ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫, এপ্রিল ২০২৪ ১০:৪১:২২ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ফের কমল স্বর্ণের দাম মক্কা ও মদিনায় তুমুল বৃষ্টির শঙ্কা খালেদার গ্যাটকো মামলায় চার্জগঠনের শুনানি পেছাল

হারিয়ে যাচ্ছে পাখি : আইরীন নিয়াজী মান্না

আইরীন নিয়াজী মান্না | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:১৯ পিএম, ২ মার্চ ২০১৯ শনিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

পৃথিবীর বুক থেকে পাখিরা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষের নির্দয় ও নিষ্ঠুর অত্যাচারের শিকার হয়ে বাহারি ডানাওয়ালা সব রঙিন পাখি মৃত্যুকে বেছে নিচ্ছে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি থেকেও দিনে দিনে কমে যাচ্ছে আমাদের প্রিয় পাখিরা। এখন আমরা সহসাই পাখির গান শুনতে পাই না। নির্জন দুপুরে আমাদের ঘরের অঙিনায় বসে  জাতীয় পাখি দোয়েল খুব কমই মিষ্টি সুরে গান গেয়ে ওঠে। শ্যামা, ফিঙে বা ঘুঘুর কুহুতান শোনা সে আজ ভাগ্যের বিষয়। নগরায়নের সভ্যতা কেড়ে নিচ্ছে সব। দিনে দিনে গ্রাম উজাড় হয়ে যাচ্ছে। পাখিদের বসবাসের পরিবেশ ধ্বংস করে ফেলছি আমরা সবল হাতের ছোবলে।

বর্তমানে সারা পৃথিবীতে রয়েছে ৮৬ হাজার প্রজাতির পাখি। তার মধ্যে আমাদের বাংলাদেশেই আছে ৬৫০ প্রজাতির পাখি। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, এক সময় পাখির এ সংখ্যাটি ছিলো আরো অনেক বেশি। সময়ের বিবর্তনে বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পাখি শিকার, অবাধে গাছ কাটা, নদী-নালা, খাল-বিল ভরাট করে ফেলার কারণে পাখির এই সংখ্যা কমে যাচ্ছে ক্রমশ। বর্তমানে বাংলাদেশে যে ৬৫০ প্রজাতির পাখি রয়েছে তার মধ্যে ৪০০ প্রজাতির পাখি হচ্ছে আবাসিক বা আমাদের দেশীয় স্থায়ী পাখি। বাকি ২৫০ প্রজাতি অতিথি পাখি। ওরা প্রতি শীত মৌসুমে মেহমান হয়ে আসে আমাদের দেশে। বিংশ শতাব্দীতেই আমরা হারিয়েছি ১৮ প্রজাতির পাখি। দুঃখের বিষয় হলো আমাদের দেশ থেকে দিনে দিনে আবাসিক পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। একইভাবে কমে যাচ্ছে অতিথি পাখির সংখ্যাও। এই কিছুদিন আগের মতো এতো অতিথি পাখি এখন আর বাংলাদেশে আসে না। আশির দশকে বাংলাদেশে শীতের পাখি আসার সংখ্যা ছিলো  ৮০ হাজার। ১৯৯৬ সালে তা ছিলো ১০ হাজার আর বর্তমানে এ সংখ্যা এসে দাড়িয়েছে মাত্র ৫ থেকে ৬ শতে।

আমাদের নিজস্ব আবাসিক এমন কিছু বিরল প্রজাতি পাখি রয়েছে যা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নেই। টকিং বার্ড বা পাহাড়ি ময়না তেমনি একটি বিরল প্রজাতি। বাংলাদেশসহ ভারতবর্ষ ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে পাহাড়ি ময়না নেই। আমাদেরই অবহেলায় বর্তমানে এই মূল্যবান পাখিটিও হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশ থেকে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বন মোরগও এমনি একটি বিরল প্রজাতির পাখি। এ পাখি একান্তই আমাদের সম্পদ। কিন্তু এই বন মোরগ এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। পৃথিবীতে মাত্র তিন প্রজাতির বন মোরগ রয়েছে। এদের মধ্যে একটি প্রজাতি দক্ষিণ ভারতে, একটি উত্তর ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমারে এবং একটি শ্রীলঙ্কায় দেখা যায়। বন মোরগ ঐ দেশ দুটিতে থাকলেও আমাদের দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

প্রতিনিয়ত আমাদের পরিবেশ থেকে চিরদিনের মতো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রিয় পাখিরা। বড় হারগিলা পাখিটি এক সময় দেশে খুব দেখা যেতো। এখন এ পাখিটি আর একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না দেশের খাল-বিল বা বনাঞ্চলে। অতি পরিচিত রাজ শুকুনও বিলুপ্ত হয়ে গেছে পরিবেশ থেকে। বালিহাঁসের মতো সুদর্শন পাখিটিও এখন আর চোখে পড়ে না। ১৯৭৩ সালে শেষবারের মতো বালিহাঁস দেখা গিয়েছিলো আমাদের প্রকৃতিতে। ময়ূর সেই কবে হারিয়ে গেছে আমাদের পরিবেশ থেকে তা আমারা ভুলেই গেছি। এসব বিরল পাখির পাশাপাশি অতি চেনা পাখিগুলোও দ্রুত গতিতে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের আঙিনা থেকে। ঘুঘু, ফিঙে, শ্যামা, চন্দনা, ডাহুক, মাছরাঙা, গয়ার, লাল ও সাদা বক, মুনিয়া, কাঁদাখোচা, কুটুম পাখি আমাদের আঙিনা থেকে বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দ্রুত। আশঙ্কাজনক হারে দিনে দিনে এসব পাখির সংখ্যা কমে আসছে। আগামী দশ বছরের মধ্যে এ সকল পাখি এতো অধিক সংখ্যায় হয়তো আর দেখা যাবে না আমাদের চারপাশে।

পাখিদের বিভিন্ন প্রজাতির এভাবে হারিয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী কিন্তু আমরা নিজেরাই। পাখিদের বসবাস উপযোগী পরিবেশ নষ্ট করে আমরা তৈরি করছি বড় বড় অট্টালিকা। এ ছাড়াও পাখি শিকার, পাখি নিধন এবং রাস্তাঘাটে অবাধে পাখি বিক্রি পাখির সংখ্যা দিনে দিনে কমিয়ে দিচ্ছে। পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। পাখি সংরক্ষণের জন্য দেশে বন্য পাখি সংরক্ষণ আইন রয়েছে। এই আইনের বিধি ১৯৫৭-তে বলা হয়েছে, পাখি শিকার, গুলি করে মারা বা ধরা সারা বছরের জন্য বা বিশেষ সময়ের জন্য নিষেধ। এই আইন ভঙ্গ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে,  আমাদের সমাজের সভ্য মানুষেরা কেউ-ই এই আইন মেনে চলে না।


আইরীন নিয়াজী মান্না: আহবায়ক, বাংলাদেশ বার্ড ওয়াচার সোসাইটি।