ঢাকা, শুক্রবার ২৯, মার্চ ২০২৪ ৫:৩৪:৫৫ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া ট্রেনে ঈদযাত্রা: ৭ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু গাজায় নিহত বেড়ে ৩২ হাজার ৪৯০ অ্যানেস্থেসিয়ার ওষুধ বদলানোর নির্দেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঈদ কেনাকাটায় ক্রেতা বাড়ছে ব্র্যান্ড শপে বাঁচানো গেল না সোনিয়াকেও, শেষ হয়ে গেল পুরো পরিবার

হলিউডের প্রথম মহাতারকা গ্রেটা গার্বো

অনু সরকার | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:০৫ এএম, ৯ অক্টোবর ২০১৯ বুধবার

হলিউডের প্রথম মহাতারকা গ্রেটা গার্বো

হলিউডের প্রথম মহাতারকা গ্রেটা গার্বো

গ্রেটা গার্বোকে বলা হয় বিউটি অব দ্য বিউটি। হলিউডের প্রথম দিকের জনপ্রিয় নায়িকা ছিলেন তিনি। গ্রেটা হঠাৎ করেই ১৯৪১ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে খ্যাতির শীর্ষে অবস্থানকালে চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নেন। তারপর জনজীবন থেকে সরে যান। নির্জন জীবনে একাকী বাস করা শুরু করেন। কেন তিনি এমন করেছিলেন তা আজও রহস্য।

তার অভিনীত শেষ ছবি ছিল ‘টু ফেসড ওম্যান’। বিখ্যাত এই নায়িকা ১৯৯০ সালের ১৫ এপ্রিল নিউইয়র্কের এক হাসপাতালে প্রায় ৮৫ বছর বয়সে মারা যান। তারপর প্রায় তিন দশক পার হলো। তবু কি চলচ্চিত্র দর্শকরা তার কথা ভুলতে পেরেছেন! ভুলতে না পারারই কথা।

আমেরিকায় মাঝেমধ্যে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে তার ছবি দেখানো হলে অনেকেই তা আগ্রহ নিয়ে দেখেন। আজ যারা বৃদ্ধ-বৃদ্ধা তারাও গ্রেটার প্রশংসা করেন। নির্বাক চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত সারা দুনিয়ার সিনেমা দর্শকদের স্বপ্নের দেবী ছিলেন এই গ্রেটা গার্বো।

তার জন্ম ১৯০৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সুইডেনের স্টকহোমে। গ্রেটার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে স্টকহোমে। তিনি ১৪ বছর বয়সে স্কুল ত্যাগ করেন। এরপর জীবনের প্রয়োজনে তিনি ক্ষৌরকার দোকান ছাড়াও টুপি, চুলের ফিতা ইত্যাদি বিক্রির দোকানে কিছুদিন কাজ করেন।

এ সময় হঠাৎ করেই একদিন সুইডিস ছবির পরিচালক এরিখ ফেসলারের চোখে ধরা পড়লেন গ্রেটা। পরিচালক এই মেয়েটিকে পছন্দ করেন। ফেসলারের বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পান তিনি।

তার বয়স যখন ১৭, তখন চিত্র পরিচালক মরিস স্টিলার তাকে হলিউডে নিয়ে যান। তিনি বলেছিলেন “গ্রেটা অপূর্ব সুন্দরী। ১০০ বছরে এমন একজন সুন্দরী মেলে। একদিন এ মেয়েটি পৃথিবীর সেরা অভিনেত্রী হবেই...।” ঠিকই গ্রেটা গার্বো একদিন পৃথিবীর সেরা অভিনেত্রী হয়েছিলেন।

১৯২৬ থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত ছিল তার উত্থানের সময়। এ সময়ে তার অভিনীত ছবিগুলো হলো দি টরেন্টো (১৯২৬), ফ্লেশ এট দি ডেভিল (১৯২৭), দি ডেভিন ও ম্যান (১৯২৮), অ্যানা ক্রিশটাই (১৯৩০), রোমান্স (১৯৩০), মাতাহারি (১৯৩১), গ্র্যান্ড হোটেল (১৯৩২), কুইন কৃষ্টিন (১৯৩৩), দি রেইনটেড ডেইলি (১৯৩৪), অ্যানা কারেনইনা (১৯৩৫), ক্যামিলি (১৯৩৭), কনকোয়েস্ট (১৯৩৭), নোনোভস্কায় (১৯৩৯) প্রভৃতি।

১৯২৭ সালে ‘ফ্লেশ অ্যান্ড ডেভিল’ ছবিতে গ্রেটা গার্বো জন গিলবার্টের সঙ্গে জুটি বেঁধে সারা বিশ্বের তরুণ দর্শকদের বুকে ঝড় তুলেছিলেন। এ ছবির ‘লিও আর ফেলিসিটা’ দান্তে বিয়েত্রিচ, রোমিও জুলিয়েট, অ্যান্টনি ক্লিওপেট্রার মতো স্মরণীয় হয়ে আছে।

এ ছবিতে অভিনয় করার সময় গ্রেটা গার্বো আর জন গিলবার্ট একে অপরের প্রেমে জড়িয়ে পড়লেন। গিলবার্ট গ্রেটার নিঃসঙ্গ জীবনে প্রেমের জোয়ার আনলেন। অনেক দিন রাতে গিলবার্টের টাওয়ার রোডের বাড়িতে গ্রেটা অতিথি হয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই ওদের সম্পর্কটা ভেঙে গেল।

গ্রেটার জীবনে আরো কয়েকজন পুরুষ এসেছিলেন, এদের মধ্যে মরিস স্টিলার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। গ্রেটাকে তিল তিল করে তৈরি করেছিলেন স্টিলার। তিনিই গ্রেটাকে হলিউডে নিয়ে এসেছিলেন। স্টিলার যখন শুনলেন, গ্রেটা গিলবার্টের সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করছেন, তখন তিনি লসএনঞ্জেলেস ছেড়ে  স্টকহোমে ফিরে যান। এর কিছুদিন পরই স্টিলার স্টকহোমের এক হাসপাতালে মারা যান। সম্ভবত এ কারণেই গ্রেটা গার্বো নীরবে বিদায় নিয়ে সঙ্গী করলেন নির্জনতাকে।

রিচার্ড শীল্ড, লিও কেন্ডি স্টোকে স্কি, সিসিন বীটনসহ অনেক খ্যাতনামা লোকদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তার। কিন্তু জীবনে কাউকে স্বামী হিসেবে বেছে নিতে পারেননি। বার বার প্রেমে জড়িয়েও গ্রেটা বিয়েতে রাজি হননি।

এ প্রসঙ্গে তিনি বরাবর একটা কথাই বলেছেন, ‘নিঃসঙ্গ জীবন যত কষ্টকর হোক না কেন, আমার কাছে তা অত্যন্ত মধুময়।’

গ্রেটা গার্বো গোটা বিশ্বের উল্লেখযোগ্য স্থান ঘুরে দেখেছিলেন সেই যৌবন থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত। কখনও তিনি স্থায়ীভাবে কোনো আবাসস্থল গড়েননি। কখনও সুইজারল্যান্ড, ইংল্যান্ড কখনও আমেরিকার নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন শহরে কিংবা ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাস করেছেন।

সারা বছর তিনি হোটেলে কিংবা ভাড়া করা বাড়িতে থেকেছেন। মারা যাওয়ার কয়েক বছর আগেও তিনি সকালে নাস্তা খাওয়ার আগে একটানা প্রায় এক ঘণ্টা ব্যায়াম ও জগিং করতেন। আর নিয়মিত দিনে কয়েক মাইল পথ হাঁটতেন।

শেষ জীবনে তিনি বহুবার বলেছেন : ‘অবচেতনভাবে আমি সর্বদা সুখের সন্ধান করেছি, কিন্তু সুখ কোথাও পাইনি। সুখি জীবন অন্তত আমার জন্যে নয়।’

হলিউডে তার ষোল বছরের চলচ্চিত্র জীবনে ১১ বার আবাসস্থল বদল করেছিলেন। হলিউড ছেড়ে যাওয়ার পর গ্রেটা চলে যান সুইডেনে। সেখানে সাত কামরার এক অ্যাপার্টমেন্টে বহুদিন বসবাস করেছিলেন। তখন কদাচিৎ ফ্ল্যাটের বাইরে পা রাখতেন। চলচ্চিত্র লাইব্রেরিতে কিংবা পুরনো বন্ধুদের বাড়িতে গিয়ে সময় কাটাতেন। গ্রীষ্মে চলে যেতেন সুইজারল্যান্ডের ক্লোসটার্সে নিজ বাড়িতে।

এ ভাবেই কেটে গেছে দশকের পর দশক; কিন্তু কখনই কোনো সাক্ষাৎকার দেননি কোনো সাংবাদিককে। অভিনয়েও আর কোনো দিন ফেরেননি। পত্রপত্রিকায় সাংবাদিকরা যা লিখেছেন তা বানিয়েই লিখতেন। গ্রেটা তা পড়ে নীরবে হাসতেন।

গ্রেটার আসল নাম ছিল গ্রেটা লভিসা গুস্টাফসন। সিনেমাতে অভিনয়ের পাশাপাশি একই সময় গ্রেটা কয়েকটি বিজ্ঞাপনেও মডেল হন। এমজিএম চিত্র প্রতিষ্ঠানের ‘দি টরেন্টো’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করে খ্যাতির শীর্ষে অবস্থান করেন এই অভিনেত্রী।

এ সময় হলিউডের পত্রপত্রিকায় লেখা হয় : ‘রুপালি পর্দার সর্বকালের শ্রেষ্ঠ দেবীদের অন্যতম নবাগতা গ্রেটা গার্বো অপূর্ব অভিনয় করেছেন।