ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫, এপ্রিল ২০২৪ ১৬:০৪:২০ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

ফিরে দেখা : নারীর লড়াই এবং নারী দিবস

সালমা জোহরা

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:২৬ এএম, ৮ মার্চ ২০২০ রবিবার

ফিরে দেখা : নারীর লড়াই এবং নারী দিবস

ফিরে দেখা : নারীর লড়াই এবং নারী দিবস

এ বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চীরকল্যাণকর/অর্ধক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। কবি কাজী নজুরুল ইসলাম নারীর অবদানের কথা এভাবেই বলেছেন। বিশ্ব সৃষ্টির আদি পর্ব থেকে নারী ঘরে-বাইরে সর্বত্র আবদান রেখে চলেছেন নিরলসভাবে। কিন্তু নারীর নেই কাজের স্বীকৃতি নেই। আর তাইতো স্বীকৃতি আদায়ে নারীকে নামতে হলো রাজপথে।

যখন ইউরোপ-আমেরিকাজুড়ে শিল্প বিপ্লব ঘটে তখন নতুন নতুন আবিষ্কারে বিশ্বজুড়ে এক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ওই সময় চোখে পড়ে শিল্প-কারখানায় নারী ও পুরুষের মধ্যে মতভেদ। নারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সামাজিক,পারিবারিক ও অর্থনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ দেশেই পালন করা হয়। ৮ মার্চ নারীদের সফলতার স্বীকৃতি দেয়া হয়। কোন জাতিগত, ভাষাগত, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক গত দিক থেকে নয়। নারীদের নিজস্ব অর্জনের দিক বিবেচনা করে এই দিনের স্বীকৃতি দেয়া হয়। সর্বপ্রথম বিংশ শতাব্দীতে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে নারী শ্রমিকদের কার্যকলাপের ভিত্তিতে এই দিনের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উন্নত ও অনুন্নত দেশের নারীদের জন্য একটি নতুন বিশ্ব মাত্রা অধিকৃত করেছে। বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘের নারী সম্মেলন দ্বারা, আন্তর্জাতিক নারী আন্দোলন, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস (আদি নাম আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস) প্রতি বছর ৮ মার্চ তারিখে পালিত হয়। সারা বিশ্বব্যাপী নারীরা একটি প্রধান উপলক্ষ্য হিসেবে এই দিবস উদযাপন করে থাকেন। বিশ্বের এক এক প্রান্তে নারীদিবস উদযাপনের প্রধান লক্ষ্য এক এক ধরনের। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা উদযাপনের মুখ্য বিষয় হয়। আবার কোথাও নারীদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পায়।

ইতিহাস বলছে, এই দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হলো। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ; জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয়, ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে।
দিবসটি পালনে এগিয়েন আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ সাল থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। বাংলাদেশেও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার লাভের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। তারপর ১৯৭৫ সালে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর থেকে সারা পৃথিবীজুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অঙ্গিকার নিয়ে।