ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫, এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৩৩:০৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

ঢাকা ছাড়ছে হাজার হাজার কর্মহীন মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৩৪ পিএম, ২২ জুন ২০২০ সোমবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

শহরের নিত্য ব্যয়ভার বহন করতে না পেরে বাধ্য হয়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন হাজার হাজার কর্মহীন মানুষ। তারা ফিরছেন একেবারে নিঃস্ব হয়ে। প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দেখা যায়, মালপত্র ভর্তি বাহনে করে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। তাদের মধ্যে কেউ দিনমজুর, কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কেউ গার্মেন্টস শ্রমিক, ছাত্র-প্রাইভেট শিক্ষক ও বিভিন্ন পেশার মানুষ। তবে, একদিকে যেমন সব ছেড়ে মানুষ গ্রামে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে আরেকদিকে বাসা ছেড়ে অপেক্ষাকৃত কম ভাড়ার বাসা খুঁজছেন অনেকে।

বেসরকারি সংস্থায় অফিস সহকারীর কাজ করেন গাইবান্ধার হাসান। থাকতেন ১২ হাজার টাকার ছোট একটা ফ্ল্যাটবাড়িতে বাড়ি। বউ আয়ার কাজ করতেন। দুজনে মিলে আয়-রোজগার ভালোই ছিল। করোনা শুরু হওয়ার পরে বউয়ের কাজ চলে গেলে বাড়ি ভাড়াটাই হয়ে ওঠে গলার কাঁটা। গত মাসে বাড়ি খুঁজে ৩শ’ ফিট থেকে ভেতরের দিকে একটা ছোট্ট টিন-শেডে উঠে পড়েছেন এই মাসের শুরুতে।

২০০৭ সালে ঢাকায় আসেন আবুল হোসেন মিয়া। গ্রামের বাড়ি বরিশালের হিজলদীতে। ১৩ বছরের এই সময়ে কখনও ব্যক্তিগত গাড়িচালক, কখনও মাইক্রো চালানো এবং সর্বশেষ উবার চালিয়ে জীবন নির্বাহ করেছেন। এপ্রিলের এক তারিখ থেকে কাজ নেই। আয় না থাকায় গত দুই মাসে জমানো সামান্য কিছু টাকা আর চেয়ে-চিন্তে চলছিল। অবশেষে ১৫ জুন সিদ্ধান্ত নেন গ্রামে ফিরে যাবেন। যদি ঢাকার পরিস্থিতি কোনোদিন ভালো হয়, হয়তো আবারও ফিরে আসবেন।

পিকআপে মালপত্র নিয়ে বসে আছেন রংপুরের আলেয়া বেগম ও তার মা হোসনে আরা বেগম। একটি খাট, ছোট টেবিল, টিভি, বেডিং, রান্নার জিনিস বস্তাবন্দি। মিরপুরের পাইকপাড়ায় টিন-শেডে দুই রুমে থাকতেন। স্বামী গুলিস্তানে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন। কাজ থেকে বাদ পড়েছেন মার্চের ২৬ তারিখ। সাধারণ ছুটি শেষ হলে যদি আবার সব স্বাভাবিক হয় এই আশায় ঢাকায় ছিলেন। কিন্তু ঢাকার বেশিরভাগ রেস্টুরেন্ট জুনের শুরুতে খোলা হলেও, ছাঁটাই করা হয় তাকে। ত্রাণ নিয়ে এই কয় মাস খাওয়ার সংস্থান হলেও বাড়ি ভাড়া, বিভিন্ন বিল দিতে যে নগদ টাকা লাগে তা হাতে নেই। স্ত্রী সন্তান ও শাশুড়িকে গ্রামে রেখে এসে কোনও মেসে উঠে কাজের সন্ধান করার পরিকল্পনা করেছেন তিনি।

যাত্রাবাড়ি এলাকায় একটি টিন-শেডের মালিক ফয়সাল মামুন বলেন, আমার এদিকটায় বিভিন্ন ধরণের শ্রমিক বেশি থাকায় কখনও এই দশটা ঘর খালি থাকেনি। প্রথমে মার্চে ঘর ছেড়ে চলে গেলো শ্রমিকরা। এপ্রিল মে ফাঁকা থাকলো। মে মাসের শেষে ফেরত আসলো কিন্তু এখন আবার নোটিশ দিয়েছে জুলাই থেকে ছেড়ে দেওয়ার। কাজ নেই, ছাঁটাই করা হয়েছে। ফলে আবার টু-লেট ঝুলিয়েছি।

এক বাসায় চারজন রোজগারের মানুষ। মা বাসাবাড়িতে কাজ করতেন। মেয়ে গার্মেন্টসে, মেয়ের জামাই ব্যক্তিগত গাড়িচালক, ছেলে ভ্যানে সবজি বিক্রেতা। মেয়ের ঘরে দুই কন্যা, ছেলের এক শিশু। চারজনের আয় ছিল প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা। এখন সবাই বেকার, সবজি বিক্রেতা ছেলের হঠাৎ টিবি ধরা পড়ায় তার কাজও বন্ধ।

সচ্ছল একটি পরিবারে এখন একবেলা খাবার জোগাড় করাও কষ্টকর। ৯ হাজার টাকা দিয়ে যে বাসায় ভাড়া থাকতেন সেখানে বাকি পড়েছে এই মাসে প্রথম। ঘরের ফ্রিজ কিনেছিলেন মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে, বাকি পড়েছে সেই কিস্তির টাকা। কোনোমতে বাড়ি ভাড়ার টাকা চেয়ে নিয়ে শোধ করেছেন। মুদির দোকানের ঋণ, কিস্তির বাকি টাকা ফেরত না দিয়ে লুকিয়ে ফিরে গেছেন গ্রামে।

খালি হাতে গ্রামে ফিরে কী করবেন? এমন প্রশ্নে প্রাইভেট গাড়িচালক দিদারুল বলেন, গ্রামের দিকে কিছু একটা করে খাওয়া যাবে। আত্মীয়রা প্রথম কয়দিন জায়গা দিলে ব্যবস্থা একটা হবে। এই শহরে কখনও খাবারের জন্য হাত পাততে হবে ভাবিনি, করোনা আমাদের সেটাও করিয়েছে। সন্তানের ক্ষুধার্ত চেহারা দেখতে কার ভালো লাগে।

ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহরানে সুলতান বাহার বলেন, এমন হবে সেটা শুরুতেই আন্দাজ করা যাচ্ছিল। এখন পর্যন্ত আমাদের হিসেবে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ কেবল ভাড়া দিতে না পেরে ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। আমরা শুরু থেকেই বলছিলাম, তিন মাসের ভাড়া মওকুফ, বিল মওকুফের ব্যবস্থা করা হোক। সরকার কানে তোলেনি। এমন খবরও আমাদের পরিষদে এসেছে যে, কেউ কেউ যাওয়ার সময় আসবাবপত্র বিক্রি করে ভাড়া পরিশোধ করে গেছে।

-জেডসি