ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫, এপ্রিল ২০২৪ ২১:১১:০৬ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস

হলুদ বনে বনে

আহমেদ মুশফিকা নাজনীন | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০৩:০৫ পিএম, ২৭ জুলাই ২০১৮ শুক্রবার

দিগন্ত জোড়া খোলা মাঠে ছোঁয়াছুয়ি, দাঁড়িয়াবান্ধা, হাডুডু খেলা। দুরন্ত দুপুরে পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কাটা। শীতের মিষ্টি সকালে শিশির ভেজানো সবুজ ঘাসে পা ভিজিয়ে হাঁটা আর হয়না। গাছে গাছে ফুটে থাকা পলাশ শিমুল কিংবা রাঙা কৃষচুড়া আর চোখে পড়েনা। নাগরিক ব্যস্ততায় পাথরমুখো মানুষ শুধুই ছুটছে আর ছুটছে।

 


ফুটপাতের ইটের ফাঁকে তারার মত ফুটে থাকা ছোট্ট সাদা ফুল শুধু অবাক হয়ে তা দেখে। শ্রীহীন ময়লা পড়া বড় বড় গাছের পাতারাও অবাক হয়ে দেখে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওরা। বড় দু:খ হয় ওদের। মানুষ আজ প্রকৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। বড় রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে মানুষের মন। বড় সংর্কীণ হয়ে যাচ্ছে ওরা।

 


লজ্জাবতী গাছের গোলাপী ছোট্ট ফুলগুলো লাজুক হেসে বসে থাকে। কখন মিষ্টি দুষ্ট শিশু তাকে ছোঁবে। ও নুয়ে পরলে খিলখিলিয়ে হেসে উঠবে ওরা। শিশুরা আসেনা। শিশুরা হাসেনা। ওরা চোখ মুখ শক্ত করে বড় বড় প্রাসাদে থাকে। ওরা দেবদারু শিরিষ, হিজল, তমাল চেনেনা। চেনেনা মাধবীলতা, রঙ্গন, কসমস কিংবা হাস্নাহেনা। ওরা জানেনা কিভাবে হাস্নাহেনা ফুলের গন্ধে উন্মাতাল হয় বাতাস। চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিতে হয় বুকভরে। ওরা জানেনা কলাবতী ফুল, দোলনচাঁপা কখন তার সমস্ত সৌন্দর্য নিয়ে ফোটে।

 


শিউলিতলায় কেউ আর যায়না আজকাল ফুল কুড়োতে। কাকডাকা ভোরে চুপি চুপি ভুতের ভয়ে গা ছমছম অনুভুতি কেউ আর বোধহয় পায়না। তপ্ত রোদে শুকিয়ে যায় শিউলি। ওর পাপড়িতে থাকা এক ফোটা অশ্রু কেউ দেখেনা। মানুষ তাহলে কি দেখে? ভাবে নদী। ভাবে আকাশ। শুভ্রতা ছড়িয়ে পেজা তুলোর মত মেঘগুলো উড়ে যেতে যেতে বলে, আমাকে দেখ। শরতের নীল আকাশ বলে, আমায় দেখ। বর্ষার কষ্টে বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ে মেঘ। বলে আমায় দেখ। মানুষ তখনও দৌড়চ্ছে। জীবনের তাগিদে।

 


আজ মিটিং, কাল প্রমোশন। আরেকটু স্বাচ্ছন্দ। মাথায় তার অনেক ভাবনা। জটিল সমীকরণ। রাজনীতি করে উপরের বসকে সরিয়ে দিতে পারলেই কেল্লা ফতে। যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। তেলবাজি গলাবাজি করলেই ভালো থাকা যায়। মিশে থাকা যায়। কি হবে আকাশ দেখে! প্রকৃতি দেখে! সুখ তো টাকায়। ছেলে মেয়ে পড়ে বড় স্কুলে। যা চায় তাই পায়। ছোট্ট লজ্জাবতী গাছে কিই’বা আছে! জানেনা মানুষ, মন মরে যাচ্ছে তার! একটা মোবাইলের জন্য খুন হচ্ছে শিশু। রাগ হলেই মেরে বালুতে পুতে রাখা হচ্ছে তাদের। ঘরেও সে নিরাপদ নয়। নাগরিক যন্ত্রনা আর প্রতিহিংসা তার গলা টিপে ধরছে। ভাই বিশ্বাস করছেনা ভাইকে। কটা টাকার জন্য বড় ভালবাসার বর মেরে ফেলছে মিষ্টি বউকে।

 

অসুস্থ্য সমাজের নোংরা প্রতিযোগীতা দেখে হাসফাঁস করে মাছেরা। নদীর বুকে অনেক লাশ। সবুজ শেওলা পরম মমতায় ঘিরে রাখে তাদের। বলে তারা মানুষ মানবিক হও। মানুষ শোনেনা। সময় কোথা তার সময় নষ্ট করবার। তাকে যে আরও আরও বহুদূর যেতে হবে। মানুষের নিষ্ঠুরতা দেখে বুক ফেটে যায় কার্পাস তুলোর। প্রজাপতি নীল হয়। মনখারাপ করে উড়ে বেড়ায় এখানে সেখানে। মৌমাছিরা চাক বাঁধেনা। ছোট্ট চড়ুই উড়ে বসে অট্টালিকার জানালার কার্নিসে। মানুষের নিষ্ঠুরতা দেখে তারও কান্না পায়। কাঠঠোকরা, বউ কথা কওয়ের মনখারাপ। সবুজ টিয়ে চুল বাঁধেনা। শিষ দেয়না দোয়েল। মুখ কালো করে বসে থাকে ভুতুমপেঁচা। সুন্দরবন থেকে চলে যেতে চায় রয়েল বেঙল টাইগার।

 

রুপালি ইলিশ খোঁজে নির্ভরতা। কালো জলে বড় কষ্ট হয় ওর। ভাটিয়ালী আর গায়না জেলে। রাখাল বাজায়না বাঁশী। ঘরে ঘরে বাজে উচ্চ স্বরে গান। প্রকৃতি শুধু ভাবে। সুখি মানুষ শুধু নাচে। সুখি মানুষ গায়। সুখি মানুষ সুখের ভান করে। গভীর রাতে জোনাকী শুধু দেখে ছুটতে থাকা মানুষগুলোর হাহাকার। বুক ফাটা বিদীর্ণ কান্না। নোনা জল। কি চায় মানুষ! জানেনা আকাশের চাঁদ। পরম মমতায় জোসনা ছড়িয়ে তবু ঘিরে রাখে তাকে। ঝকঝকে জোসনা গায়েমেখে দিনশেষে ক্লান্ত মানুষের মনে হয় সে বড় একা। ভুলে যেতে চায় সে হিংসা লোভ স্বার্থপরতা। রাজপ্রাসাদে নয়, সুখ খোঁজে সে ছোট্ট কুটিরে। কাঁদে সে। সে কান্না শোনে না কেউ। শোনে শুধু শুকতারা আর রাতের আকাশ।

 


ধীরে ধীরে ফোটে ভোরের আলো। ডাকে সে, ফিরে এসো আমার কাছে। ভালবাসো ফুল, পাখি, নদী, শিশুর হাসি। হাসো প্রাণখুলে। বন্ধুর দিকে বাড়াও বন্ধুত্বের হাত। কোনো মানুষ শোনে। কোনো মানুষ শোনেনা। সবুজ টিয়ে ডানা ঝাপটায়। ভাবে সে। মানুষ কেন এমন হয়ে গেল? উত্তর পায়না। ইটের নীচে চাপা পড়া সবুজ ঘাসগুলো শুধু আরও হলুদ হয়ে যায়। কবিরা কবিতা লিখতে ভুলে যায়। শিশুরা হাসি। তবু তারই ফাঁকে জারুল আর সোনালুর হলুদ বেগুনী ফুলগুলো বাতাসে দুলতে থাকে-কোনো এক পথিকের প্রতীক্ষায়। কোনো এক কবির জন্য! একটা কবিতার জন্য। একজন মানবিক মানুষের জন্য।