ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ৮:৪৩:৪২ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউ পুড়ে ছাই, রক্ষা পেল ৭ শিশু সবজির বাজার চড়া, কমেনি মুরগির দাম সারা দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি কৃষক লীগ নেতাদের গণভবনের শাক-সবজি উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি শিশু হাসপাতালের আগুন সম্পূর্ণ নিভেছে

স্বরবৃত্ত ছন্দে ছড়া প্রাণবন্ত

ফারুক নওয়াজ | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:২৭ পিএম, ২৮ নভেম্বর ২০১৮ বুধবার

ফারুক নওয়াজ

ফারুক নওয়াজ

ছড়া তো ছন্দ আর অন্ত্যমিলের কারুকাজ। স্বরবৃত্ত ছন্দেই ছড়া প্রাণবন্ত। অতীতে কবিতা ছন্দ আর মিলে বাঁধা হতো। ফলে তখনকার ছড়া আর কবিতাকে বোধগতভাবে আলাদা করা যেত। রবীন্দ্রনাথ-নজরুল ও তাদের সমসাময়িক কবিরা ছন্দ-অন্ত্যমিলেই বাঁধতেন কবিতাকে। এরপর আধুনিক গদ্য ছাঁদের কবিতা এল। এই গদ্যকবিতা এসে মনে করছে শুধু সেই কবিতা। আর ছন্দোবদ্ধ কবিতা-ছড়া যা-ই লেখা হোক ছড়া।


তবে প্রকৃত ছড়া খুব কমই রচিত হচ্ছে এখন। এখন পদ্য আর ছন্দোবদ্ধ কবিতা লিখছেন তারাই; গদ্যকবিতা লেখেন না। অথচ সেগুলোকে গড়পড়তায় ছড়া হিসেবেই বিবেচনা করছে সবাই।


আমাদের বাংলাদেশের প্রকৃত ছড়ার নির্মাতাদের মধ্যে ফররুখ আহমদ, রোকনুজ্জামান খান, আতোয়ার রহমান, হাসান জান, আবদার রশীদ এখলাস উদ্দিন আহমদ, ফয়েজ আহমদ প্রমুখ পথিকৃৎ ছড়াকার।


আগে ছড়া বলতে বোঝাত শিশুদের জন্য রচিত ছন্দোময় রচনাকে। অবশ্য গভীরভাবে দেখলে সেখানে সমাজের একটা চিত্র খুঁজে পাওয়া যেত কোনো কোনোটায়। যেমন ‘ছেলে ঘুমোলো/ পাড়া জুড়োলো/ বর্গি এলো দেশে...’ কিংবা ‘রেলগাড়ি ঝমাঝম/ পা পিছলে আলুর দম...।’ এগুলো শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্যই রচিত।


ছড়া কালক্রমে শুধু ছোটদের জন্য থাকল না। হয়ে উঠল রাজনীতি আর সমাজজীবনের চিত্র। পাকিস্তান আমলের শেষের দিকে এ ধরনের ছড়ার চল লক্ষ করা যায় প্রচণ্ডভাবে। মোহাম্মদ মোস্তফা, দিলওয়ার, আবু সালেহ, সাজজাদ হোসেন খান, আখতার হুসেন, মাহমুদ উল্লাহ, আলতাফ আলী হাসু, শফিকুন নবী, দীপঙ্কর চক্রবর্তী, রশীদ সিনহা- এঁরা সবাই সার্থক ছড়ার কবি। অন্যদিকে রফিকুল হক ও সুকুমার বড়–য়া ছড়াকে শিশু-কিশোরদের শিল্পমাধ্যম হিসেবেই ভাবতে বেশি প্রয়াসী হন। যদিও প্রয়োজনে তাঁরা সমাজ উপযোগী ছড়াও কমবেশি লিখেছেন।


বলব, গত শতাব্দীর ৭-এর দশক অর্থাৎ স্বাধীনতা-উত্তরকাল আমাদের ছড়া সাহিত্যের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় সুবর্ণ অধ্যায়, এ সময় একঝাঁক তরতাজা নবীন-তরুণ ছড়ার কবির আবির্ভাব হলো। কি ছন্দ, কি অন্ত্যমিলের চমক, কি মজার অভিব্যক্তি- সবকিছুই এ সময়ের ছড়ায় ফুটে উঠতে থাকে। এ সময়ের তপংকর চক্রবর্তী, শাহাবুদ্দীন নাগরী, খালেক বিন জয়েনউদদীন, অজয় দাশগুপ্ত, তুষার কর, মাহমুদ হক, জ্যোতির্ময় মল্লিক, রোকেয়া খাতুন রুবী, আইউব সৈয়দ, আহমেদ জসিম, লুৎফর রহমান রিটন, সিরাজুল ফরিদ, আবু হাসান শাহরিয়ার, সৈয়দ আল ফারুক, ইকবাল বাবুল, আনওয়ারুল কবীর বুলু, আলমগীর বাবুল, নাসের মাহমুদ, আহসান মালেক, সৈয়দ নাজাত হোসেন, সুজন বড়ূয়া, উৎপলকান্তি বড়ূয়া, মাহাবুবা হক কুমকুম, সালেম সুলেরী, হাসানাত আমজাদ, জসীম মেহবুব, রহীম শাহা, আহমদ মতিউর রহমান, আসলাম সানী- এমন অসংখ্য নাম আছে। তবে এদের মধ্যে কয়েকজনকে আলাদা করে চেনা যায় স্বকীয়তার জন্য। আমি এই সময়েরই তাঁদের একজন সহযাত্রী।


অবশ্য এতগুলো নাম মনে এলেও, তাঁদের মধ্যে খালেক বিন জয়েনউদদীন, আহমেদ জসিম ও দেলওয়ার বিন রশিদ পুরোই লোকজ ধারার ছড়াকার। বলব, বাংলার চিরায়ত ধারার ছড়ার শিল্পী এঁরা। বাকিরা ভাবনা-বৈচিত্র্যে স্বকীয়, উজ্জ্বল। আমাদের পরের সময়টা অনেক দীর্ঘ। পুরো আট-নয়-শূন্য দশক পেরিয়ে আরও একটা দশক অতিক্রম করেছে। মানে চল্লিশ বছরেরও অধিক সময় অতীত হয়েছে। এর মধ্যে অসংখ্য ছড়া লিখিয়ের আবির্ভাব লক্ষ করা য়ায়। সেখানে আটের দশকটা বেশি উজ্জ্বল। এ সময়কার উজ্জ্বল কয়েকটি নাম- বাপী শাহরীয়ার, আমীরুল ইসলাম, রাশেদ রউফ, শফিক ইমতিয়াজ, স ম শামসুল আলম এমন হয়তো আরও তিনজনের নাম আসতে পারে। অবশ্য এ সময়ের আলম তালুকদারের ছড়া পত্রিকা খুলেই দেখি। এরপর আনজীর লিটন, তপন বাগচী, সারওয়ার উল ইসলাম, ওবায়দুল গনি চন্দন, মাহবুবুল আলম কবীর, সরদার আবুল হাসান, মিহির মুসাকী, মিহির কান্তি রাউৎ, কাজী কেয়া, আইরীন নিয়াজী মান্না, আরিফ বিল্লাহ মিঠু- এঁদের পরেও আরও কিছু নাম আসতে পারত। তবে তাঁরা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন বলে আলোচনায় অনিবার্য নন তাঁরা। এখন বর্তমানে যাঁরা লিখেছেন এবং আমি যাঁদের ছড়া বা পদ্য খুব দেখি, নিয়মিত পত্রপত্রিকায় সরব যাঁরা; তাঁদের মধ্যে জগলুল হায়দার, সৌরভ সাখাওয়াত, মানজুর মুহাম্মদ, মিতুল সাইফ, মামুন সারওয়ার, কাজী মোহিনী ইসলাম, মালেক মাহমুদ, সাজ্জাদ হোসেন, শাহিন আলম, মোহাম্মদ ইলইয়াছ, আরিফ নজরুল প্রমুখ। আরও অনেকেই লিখলেও সেসব নাম এই মুহূর্তে আমার মনে পড়ছে না। বিশেষ করে যাঁদের ছড়ার শুরুটা দেখে পড়তে ইচ্ছা হয়, তাঁদের নামই মনে থাকা স্বাভাবিক। তবে এতজনের মধ্যে সবাই যে ছড়া লেখেন, তা বলব না। অধিকাংশেরই হয় পদ্য। অথবা ছন্দোবদ্ধ কবিতা ধরনের রচনা। সময়ের ফেরে সেগুলোকে ছড়া বলেই ধরে নিতে হয়।


এই যে এত নাম গত চার-পাঁচ দশক থেকে ছড়ার ভুবনে লুটোপুটি খাচ্ছে, সেখান থেকে বাছলে কয়েকটি নামমাত্র স্বকীয় অহমে জেগে আছে। সেটা নিজস্ব ভাবনায়, বৈচিত্র্যে এবং নিরন্তর পাঠকের চোখে উপস্থিতির কারণে। এমন কটি নাম সুকুমার বড়ূয়া, আবু সালেহ, লুৎফর রহমান রিটন, আমীরুল ইসলাম, আনজীর লিটন। এঁরা বাংলাদেশের ছড়ার প্রাণস্পন্দন বলে আমি মনে করতে পারি।


আমি একসময় ছড়া লিখেছি অনেক। এখন ছড়া হয়ে ওঠে না। ১৮টা ছড়া-পদ্যের বই আমার। এর মধ্যে মাত্র পাঁচটি খাঁটি ছড়ার। বাকিটা কিশোর কবিতার বই। জীবনের প্রথম প্রকাশিত রচনাটি একটি পদ্য। ক্লাস থ্রিতে পড়ি যখন।


মোট বইসংখ্যা প্রায় দুই শ। তার মধ্যে ১৮-১৯টা ছড়া-কবিতা-পদ্যের বই। বাকিসব গদ্য। কিশোর উপন্যাস ২৪টা। গল্প-প্রবন্ধ, বড়দের কবিতা-গল্প-উপন্যাস এসব নিয়ে বাকি সব। অথচ আমার ছড়াটাই বোধ হয় পাঠকদের বেশি ছোঁয়।


ছড়ার ব্যাপারে আমি সিরিয়াস। আমার মতো করে লিখি একেবারেই আমার ভাবনাই সেখানে থাক। আমি উদ্ভট কিছু লিখি না। একটা কমিটমেন্ট থাকে। সেটাই আমার ভাবনা। অনর্থক কিছুই লিখতে আমি অভ্যস্ত নই।


আজব মানুষ, সোনার টুকরো ছেলে, রাজার ঘোড়া, কাক ডাকে কুহুকুহু- এগুলোর সঙ্গে আমার ছড়াসমগ্র (বর্ধিত সংস্করণ)টা পড়লেই বোঝা যাবে আমি কী লিখি।


ইদানীং আমি কিশোর কবিতাই বেশি লিখছি। আমার ছড়ার জগৎ আর কিশোর কবিতার ভুবন দুটি দুই মেরুর। অবশ্য সেখানেও আমাকেই শুধু পাওয়া যাবে। কখনোই অন্যের ভাবনায় আমি মিশে যাই না।