ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ২:০৭:১০ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

খাদ্য-সঙ্গীর খোঁজে বাঘিনীর দীর্ঘ পথ পাড়ি

বিবিসি বাংলা অনলাইন

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:৫৭ পিএম, ২ ডিসেম্বর ২০১৯ সোমবার

বাঘটি ভারতের দুটো রাজ্যের ভেতরে চলাফেরা করেছে।

বাঘটি ভারতের দুটো রাজ্যের ভেতরে চলাফেরা করেছে।

ভারতে একটি বাঘ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। বলা হচ্ছে, এই নারী বাঘটি পাঁচ মাস সময় ধরে ১৩০০ কিলোমিটার বা ৮০৭ মাইল ভ্রমণ করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্ভবত শিকার, নিজের জন্যে একটি এলাকা কিম্বা একজন সঙ্গীর খোঁজে আড়াই বছর বয়সী এই বাঘটি এতো দূর হেঁটে গেছে।

এই বন্যপ্রাণীটির গলায় একটি রেডিও কলার বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। গত জুন মাসে পশ্চিমাঞ্চলীয় মহারাষ্ট্রের একটি অভয়ারণ্য থেকে এটি তার যাত্রা শুরু করে।

রেডিও কলার থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যাচ্ছে, বাঘটি বহু মাঠ ঘাট, জমি জমা, খাল বিল পার হয়ে ও মহাসড়ক ধরে প্রতিবেশী একটি রাজ্যে গিয়ে পৌঁছেছে।

এর মধ্যে মাত্র একবার তার মানুষের সাথে সংঘাত হয়েছে। এতে একজন আহত হয়েছেন।

ওই লোকটি একটি গ্রুপের সাথে ছিল যারা একটি ঘন জঙ্গলের ঝোপের ভেতরে ঢুকে পড়েছিল যেখানে ওই বাঘটি বিশ্রাম নিচ্ছিল।

এই নারী বাঘটির নাম সি ওয়ান। মহারাষ্ট্রের টিপেশ্বর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে তার জন্ম হয়েছিল। সেখানে ১০টির মতো বাঘ আছে বলে ধারণা করা হয়।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাঘটির গলায় একটি রেডিও কলার বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তার পর সে এই বনের ভেতরেই ঘুরে বেড়াতো। কিন্তু বর্ষাকাল আসার পর "উপযোগী" একটি জায়গার খোঁজে সেখান থেকে সে বের হয়ে যায়।

বলা হচ্ছে, বাঘটি জুন মাসের শেষের দিকে অভয়ারণ্য ছেড়ে চলে যায়। এর পর থেকে মহারাষ্ট্রেরই সাতটি জেলার ভেতর দিয়ে হেঁটে হেঁটে সে পার্শ্ববর্তী তেলেঙ্গানা রাজ্যে গিয়ে পৌঁছায়।

বন্যপ্রাণী বিষয়ক কর্মকর্তারা বলছেন, বাঘটি কোন সোজা পথে চলাচল করেনি। সামনে গেছে, আবার পেছনের দিকে হেঁটে চলে গেছে অন্যদিকে।

জিপিএস স্যাটেলাইটের সাহায্যে এর গতিবিধির ওপর নজর রাখা হয়েছিল। প্রত্যেক ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাঘটির অবস্থান সম্পর্কে তথ্য নেওয়া হয়েছে।

তাতে দেখা গেছে বাঘটি গত ন' মাসে ৫,০০০ জায়গায় গিয়েছিল।

ভারতে বন্যপ্রাণী ইন্সটিটিউটের একজন গবেষক ড. বিলাল হাবিব বলেন,"বাঘটি তার নিজের জন্য একটি বসতি খুঁজছিলো, অথবা খুঁজছিলো খাদ্য কিম্বা একজন সঙ্গী।"

"ভারতে বাঘের জন্যে যেসব এলাকা আছে সেগুলোতে নতুন বাঘের কোন জায়গা নেই। ফলে বসবাসের জন্যে তাদের নতুন এলাকা খুঁজে বের করতে হচ্ছে।"

বলা হচ্ছে, দিনের বেলায় বাঘটি বেশিরভাগ সময় লুকিয়েছিল, ভ্রমণ করেছে রাতের বেলায়। বন্য শূকর আর গবাদি পশু শিকার করেই তাকে খাদ্য জোগাড় করতে হয়েছে।

"লোকজন জানতেও পারেনি যে তাদের বাড়ির পেছনেই হয়তো একটি বাঘ ঘুরে বেড়াচ্ছে," তিনি বলেন।

বন্যপ্রাণী কর্মকর্তারা বলছেন, অবস্থা এমন হয়েছে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে এখন বাঘটিকে ধরে হয়তো কাছেরই একটি জঙ্গলে ছেড়ে দিতে হবে।

তাদের আরো একটি আশঙ্কা হচ্ছে, খুব শীঘ্রই হয়তো তারা এই বাঘের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলতে পারে। কারণ ইতোমধ্যেই রেডিও কলারের ব্যাটারি ৮০ শতাংশ ফুরিয়ে গেছে।

ভারতে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে সম্প্রতি বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। তবে তাদের বসতি আগের তুলনায় সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রত্যেক বাঘের জন্যে এমন একটি এলাকা প্রয়োজন যেখানে তার শিকার করার মতো ৫০০টি প্রাণী থাকবে। যাতে তার কখনো খাদ্যের অভাব না হয়।