। এক সময় 'বিজয়া' নাটকে মালিনী'র ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। এই নাটকে মুনীর চৌধুরী ছিলেন 'বিলাসবিহারী'। এরপর অভিনয় করেন 'নীলদর্পন', 'মেঘমুক্তি', 'দুইপুরুষ', 'বিদ্রোহী পদ্মা'য় ৷ 'কৃষ্ণকুমারী'তে অভিনয়ের মাধ্যমে মঞ্চ অভিনয়ের ইতি টানলেও সত্তরের দশকে ইংরেজী 'রক্তকরবী'তে অভিনয় করেন।

এছাড়াও বেতারের ভার্সিটি ম্যাগাজিনে অলিভার টুয়িষ্ট, এন্টনি অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা, অ্যান্টিগন' এবং 'মিড-নাইট সামার নাইটস ড্রিম-এ অভিনয় করেন। রাজিয়া খান চলচ্চিত্র অঙ্গনের সঙ্গেও দীর্ঘ দিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় কাজ করেছেন।

তিনি চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন দীর্ঘদিন। তার 'ইয়থ ফ্লিম সোসাইটি ছাড়াও চলচ্চিত্র অনুদান কমিটি, চলচ্চিত্র পুরস্কার কমিটি, সেন্সর বোর্ডে ছিলেন অনেক দিন।

ড. রাজিয়া খান অনেকবার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, মিশর, হংকং জাপান, ভারত, সিঙ্গাপুর ও আরব দেশ সফর করেন। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেন। ১৯৭৮ সালে দিল্লীতে কমনওয়েলথ লেখক সম্মেলনে 'বাংলাদেশের কবিতা' শীর্ষক ইংরেজী প্রবন্ধ পাঠ করেন। ১৯৮৫ সালে ভেনিসে পি.ই.এন সম্মেলনে প্রবন্ধ পাঠ করেন। এছাড়া ১৯৮৪ সালে চীন সরকারের আমন্ত্রণে চীনে যান।

২০১১ সালের ২৮ ডিসেম্বর রাজধানীর গুলশানের একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি। ড. রাজিয়া খানের প্রতি উইমেননিউজ২৪.কম-এর গভীর শ্রদ্ধা।