স্বপ্নপূরণের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে অসহায় মেঘলা
মনির হোসেন জীবন
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১১:১৬ পিএম, ১১ জুন ২০২০ বৃহস্পতিবার
বাবার সাথে মেঘলা
এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়ে স্বপ্নের সিঁড়িতে পা রেখেছে মেহেরপুরের মেধাবী মেয়ে মেঘলা। কিন্তু মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে অক্ষম বাবা মাইকেল মন্ডল। তাই মেঘলার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত এই দরিদ্র পরিবারটি। নুন আনতে পান্তা ফুরায় যে পরিবারের, সেখানে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাবে কে?
মুজিবনগর উপজেলার রতনপুর খ্রিস্টান পল্লীর শারিরিক প্রতিবন্ধী মাইকেল মন্ডলের এক ছেলে ও এক মেয়ে। তার সংসার ও দুই ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চলে চায়ের দোকানের আয় দিয়ে।
এবার এসএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়া মেঘলার স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ার। নিজেকে গড়ে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মেঘলা। দুই ভাইবোনের মধ্যে মেঘলা ছোট। এবছর সে এসএসসি পরীক্ষায় মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। এর আগে একই স্কুল থেকে সে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৯ পায়। এ ছাড়া পিইসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৫ পায়। তার একমাত্র ভাই ডিপ্লোমা পড়ছে।
এ বছর মেঘলা মেহেরপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হতে চায়। কলেজের হোস্টেলে থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল রেজাল্টও করতে চায়। বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পড়তে দু’টি বছর প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা গুনতে হবে মা-বাবাকে।
এই ভেবেও রাতে ঘুমাতে পারছেন না তার গৃহিণী মা বন্যা মন্ডল। শারিরিক প্রতিবন্ধী স্বামী মাইকেল মন্ডলের আয়ের একমাত্র পথ চা বিক্রি। তার আয়ে সংসার চালাতে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তাই তিনি কি করে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাবেন।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে মেঘলাকে সাথে নিয়ে বাবা মাইকেল মন্ডল যান মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উসমান গনির কাছে।
ওসমান গনি বলেন, ‘মেঘলার ভবিষ্যৎ চিন্তা করে আমার অফিসে বাবা মেয়ে একসাথে এসেছিলেন। তারা কেঁদে ফেলেন। দোয়া করি মেঘলা মন্ডলের স্বপ্নপূরণ হোক। তার বাবার মুখে হাসি ফুটুক। আমি মেঘলার ভর্তি খরচের ব্যবস্থা করে দিতে পারবো। কিন্তু পরবর্তীতে আর্থিক অনটনে তার এ স্বপ্ন অধরা থেকে যাবে না তো?'
আজ মেঘলার বাবা মাইকেল মন্ডল অশ্রু ভরা চোখে বলেন, ‘মেয়ের ভাল ফলাফলে বহু মানুষ বাহবা দিচ্ছেন। কিন্তু একজন প্রতিবন্ধী পিতার মেধাবী মেয়ের লেখা-পড়ার খরচ যোগাতে কেউ পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন না। আমিও চাই আমার মেয়ে লেখাপড়া শিখে অনেক বড় হোক। একদিন সে পরিবারের অভাব আর দুঃখ ঘোচাবে। কিন্তু আমি কি করে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাবো?'