ঢাকা, শুক্রবার ১৯, এপ্রিল ২০২৪ ১৮:২৫:৫৭ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

রিকশা চালিয়ে সন্তানদের মুখে ভাত তুলে দেন যে ‘মা’

অনলাইন ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৪:৪০ পিএম, ২ আগস্ট ২০১৯ শুক্রবার

ছবি : সংগৃহিত

ছবি : সংগৃহিত

রিকশা চালিয়েই সন্তানদের মুখে ডাল-ভাত তুলে দেন তিনি। স্বামী ছেড়ে চলে গেছেন, সে অনেক দিন। হঠাৎ জীবনের এই পরিবর্তনে তিন সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়ে যান মোসাম্মাৎ জেসমিন।

গৃহবধূ জেসমিন কোনওদিন উপার্জন করেননি। ভেবেই দিশেহারা, কী করে তিন সন্তানের মুখে দু’বেলা ‍দু মুঠো ডাল-ভাত তুলে দেবেন। তাদের বাঁচিয়ে রাখার উপায় কি!

এই অবস্থায় নিম্নবিত্ত পরিবারের আর পাঁচজন নারী যা করেন, তাই করলেন জেসমিন। লোকের বাড়ি কাজ নিলেন। কিন্তু দেখলেন তাতে সমস্যার সুরাহা হল না। সংসারে অনটন থেকেই গেল। তার উপর, জেসমিন বাচ্চাদের দেখভালের সময়ও পাচ্ছিলেন না।

লোকের বাড়ি বাড়ি ঝিয়ের কাজ ছেড়ে জেসমিন শুরু করলেন কারখানার কাজ। কিন্তু সেখানেও মজুরি কম। তার উপর শরীরের প্রচণ্ড যন্ত্রণা হতে থাকল। ফলে কারখানার শ্রমিক হয়ে থাকাও বেশিদিন হলো না।

এবার কি তবে ভিক্ষা? জেসমিনের মন থেকে সায় দিল না। আল্লাহ একজোড়া হাত আর একজোড়া পা দিয়েছেন। তার পরেও কেন বিনা পরিশ্রমে উপার্জন করবেন? ভাবলেন, এমন পথে যাবেন যেখানে মেয়েরা সাধারণত পা রাখেন না।

প্রতিবেশীর একটি রিকশা নিয়ে শুরু হলো প্রথম চেষ্টা। প্রথমে দুঃসাধ্য মনে হলেও কয়েকদিনের মধ্যে রিকশঅ চালানোটা আয়ত্তে এসে গেল। জেসমিন ঠিক করলেন তিনি রিকশা চালিয়েই উপার্জন করবেন।

কার্যত অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখিয়েছেন জেসমিন। চট্টগ্রামের রাস্তায় রিকশা চালান তিনি। সম্ভবত দেশের অন্যতম নারী রিকশাচালক তিনি। রিকশার প্যাডলই তার এবং সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিয়েছে। তিন সন্তানের স্কুলের বেতনের জোগান দিয়েছে।

জেসমিনের কাছে লড়াই শুধু অসম্ভব নয়। ছিল অত্যন্ত অসম। প্রথম দিকে উড়ে এসেছে অসংখ্য টিপ্পনি। ‘এটা মেয়েদের কাজ নয়’, ‘এই কাজ ইসলামবিরোধী’, শুনতে হয়েছে এরকম বক্রোক্তি। কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন জেসমিন।

প্রথম দিকে যাত্রী পেতেন না তিনি। কিন্তু হাল ছাড়তে নারাজ জেসমিন। সংগ্রামের মূল্য পেয়েছেন তিনি। এখন যাত্রী পেতে সমস্যা হয় না। পুরনো যাত্রীরা তো আছেনই। নতুনরা প্রথমে একটু থমকে যান ঠিকই। কিন্তু শেষ অবধি জেসমিনই তাদের পৌঁছে দেন গন্তব্যে।

অমানুষিক পরিশ্রম হয় জেসমিনের। কিন্তু নিজের জীবনে খুশি জেসমিন। রিকশা চালিয়ে প্রতি মাসে তার উপার্জন হয় ১৫ হাজার টাকার বেশি।

মাথায় হেলমেট, পরনে ছাপা শাড়ি। রিক্সা চালানোর পরেও হাসি মিলিয়ে যায় না জেসমিনের মুখ থেকে। এভাবেই তিনি খুঁজে পেয়েছেন বেঁচে থাকার আনন্দ।