ঢাকা, শুক্রবার ২৬, এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৫১:৩৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

নিত্যপণ্যের ঘাটতি নেই, তবুও বাজারে অস্থিরতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:২৫ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০২০ শুক্রবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে প্রভাবে একদিকে পরিবহন সঙ্কট, অন্যদিকে পুরো রমজানের সব পণ্য একসাথে কেনার প্রবণতায় অস্থির হয়ে উঠেছে বাজারব্যবস্থা।পর্যাপ্ত আমদানি হয়েছে, গুদামভর্তি পণ্য মজুদ আছে অথচ বাজারে এসবের তীব্র সঙ্কট। ফলে বিক্রেতারা পকেট কাটছেন ইচ্ছামতো। কোনো কারণ ছাড়াই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, চিনি, মসলা, খেজুর প্রভৃতি রমজানে প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। যদিও টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি অব্যাহত আছে। চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানও। ৯৭ টাকার আদা ৩৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রির অরাজক চিত্র ফুটে উঠেছে স্বয়ং মোবাইল কোর্টের অভিযানেই।

শুক্রবার রাজধানীর খিলগাঁও বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। দেশে যে করোনা নামক কোনো রোগ আছে তার লেশমাত্রও বোঝার উপায় নেই, বাজারে লোকসমাগম দেখে। অবশ্য করোনার পাশাপাশি সামনে রোজা তাই বাধ্য হয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে বাজারে আসতে হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া একবেলা বাজার হওয়ায় পড়েছে আরো বাড়তি চাপ। দোকানিদের সাথে কথা বলার জো নেই। দোকানগুলোতে নেই স্বাভাবিক সময়ের এক-তৃতীয়াংশ মালামালও। বেশির ভাগ পণ্যই শেষ। অনেকগুলো গুদামেও নেই। বেশির ভাগ ক্রেতাই দরদামের প্রশ্নে না গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো কিনছেন। তবে একসাথে অনেক পণ্য এবং অধিক পরিমাণে কেনায় সময় লাগছে বেশি, হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রেতারা।

বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনার কারণে মাসখানেক ধরে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল, ডাল, তেল প্রভৃতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। মাছ, ডিম, সবজি ছাড়া সব জিনিসেরই দাম চড়া। গরুর গোশতের দাম আগেই বেড়ে গেছে। নতুন করে দাম বেড়েছে আদা, রসুন, ছোলা ও পেঁয়াজের। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ৩০ টাকার পেঁয়াজ উঠেছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। ১২০ টাকা থেকে বেড়ে ১৬০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে রসুন। আর আদার দাম বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি। ১৩০ টাকা থেকে এক লাফে ৩০০ থেকে ৩৬০ টাকা। এ জন্য সরবরাহ ঘাটতির পাশাপাশি অজুহাত হিসেবে তুলে আনা হয়েছে রমজানের বিষয়টি।

এদিকে, আসন্ন রমজান ও চলমান করোনার প্রাদুর্ভাবকে পুঁজি করে মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীরা আদা নিয়ে হরিলুট করছেন। আমদানি করা আদার এলসি মূল্য সর্বোচ্চ মূল্য ৯৭ টাকা। ওই আদা আমদানিকারকরা ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি বাজারে বিক্রি করছেন ২৩৫ থেকে ২৪০ টাকা; যা খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকার ওপরে। ৯৭ টাকার আদা ভোক্তারা কিনছেন ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকায়। রাজধানীর শ্যামবাজারে অভিযান চালিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। অভিযান পরিচালনাকারী অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় উপপরিচালক (উপসচিব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, বেশ কিছু দিন ধরে রাজধানীতে আদার দাম বাড়ছে। বিষয়টি তদারকি করতে পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে আদা আমদানিকারকরা শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণার প্রমাণ মেলে।

এছাড়া, মিল পর্যায়ে ভালো মানের নাজিরশাইল ও মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৫১ থেকে ৫২ টাকা কেজি। মাঝারি মানের চাল কাজল লতা, পাইজাম ও আটাশ ধানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা আর মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা দরে। অথচ টিসিবির তথ্য অনুযায়ী রাজধানীর খুচরা বাজারে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৮ টাকা। মাঝারি মানের চালের কেজি বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৫৮ টাকা আর মোটা চাল বিক্রি হয় ৪২ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। কুষ্টিয়া, শেরপুর, নওগাঁ ও দিনাজপুরের চাল ব্যবসায়ী, চাতাল মালিকদের দামের সঙ্গে ঢাকার চালের দামে ব্যবধান কেজিপ্রতি ১২ টাকা থেকে ১৮ টাকা।

মিল মালিকরা বলছেন, ঢাকার আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়েছেন। যদিও ঢাকার ব্যবসায়ীদের দাবি, গাড়ি ভাড়া বেশি বলে চালের দামও বেড়ে গেছে।

এ দিকে খুচরা বাজারে মসুর ডালের দাম আরেক দফা বেড়ে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। মোটা দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা কেজিদরে। এক সপ্তাহ আগে এ দাম ছিল আরো অন্তত ২০ টাকা কম। ব্যবসায়ীরা জানান, সরবরাহ ঘাটতির পাশাপাশি রমজান মাস কাছাকাছি চলে আসায় ছোলা ও অ্যাংকর ডালের দাম বেড়েছে। সেই সাথে বেড়েছে মুগ ডালের দামও। বাজার ও মানভেদে অ্যাংকর ডালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি। আর ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মুগ ডালের দাম বেড়ে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা হয়েছে।

দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে জানিয়ে নিত্যপণ্যের চাহিদা ও মজুদসংক্রান্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে সারা বছরে ১৮ লাখ ৬০ হাজার টন ভোজ্যতেলের চাহিদার বিপরীতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ১৬ লাখ ৮৪ হাজার টন। এ সময় দেশে উৎপাদন হয়েছে দুই লাখ ১৭ হাজার টন। অর্থাৎ দেশে মোট ভোজ্যতেলের মজুদ রয়েছে ১৯ লাখ ১ হাজার টন; যা চাহিদার চেয়ে বেশি। গত অর্থবছরে ভোজ্যতেলের মোট আমদানির পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৩০ হাজার টন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিনির বার্ষিক চাহিদা ১৭ লাখ ৩০ হাজার টন। স্থানীয়ভাবে চিনির উৎপাদন হয়েছে ৬৮ হাজার টন। এছাড়া ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ১১ লাখ ১ হাজার টন। গত মার্চ মাসে আরো বেশ কিছু চিনি আমদানি হয়েছে। গত অর্থবছরের মোট আমদানির পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৩৩ হাজার টন। তাই এখন পর্যন্ত চিনির আমদানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ বছর পর্যাপ্ত পরিমাণ চিনি আমদানি হয়েছে এবং রমজানের জন্য পর্যাপ্ত মজুদ আছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ৩৫ লাখ টন। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পরিমাণ ২৩ লাখ টন। প্রতি বছর ১০ থেকে ১২ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়। এ বছর ২৫ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া পেঁয়াজ আমদানির ওপর ভ্যাট মওকুফ করা হয়েছে। তাই প্রচুর পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। সুতরাং রমজান মাসে পেঁয়াজের কোনো সঙ্কট হবে না। এ ছাড়া স্থানীয় বাজার থেকে ভোজ্যতেল কিনে তার ওপর ভর্তুকি দিয়ে ন্যায্যমূল্যে ওই তেল বিক্রি হচ্ছে। রমজান উপলক্ষে টিসিবির ন্যায্যমূল্যের তেল, চিনি, ছোলা, মসুর ডাল ও পেঁয়াজ সারা দেশের ৪০০ স্থানে বিক্রি শুরু হয়েছে। ৩৫০ জন ডিলারের মাধ্যমে এ বিক্রি কার্যক্রম চলছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ও সরবরাহ ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সূত্রে জানা যায়, রমজানে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা রোধে এবার আগে থেকেই ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। অন্য বছরের তুলনায় এবার কয়েক গুণ বেশি পণ্য সংগ্রহ করে সংস্থাটি। পাশাপাশি বেসরকারি খাতের আমদানিকারকদের নানা ধরনের সুবিধা দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি উৎসাহিত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

-জেডসি