ঢাকা, শনিবার ২৭, এপ্রিল ২০২৪ ০:৩৯:২৯ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

দুই বোন, বয়স ৯৮ ও ১০১, ৪৭ বছর পর দেখা

বিবিসি বাংলা অনলাইন

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:০৪ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সোমবার

বুন সেন (বামে) এবং বুন চিয়া (ডানে), এই দুই বোনের সর্বশেষ দেখা হয়েছিল ১৯৭৩ সালে।

বুন সেন (বামে) এবং বুন চিয়া (ডানে), এই দুই বোনের সর্বশেষ দেখা হয়েছিল ১৯৭৩ সালে।

তারা ক্যাম্বোডিয়ান এই দুই বোন। যাদের বয়স এখন ৯৮ বছর এবং ১০১ বছর- তারা দুজনই ভেবেছিল তাদের বোন হয়তো, ১৯৭০-এর দশকে খেমার রুজের সন্ত্রাসবাদী শাসনামলে মারা গেছে। এবার ৪৭ বছর পরে প্রথমবারের মতো একত্রিত হলেন এই দুই বোন।

খেমার রুজ হল কমিউনিস্ট পার্টি অব ক্যাম্পুচিয়ার সশস্ত্র শাখা। কমিউনিস্টরা ক্যাম্বোডিয়াকে ক্যাম্পুচিয়া নাম দিয়েছিল। ১৯৭৫-১৯৭৯ সাল পর্যন্ত টানা চার বছর কম্বোডিয়ায় ক্ষমতায় থাকাকালীন বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছিল তারা।

এই দুই বোনের এক ভাইও রয়েছে। যার বয়স এখন ৯২ বছর। ৯৮ বছর বছর বয়সী বোন, বুন সেনের সেই ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়।

স্থানীয় এক এনজিও জানায়, বুন সেনকে তার ৯২ বছর বয়সী ভাইয়ের সাথে পুনরায় দেখা করানো হয়। বুন সেন ভেবেছিলেন তার এই ভাইটিও হয়তো আর বেঁচে নেই।

দুই বোনের সর্বশেষ দেখা হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। অর্থাৎ পোল পটের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্টরা ক্যাম্বোডিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দুই বছর আগে।

খেমার রুজের শাসনামলে প্রায় ২০ লাখ মানুষ মারা গেছে বলে ধারণা করা হয়। এই সময়কালে অনেক পরিবার ভেঙে পড়েছিল। তখন প্রায়শই শিশুদের তাদের মা-বাবার কাছ থেকে আলাদা করে দেয়া হতো। কারণ খেমার রুজ সরকার চেয়েছিল দেশটির উপর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ রাখতে।

পোল পট শাসনামলে বুন সেন তার স্বামীকে হারিয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালে খেমার রুজের পতন হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বুন সেন রাজধানী নম পেনের কুখ্যাত স্টাং মিঞ্চে ময়লার ভাগাড়ের কাছে বসবাস শুরু করেন।

দীর্ঘ দিন তিনি ময়লা ঘেঁটে সময় কাটিয়েছেন। সেখান তিনি পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিষপত্র খুঁজে বের করে বিক্রি করতেন। যেন ওই পয়সা দিয়ে আশেপাশের দরিদ্র শিশুদের দেখভাল করা যায়।

তিনি সবসময় তার নিজ গ্রামে যাওয়ার স্বপ্নের কথা বলতেন। তার গ্রামের বাড়ি ক্যামপং চাম প্রদেশে, রাজধানী নম পেন থেকে যার দূরত্ব প্রায় ৯০ মাইল পূর্বে। তবে এতো বয়স হয়ে যাওয়া, হাটতে চলতে না পারাসহ অসংখ্য কারণের তার জন্য যেকোনো যাত্রা খুব কঠিন হয়ে পড়েছিল।

খেমার রুজ কারা ছিল?

নৃশংস খেমার রুজ ক্ষমতায় ছিল ১৯৭৫-১৯৭৯ সাল পর্যন্ত। তাদের শাসনামলে প্রায় বিশ লাখ মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল। পরে ভিয়েতনামের সামরিক বাহিনীর অভিযানে তাদের পতন হয়।

পোল পটের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্যাম্বোডিয়াকে মধ্যযুগে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল, শহর থেকে কয়েক লাখ মানুষকে গ্রামাঞ্চলে এনে সমবায় খামারে কাজ করতে বাধ্য করেছিল।

তাদের মূল লক্ষ্য ছিল শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী, বুদ্ধিজীবী সমাজ, এবং ক্যাম্বোডিয়ায় থাকা ভিয়েতনামের উপজাতি এবং চ্যাম মুসলমানরা।

খেমার রুজের জীবিত নেতাদের বিচার শুরু করতে একটি ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে জাতিসংঘ। ২০০৯ সাল থেকে যার কাজ শুরু হয়।

কেবল তিন জন সাবেক খেমার রুজকে এ পর্যন্ত শাস্তি দেওয়া হয়েছে - তারা হলেন, কাইং গুয়েক এভ যিনি কুখ্যাত তুওল স্লেং কারাগার পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন, শাসনামলের রাষ্ট্রপ্রধান খিয়ু সাম্ফান এবং পোল পটের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড নূন চিয়া।

ক্যাম্বোডিয়ান চিলড্রেন্স ফান্ড নামের একটি স্থানীয় এনজিও, ২০০৪ সাল থেকে বুন সেনকে সহায়তা করে আসছে - তারপর তারা বুন সেনকে তার গ্রামের বাড়িতে ঘুরিয়ে আনার ব্যবস্থা শুরু করে।

তখনই তারা আবিষ্কার করে যে বুন সেনের বড় বোন এবং ছোট ভাই এখনও বেঁচে আছেন এবং তাদের গ্রামের বাড়িতেই বাস করছেন। প্রায় অর্ধ শতাব্দী পরে, বুন সেন গত সপ্তাহে তার বড় বোন বুন চিয়া এবং ছোট ভাইয়ের সাথে পুনরায় মিলিত হন।

"আমি অনেক দিন আগে আমার গ্রাম ছেড়ে চলে এসেছিলাম এবং কখনই ফিরে যাইনি I আমি সবসময় ভেবেছিলাম আমার বোন এবং ভাইরা মারা গেছে," বুন সেন বলেন।

"এই বয়সে এসেও আমি আমার বড় বোনকে ধরতে পারছি, এটার অর্থ অপরিসীম। আর আমার ছোট ভাইটি যখন প্রথম আমার হাত ছুঁয়ে দেখে, তখনই আমি কাঁদতে শুরু করি।"

বড় বোন বুন চিয়ার স্বামীকেও খেমার রুজরা হত্যা করা করেছিল, এবং এতে তিনি ১২টি সন্তান নিয়ে বিধবা হয়ে পড়েন। তিনি ভেবেছিলেন তাঁর স্বামীর মতো তাঁর ছোট বোনও হয়তো মারা গিয়েছে।

"পোল পটের হাতে আমাদের ১৩ জন আত্মীয় মারা যান এবং আমরা ভেবেছিলাম তাদের মধ্যে বুন সেনও ছিল। এত দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেছে," তিনি বলেছিলেন।

এখন এই বোনেরা তাদের জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া সময়গুলো পূরণ করে নেয়ার চেষ্টা করছেন। এই সপ্তাহে তারা একসঙ্গে রাজধানী সফরে গিয়েছেন।

"আমরা তাকে নিয়ে অনেক কথা বলেছি," বুন চিয়া বলেন। "তবে আমি কখনই ভাবিনি যে আমরা আবার তার দেখা পাবো।"