ঢাকা, শুক্রবার ১৯, এপ্রিল ২০২৪ ১৯:২৯:১৫ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

ডিআরইউ’র নারী সম্পাদক: শুধুই অলংকার নাকি অত্যাবশ্যক!

আলফা আরজু

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:৪৬ পিএম, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সোমবার

আলফা আরজু

আলফা আরজু

আজ থেকে প্রায় এক যুগ আগে আমি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) নারীবিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছিলাম। তার আগের বছর নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে আমি ডিআরইউর এক নম্বর কার্যনির্বাহী সদস্য হয়েছিলাম। পরপর এই দুই বছর আমি সরাসরি কমিটিতে ছিলাম। আর বাকি সময়গুলোতে ডিআরইউর অন্য সদস্যদের মতো আমিও সুযোগ পেলেই ডিআরইউর বাগানে, ক্যান্টিনে, সামনে রাস্তার পাশের রকের ওপর বসে সময় কাটাতাম। সহজ ভাষায় বললে- আড্ডা দিতাম।

ঢাকা শহরের সাংবাদিকদের জন্য ডিআরইউ দ্বিতীয় বাড়ি। সেখানকার সব সদস্য একেকজন পরিবারের অংশ হয়ে ওঠেন। সুখে-দু:খে, আমরা সবাই সবার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। নাহ, আর্থিক কোনো বিষয় বলিনি, কিন্তু মানসিকভাবে আমরা একজন আরেকজনকে সাপোর্ট দিতাম ও দেই।  

যাই হোক, ডিআরইউতে প্রথম যেবার নারী বিষয়ক সম্পাদক পদের সৃষ্টি হলো। আমি সেই পদের পরীক্ষামূলক প্রার্থী হলাম। প্রথম হিসেবে অভিজ্ঞতা খুব একটা ভালো ছিল না। কিন্তু যেহেতু ডিআরইউ একটা পরিবারের নাম, তাই যার যা বলার ও করার আমরা সামনাসামনিই করতাম।

নির্বাচনের দিনই আমার এক সাংবাদিক বন্ধু মুখের ওপর বলে দিল। 'এইসব নারীবিষয়ক পদ আমার পছন্দ নয়।' এখন সেই বন্ধুর একটা দারুণ নারীবিষয়ক সাংবাদিক সংগঠন আছে। দারুণ দারুণ সব কাজ করে নারী সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও  পেশাগত মান উন্নয়নের জন্য।      

সেটা দেখে আমার শুধু মনে হয়- আসলেই বাংলাদেশে আমরা চাই বা না চাই- এখনও প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে নারীদের ভালো-মন্দ দেখার জন্য কিংবা নারীদের মূলধারার নেতৃত্বে আনার জন্য সংরক্ষিত আসনের যেমন দরকার আছে, তেমনি নারীবিষয়ক মন্ত্রীরও দরকার আছে। সব প্রতিষ্ঠানে নারীবিষয়ক উপদেষ্টা থেকে শুরু করে নারীবিষয়ক সম্পাদকের প্রয়োজনীয়তা এখনও আছে।              

যাই হোক, সেই সময় আবার অন্য নারী সদস্যরা খুশিই হয়েছিলেন। আমরা বেশ পাকাপোক্তভাবে নিজেদের (নারীদের) বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে নিজেদের মধ্যে সখ্য বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত ডিআরইউতে আড্ডা দেওয়া শুরু করেছিলাম।

তারপর মান্না আপা, লুৎফা আপা,  সুমী আপা, দীনার আপা, পারুল ও সবাই এ গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত হয়েছেন  ও নারী সদস্যদের স্বার্থ ও পেশাগত মান উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন। যদিও আমি দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে বাস করি- তবুও বুঝতে কষ্ট হয় না।

আমাদের সাংবাদিকতা পেশায়- কারোর পথ চলায় সহজ নয়, বিশেষ করে নারীদের তো নয়ই। নারীদের এখানে নিয়মিত পেশাগত চ্যালেঞ্জ, অফিসের বহুমুখী জেন্ডারবিষয়ক বৈষম্যের শিকার হওয়া, সঙ্গে পরিবারের অতিরিক্ত দায়িত্বের চাপ তো আছেই। সে জন্য, সবসময় আমার মনে হয়- এই পদের যেমন তেমন কোনাে কাজ নেই (!!- কারোর কারোর মতে)। তেমনি যদি সপ্তাহে কিংবা মাসে একদিন আমরা নিজেরা একটা চায়ের আড্ডায় বসি, সেই আড্ডায় ইনফরমালি বয়োজ্যেষ্ঠ ও বয়:কনিষ্ঠ নারী সাংবাদিকদের কথা বলা, অভিজ্ঞতা শেয়ার করা, কর্মক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলে-সেটা নিয়ে মন খারাপ হলে তা নিয়ে কথা বলে নিজের স্ট্রেসগুলো নির্ভার করাটাও বিরাট একটা সফলতা নিয়ে আসবে। এগুলো নিজেদের সংগঠিত ও পেশাগত মান ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার খুব ইনফরমাল উপায়; কিন্তু খুব ফলপ্রসূ।

আমরা সেই সময় নিজেরা সময় পেলেই এক সঙ্গে আড্ডা দিতাম। সেই সব আড্ডায় অফিসের সমস্যা থেকে শুরু করে পারিবারিক সমস্যা নিয়ে কথা বলতাম। আমাদের অনেকের মধ্যে- দুর্দান্ত বন্ধু গড়ে উঠেছিল। পেশার জায়গায় এ ধরনের নিষ্পাপ বন্ধু হওয়া খুব জরুরি।

যাক, নারীবিষয়ক সম্পাদকের যে যে বিষয়গুলো নিয়ে এখনও কাজের সুযোগ আছে ও ভবিষ্যতেও থাকবে- তা হচ্ছে ডিআরইউতে একটা নারী সাংবাদিকদের কর্নার (বহুবিধ প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য) করা যেতে পারে। ধরেন, ব্রেস্টফিডিং, মা সচিবালয়ে বা অন্য অ্যাসাইনমেন্টে যাওয়ার সময় প্রয়োজনে সন্তানকে একজন সহকারীসহ সেই কর্নারে রেখে যাবেন। সময় সময় এসে ব্রেস্টফিড করে যাবেন। আবার সেই কর্নারে অন্য অল্প বয়সী সন্তানের মা ও বাবারা সন্তানদের রেখে যাবেন। একজন নারী কর্মী সেই কর্নারের দায়িত্বে থাকবেন। কর্নারে একটা টিভি দিয়ে দেবেন। বাচ্চাদের জন্য বই থাকবে। রং পেনসিল, খাতা এসব রাখুন, ছোট ছোট কিছু বিছানা দিয়ে দিন। এটা চাইল্ড কেয়ার হিসেবে কাজ করবে।

ডিআরইউর নেতারা (নারী সম্পাদককে উদ্যোগ নিতে হবে, বাকিরা সহযোগিতা করবেন) আজ থেকে যদি সব মিডিয়া অফিসে আবেদন করতে থাকেন, প্রতিটি হাউসে চাইল্ড কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ঢাকা ট্রিবিউন দৃষ্টান্ত হতে পারে। যেখানে চিফ রিপোর্টার তার সন্তানকে নিয়ে অফিস করতে পারেন। অন্য হাউসগুলোতেও এই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

ছোট্ট একটা জিম করা যেতে পারে। তবে, আর্থিক ও নানা সাংগঠনিক জটিলতার জন্য এ ধরনের কাজগুলো কঠিন হতে পারে। তাই, সবাই মিলে সপ্তাহে অথবা মাসে একদিন করে একসাথে হওয়ার উদ্যোগটা অব্যাহত রাখুন। নিজেদের অনেক শক্তিশালী মনে হবে। এসব আড্ডায় চেষ্টা করুন দুই- একজন বয়োজ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার। এতে, সেই সাংবাদিকদের অভিজ্ঞতা শুনুন ও অন্যদের সঙ্গে নির্মল কিছু সময় কাটানোর ব্যবস্থা করুন। পেশাগত সমস্যাগুলো নিয়ে একসঙ্গে কথা বলুন।

আলফা আরজু : প্রবাসী সাংবাদিক, সাবেক নারী বিষয়ক সম্পাদক, ডিআরইউ।

(লেখাটি ডিআরইউ প্রকাশিত ২০১৯ সালের কণ্ঠস্বর থেকে নেওয়া।)