ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮, মার্চ ২০২৪ ১৭:৪৭:০৬ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া ট্রেনে ঈদযাত্রা: ৭ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু গাজায় নিহত বেড়ে ৩২ হাজার ৪৯০ অ্যানেস্থেসিয়ার ওষুধ বদলানোর নির্দেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঈদ কেনাকাটায় ক্রেতা বাড়ছে ব্র্যান্ড শপে বাঁচানো গেল না সোনিয়াকেও, শেষ হয়ে গেল পুরো পরিবার

ছোট গল্প : শশী

শাহরিনা হক আদর | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৭:৫২ পিএম, ২৭ মে ২০২০ বুধবার

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্র আবীর। স্নাতকের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। বেশ চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে সে। কানে হেডফোন দিয়ে গান শোনার সময় কখনোই কোনো হুঁশ থাকে না। শুধু তাই নয়, গান শুনতে শুনতে বারান্দায় গানের তালে নাচানাচিও করে।

একদিন মধ্যরাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছেলেটি। হঠাৎ বিপরীত পাশের ভবনের বারান্দায় চোখ পড়ল। লক্ষ্য করল একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে। অন্ধকার হওয়ায় স্পষ্ট বোঝা না গেলেও মনে হলো মেয়েটি তার সমবয়সী।

কৌতূহলবশত মেয়েটিকে দেখার চেষ্টা করে আবীর। কিন্তু মেয়েটি তো কোনো নড়াচড়াই করছে না। তাই খুব একটা মনোযোগ না দিয়েই রুমে ফিরে আসে। 

এরপর প্রায়ই বিভিন্ন সময় মেয়েটিকে দেখত আবীর। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে তার দেখা মিলত বেশি। সন্ধ্যা নামলেই মেয়েটি বারান্দায় কখনো দাঁড়িয়ে, কখনো বসে থাকত। শত চেষ্টা করেও মেয়েটির মুখ দেখা হচ্ছিল না আবীরের। 

কৌতূহল মেটাতে খোঁজ নিয়ে ছেলেটি জানল মেয়েটি ওই বাসায় তারা নতুন। একটু একটু করে আরও জানলাম মেয়েটা আমার কিছুটা বড়। নাম শশী। কোথাও পড়াশুনা করে দূরে। ছুটিতে বাসায় আসে। 

একদিন আকাশের অবস্থা ভালো না। তুমুল ঝড়-বৃষ্টি। শশী বারান্দায়। বিদ্যুৎ চমকানোর আলোতে এই প্রথম মেয়েটির মুখ দেখে আবীর। রোগা আকৃতির মুখ, পরিপাটি করে চুল বাঁধা। তবে মেয়েটি কাঁদছে। চোখের পানি গড়িয়ে তার গলা ভিজে গেছে। মানে সে দীর্ঘক্ষণ ধরে খুব কেঁদেছে। 

তাহলে কী বারান্দায় কান্নার জন্যই আসত মেয়েটি? আবীরের কৌতূহল যেন আরও বেড়ে গেল। সিদ্ধান্ত নিলো সে কথা বলবে মেয়েটির সঙ্গে। কিন্তু কীভাবে বলা বলবে তা ভাবতেই পার হলো দুই সপ্তাহ। এর মধ্যে মেয়েটির আরও দেখা পেল না আবীর। 

একদিন সকালে এলাকার মানুষের কোলাহলে ঘুম ভাঙে আবীরের। শুনে পায় শশী মারা গেছে। শেষরাতে নিজেকে শেষ করার কঠিন কাজটি করে সে। 

এ খবর শুনে আবীরের মতো চঞ্চল ছেলেটি নিস্তেজ হয়ে যায়। শুধু একটি ভাবনাই তার মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল— কথা বলা হলো না। পরবর্তীতে মেয়েটির পরিবারের মাধ্যমে জানা গেল, মেয়েটির পছন্দের কেউ ছিল। তার জন্যই দিনের পরে দিন কেঁদেছে সে।

কিন্তু কি এমন কষ্ট ছিল যার জন্য পৃথিবী ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সেই উত্তর আর মিলল না।

সাত বছর আগেই সে বাসা ছেড়ে দেয় আবীর। এর মধ্যে শশীর ফেসবুক আইডিটা খুঁজে পায়। নির্মল চেহারার মেয়ে। ডানপাশে সিঁথি করে বাঁধা চুল, একহাতে একটা চুড়ি। নিভৃত বলে কাউকে সে ভালোবাসত। কোনো কারণে হয়তো সম্পর্ক টেকেনি। 

এত বছর পরও আবীরের চোখে ভাসে বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপালক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা শশীর মুখ।

লেখক : শাহরিনা হক আদর, সাংবাদিক।