ঢাকা, মঙ্গলবার ১৬, ডিসেম্বর ২০২৫ ২:১২:২২ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

শারদীয় দুর্গাপূজা: চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

অনু সরকার

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:২৯ পিএম, ৩ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার

প্রতীমা শিল্পীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন

প্রতীমা শিল্পীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন

প্রকৃতিতে ধুপের গন্ধ, ফুটেছে পারিজাত। কাশ ফুল আর পেজা তুলোর মত শরতের মেঘ জানান দিচ্ছে চলে এসেছে শারদ উৎসব, শারদীয় দুর্গাপূজা। শুরু হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।

এরই মধ্যে দেবীদুর্গাকে বরণ করে নিতে প্রস্তুতি শুরু করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। পূজার দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে সাজসজ্জার কাজ। ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শিল্পীরা। এবার দেবীদুর্গা আসছেন দৌলায় (পালকি) চড়ে, আর ফিরবেন ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে।

রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ মঠ ও মন্দির, রমনা মন্দির, শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, বাংলাবাজার, কলাবাগান, মিরপুর, বনানী, ডেমরা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পুরোদমে চলছে পূজা অনুষ্ঠানের শেষ প্রস্তুতি। চারদিকে এখন আনন্দ আয়োজন সম্পন্ন করার তাড়া। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রতিমা ও প্যান্ডেল নির্মাণ, মনোমুগ্ধকর আলোকসজ্জার কাজ এগিয়ে চলছে পুরোদমে। প্রতিমা নির্মাণে মৃৎশিল্পীরা পার করছেন ব্যস্ত সময়। প্রতিমায় দিচ্ছেন তুলির শেষ আঁচড়।

পূজা উপলক্ষে চলছে কেনাকাটা ও শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বরাবরের মতো এবারও শারদীয় দুর্গাপূজায় উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু হবে জাতীয় মন্দির ঢাকেশ্বরী।

সরজমিন ঢাকেশ্বরী মন্দির ঘুরে দেখা গেছে পূজা আয়োজনে আয়োজকদের তুমুল ব্যস্ততা। প্রতিমা ও প্যান্ডেল নির্মাণ, আলোকসজ্জার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

আয়োজকরা জানান, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে। বরাবরের মতো এবারেও ঢাকেশ্বরীতে মানুষের ঢল নামবে বলে প্রত্যাশা করছেন আয়োজকরা। সারা দেশে পূজা অনুষ্ঠানের পরিস্থিতি মনিটর করার জন্য এখানে থাকবে মনিটরিং সেল। থাকবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল রায় বলেন, পূজার প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে নিরাপত্তার বিষয়ে যেসব আলোচনা হয়েছে তাতে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন করতে পারবো বলে আমরা আশাবাদী।

রাজধানীর পুরান ঢাকায় বরাবরই দুর্গাপূজার আয়োজনে থাকে ভিন্নতা। এবারেও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাবাজার, শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজারসহ পুরান ঢাকার বেশকিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পূজা উদযাপনের সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন।

প্রতিমা শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছরের এই একটি সময় তারা তুমুল ব্যস্ততায় কাটান। মাসখানেক ধরেই তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। শাঁখারীবাজারে প্রতিমা নির্মাণ করছেন নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দের সুশীল নন্দী।

তিনি বলেন, প্রতিমায় এখন রঙের কাজ চলছে। আয়োজকদের তাড়া আছে। দু’একদিনের মধ্যে প্রতিমার সাজসজ্জার কাজ শেষ করবো। আর ষষ্ঠীর দিন ব্রাহ্মণরা প্রতিমার চক্ষুদান করবেন। এরপরই দেবী দুর্গার উদ্দেশ্যে পূজা অর্চনা ও পুষ্পাঞ্জলি দেবেন ভক্তরা।

এবারের পূজায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমা নির্মাণে প্রতিমা শিল্পীরা ৪০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক নিচ্ছেন বলে জানান সুশীল নন্দী।

রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীতে এবারও মহাসমারোহে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছে বনানী-গুলশান পূজা কমিটি। বনানী খেলার মাঠে ইতিমধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

প্রকৃত অর্থে শুভ মহালয়া উদযাপনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। পাঁচ দিনের এই উৎসবের প্রাক্কালে গত শনিবার ২৮ সেপ্টেম্বর মহালয়ায় সনাতন সম্প্রদায় চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে শুরু হলো দুর্গাপূজার ক্ষণ গণনা। অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠায় মর্ত্যে আসবেন দেবী দুর্গা।

২৮ সেপ্টেম্বর শনিবার মহালয়া উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের মন্দির ও পূজামণ্ডপগুলোয় ধর্মীয় নানা আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয়েছে। চণ্ডীপাঠ ছাড়াও মঙ্গলঘট স্থাপন, চণ্ডীপূজা এবং ঢাক-কাঁসা ও শঙ্খ বাজিয়ে দেবীকে মর্ত্যে আহ্বান জানানো হয়। ভক্তিমূলক সঙ্গীত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় আলোচনাসভা ছিল দিনের আনুষ্ঠানিকতার অংশ। অনেক ভক্তই তাদের মৃত আত্মীয়পরিজন ও পূর্বপুরুষদের আত্মার সদগতি প্রার্থনা করে তর্পণ করেন।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মাধ্যমে শুরু হয়েছে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। ৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় হবে দেবী দুর্গার বোধন। ৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় দুর্গাদেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মাধ্যমে পূজার মূল আচার-অনুষ্ঠান শুরু হবে।

৫ অক্টোবর সকালে নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপনের পর শুরু হবে মহাসপ্তমী পূজা। ৬ অক্টোবর মহাঅষ্টমী পূজা, সেদিন হবে সন্ধিপূজা। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে হবে কুমারী পূজা।

৭ অক্টোবর সকাল বিহিত পূজার মাধ্যমে হবে মহানবমী পূজা। ৮ অক্টোবর সকালে দর্পন বিসর্জনের পর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে সনাতন সম্প্রদায়ের পাঁচ দিনের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব। সনাতন বিশ্বাস ও পঞ্জিকা মতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার পালকিতে (দোলা) চড়ে স্বর্গলোক থেকে মর্ত্যলোকে আসবেন। দেবী বিদায়ও নেবেন ঘোটকে চড়ে।

পূজার আয়োজন নিয়ে গত সোমবার রাজধানী ঢাকার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ বছর সারা দেশে ৩১ হাজার ৩৯৮ টি মণ্ডপে দুর্গা পূজা হবে, যা গতবারের চেয়ে ৪৮৩ টি বেশি। রাজধানীতে ২৩৬ টিসহ ঢাকা জেলায় ৭ হাজার ২৭১টি মণ্ডপে এবার পূজা হবে।

এ ছাড়া চট্টগ্রামে ৪ হাজার ৪৫৬ টি, সিলেটে ২ হাজার ৫৪৫ টি, খুলনায় ৪ হাজার ৯৩৬ টি, রাজশাহীতে ৩ হাজার ৫১২ টি, রংপুরে ৫ হাজার ৩০৫ টি, বরিশালে ১ হাজার ৭৪১ টি, ময়মনসিংহে ১ হাজার ৬৩২ টি মণ্ডপে দুর্গা পূজা এবার অনুষ্ঠিত হবে।