দ্রুতগতিতে গলে যাচ্ছে অ্যান্টার্কটিকার বরফ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১২:১২ পিএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বুধবার
ছবি: ইন্টারনেট
বরফের দেশ হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ মেরুর মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা। তবে ওই অঞ্চলটির সেই শীতলতা দিন দিন কমছে। বৈশ্বিক উষ্ণতার সঙ্গে টেক্কা দিয়ে বাড়ছে পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকার তাপমাত্রা। ইতোমধ্যেই অ্যান্টার্কটিকার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সাম্প্রতিক তাপপ্রবাহে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকার বরফ গলে পানি হয়ে গেছে। আর এর জন্য সময় লেগেছে মাত্র নয়দিন। গত ৪ ফেব্র“য়ারি থেকে ১৩ ফেব্র“য়ারির মধ্যে মহাদেশটির এলাকা জুড়ে থাকা বিপুল পরিমাণ বরফ দ্রুত গতিতে গলেছে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা-নাসার স্যাটেলাইট ছবিতে ধরা পড়েছে এ দৃশ্য। নাসার তথ্যমতে, মাত্র নয়দিনের ব্যবধানে ঈগল আইল্যান্ডের অন্তত ২০ শতাংশ বরফ গলে গেছে, যার উচ্চতা ছিল অন্তত চার ইঞ্চি। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এত বিপুল পরিমাণ বরফ গলার কারণ চলতি মাসের শুরুর দিকের অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ।
নাসার স্যাটেলাইট ল্যান্ডস্যাট ৮-এর ধারণ করা ছবিতে দেখা যায়, এই মাসের শুরুতে
ওই দ্বীপটি বরফে সাদা হয়ে ছিলো। কিন্তু এখনকার ছবিতে দেখা যায় সাদার পরিবর্তে নীল রঙের পানি ও ধূসর মাটি দেখা গেছে সেখানে। ম্যাসাচুসেটসের নিকোলস কলেজের জিওলজিস্ট মৌরী পেলটো নাসার অবজারভেটরিকে জানিয়েছেন, ‘অ্যান্টর্কটিকায় এত তাড়াতাড়ি বরফ গলে যাওয়ার দৃশ্য এর আগে কখনও দেখা যায়নি। এ ভাবে বরফ গলে যাওয়ার দৃশ্য আলাস্কা ও গ্রিনল্যান্ডে দেখা গেলেও, অ্যান্টর্কটিকায় এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটলো।
পরিবেশ বিজ্ঞানী জেভিয়ার ফেটউইসের মতে, এই গ্রীষ্মে সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে এই তাপপ্রবাহ। বিজ্ঞানীদের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে গরমের কারণেই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
ব্রাজিলিয়ান গবেষক কার্লোস শায়েফার জানান, গত ৯ ফেব্র“য়ারি অ্যান্টার্কটিকার উত্তর প্রান্তে সেমোর দ্বীপে প্রথমবারের মতো তাপমাত্রার পারদ উঠেছিল ২০ দশমিক ৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। অ্যান্টার্কটিকার ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গিয়েছে। তবে এটি খুব অল্প সময়ের জন্য ছিলো। এরআগে, গত ৬ ফেব্র“য়ারি অ্যান্টার্কটিকায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। ওই সপ্তাহের গড় তাপমাত্রাও ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে উষ্ণ।
অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত বিজ্ঞানিরা। তারা বলছেন, এখানে গত ৫০ বছরে তাপমাত্রা গড়ে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে বেড়েছে। একারণে গলছে বরফ। অস্বাভাবিক হারে অ্যান্টার্কটিকায় বরফ গলতে শুরু করায় বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও। এত দ্রুতগতিতে বরফ গলে যাওয়ায় বেড়ে যাবে বিভিন্ন সমুদ্রের পানি। সমুদ্রের উপকূলে বসতি স্থাপনকারী অনেক অঞ্চল সমুদ্রের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে। এতে বড় ধরণের হুমকিতে পড়তে যাচ্ছে বিশ্ববাসী।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়ে জানালেন, তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে উপকূলীয় দেশগুলোর বিস্তীর্ণ অঞ্চল তলিয়ে বিপন্ন হতে পারে মানুষ ও পরিবেশ। তবে, গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করেছেন যে, দ্রুত বরফ গলার এমন ঘটনা প্রথমবারের মতো ঘটেনি। প্রায় এক লাখ ২৯ বছর আগে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছিলো।
-জেডসি