ঢাকা, রবিবার ০৫, মে ২০২৪ ২০:৪০:০৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

হাসপাতালে গিয়ে সেবা না পাওয়া দুঃখজনক: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৩২ পিএম, ৭ এপ্রিল ২০২০ মঙ্গলবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯)রোগী সন্দেহে রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা সত্যিই খুব দুঃখজনক।

মঙ্গলবার (০৭ এপ্রিল) সকালে গণভবন থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

গণভবন থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাতের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের একজন ছাত্র সে যেকোনোভাবে রোগে আক্রান্ত হয় কিন্তু সে যখন হাসপাতালে চিকিৎসা করতে যায়, এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরে বেড়ায় কোনো ডাক্তার পায়নি চিকিৎসা করতে। এটা সত্যিই খুব কষ্টকর, সত্যিই খুব দুঃখজনক যে ডাক্তাররা কেন চিকিৎসা করবে না।

তবে আমি বলব যে আমাদের প্রত্যেকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমাদের সকলেই খুব আন্তরিকভাবে কাজ করেছে, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে ১২৩ জন করোনা রোগী পাওয়া গেছে। মৃত্যুর সংখ্যা ১২। বেশিরভাগই বয়স্ক। অধিকাংশই যারা মারা গেছেন তাদের ডায়বেটিকস ছিল, হার্টের সমস্যা ছিল, শারীরিকভাবে দুর্বল ছিল তারা।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিয়েছেন এবং এখনো দিয়ে যাচ্ছেন সেই সব চিকিৎসক, সেবিকা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সরকার বিশেষভাবে পুরস্কৃত করবে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবিলায় আমাদের সরকারি চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, যারা করোনা সেবায় অবদান রেখেছেন তাদের সকলকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা দেখেছি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরাই এগিয়ে এসেছে। তারা কোনো গাফলতি করেননি। নিজেদের ঝুঁকি নিয়েই তারা কাজ করেছে। এজন্য তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তারা নিজের জীবন বাজি রেখে করোনায় আক্রান্তদের সেবা প্রদান করেছে। আমি মনে করি, যে আপনারা একটা বিরাট অবদান রেখে গেছেন।

করোনার বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ ঘোষণা হয়েছে, সেই যুদ্ধের সম্মুখভাগে থেকে চিকিৎসকরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি এ কাজে যারা সব সময় নিয়োজিত ছিলেন তাদেরকে শুধু খালিমুখে ধন্যবাদ দিবো না। আমি তাদেরকে কিছু পুরস্কৃতও করতে চাই। যেসব সরকারি চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ যারা হাসপাতালগুলো কাজ করছে তাদের তালিকা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উৎসাহের সাথে সাথে আমি বিশেষ একটা সম্মানিও দিতে চাই। তাই তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছি। তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য, যারা প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারীদের জন্য বিশেষ ইন্সুরেন্সের ব্যবস্থা করে দেবো। সেটা আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতিমধ্যে আমার অর্থ সচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে। কাজেই আমরা তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করছি।

চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্তদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দায়িত্বপালনকারী যে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয় তাদের চিকিৎসার সব ব্যবস্থা সরকার নেবে এবং তাদের জন্য স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা আমরা করে দেবো। যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের জন্য দশ লাখ টাকার একটা স্বাস্থ্যবিমা পদমর্যাদা অনুযায়ী করে দেবো।’

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তারা যদি খোদা না করুক মৃত্যুবরণ করেন তাহলে তাদের জন্য এই ভাতা পাঁচগুণ বৃদ্ধি করে দেবো। মনে রাখতে হবে, এটা তাদের জন্যই করবো। করোনা ভাইরাস শুরুর পর থেকে যারা কাজ করেছেন। অর্থাৎ জানুয়ারি মাস থেকে শুরু। মার্চ মাস থেকে ব্যাপকভাবে শুরু। এই মার্চ মাস থেকে যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন এই প্রণোদনাটুকু তাদের জন্য।

তবে যারা সুরক্ষা সামগ্রীর অভাবের অযুহাতে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে বিরত ছিল তাদের উদ্দেশেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, যারা কাজ করেন নাই, নিজেদের সুরক্ষা করার জন্য পালিয়ে গেছেন, যেখানে রোগীরা দ্বারে দ্বারে ঘুরে চিকিৎসা পাননি, সাধারণ রোগীরা চিকিৎসা পায়নি। তাদের জন্য এই প্রণোদনা নয়। তারা এটা পাবেন না।

তিনি বলেন, কেউ যদি এখন মনে করেন, শর্ত দেন যে আমাদের দিলে আমরা আসবো, আমি বলবো সেটা দিতে হলে আগামীতে কীভাবে কাজ করেন, তাদের পর্যবেক্ষণে রাখবো, আগামী তিনমাস তাদের কাজ দেখবো সেখানে যদি কেউ সত্যিই মানুষের সেবা দেয়, তার পরে তাদের কথা আমরা চিন্তা করবো। কিন্তু শর্ত দিয়ে কাউকে আমি কাজে আনবো না।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাদের মধ্যে এই মানবতাবোধটুকু নেই, তাদের প্রণোদনা দিয়ে আনার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না। যদি দুর্দিন আছে প্রয়োজনে বাইরে থেকে আমরা ডাক্তার নিয়ে আসবো। বাইরে থেকে নার্স নিয়ে আসবো। কিন্তু এই ধরনের দুর্বল মানসিকতার লোক দিয়ে আমাদের কাজ হবে না। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। কাজেই তারা যতই মিটিং করুক আর শর্ত দিক, এই শর্তে আমার কিছু আসে যায় না। বরং ভবিষ্যতে তারা ডাক্তারি করতে পারবে কিনা সেটাই চিন্তার বিষয়।

ডাক্তার আমাদের প্রয়োজন আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু এই মানসিকতা থাকবে কেন? মানবতাবোধ হারাবে কেন?’

রোগী দেখার জন্য নিজের সুরক্ষা গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন রোগী কেন দ্বারে দ্বারে ঘুরে কেন মারা যাবে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কেন মারা যাবে? সে যেসব হাসপাতালে গিয়েছে, সেখানে কোন কোন ডাক্তারের দায়িত্ব ছিল আমি তাদের নাম জানতে চাই। কারণ ডাক্তারি করার মতো বা চাকরি করার মতো সক্ষমতা নাই। তাদের চাকরি থেকে বের করে দেওয়া উচিত।’

তিনি বলেন, ‘আমরা জানি এটা একটা আতঙ্ক ছড়িয়েছে সারা বিশ্বে। সবাই ভয় করেন। সবাই সুরক্ষিত থাকবেন, মানি আমি। তারপরও একজন ডাক্তারের দায়িত্ব থাকে। তাদের সুরক্ষার জন্য যা যা দরকার তা তো আমরা দিয়ে যাচ্ছি। আরও করবো্ কোনো কার্পণ্য করছি না।’
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের রোগী সন্দেহে রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতাল চিকিৎসা না দেয়ায় সোমবার খাগড়াছড়িতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রসঙ্গত, আইইআর এর শিক্ষার্থী সুমন চাকমা রাত সাড়ে ৮টায় মারা যান। বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম শিক্ষার্থী পরিষদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, সুমন ফুসফুসের জটিলতায় ভুগছিল এবং বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছে।১১ মার্চ অসুস্থ বোধ করায় তার বন্ধু তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল এবং জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, তিনি কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত সন্দেহে চার হাসপাতালের সবগুলোই তাকে চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

পরে ১৮ মার্চ বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম শিক্ষার্থী পরিষদের সদস্য সুমনকে ঢাকা থেকে গ্রামে নেয়া হয়।ঢাবি প্রক্টর একেএম গোলাম রাব্বানী জানান, সুমন ক্যান্সারে ভুগছিল এবং সোমবার রাতে মারা গেছে।

-জেডসি