ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ২:৩৫:৪১ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

শি চিন পিংয়ের কন্যা ছদ্মপরিচয়ে পড়েছেন হার্ভার্ডে!

অনলাইন ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৩:৩৯ পিএম, ২৭ জুন ২০২০ শনিবার

শি চিন পিংয়ের কন্যা ছদ্মপরিচয়ে পড়েছেন হার্ভার্ডে!

শি চিন পিংয়ের কন্যা ছদ্মপরিচয়ে পড়েছেন হার্ভার্ডে!

আজ ২৭ জুন শনিবার তার জন্মদিন। আজ জীবনের ২৮টি বসন্ত শেষ করলেন তিনি। ভীষণ আদরে বড় হয়েছেন, বেড়ে উঠেছেন রাজনৈতিক পরিবেশে। তারপরও শান্ত স্বভাবের কারণে একটু আড়ালে থাকতেই পছন্দ করেন। দাদা ভালোবেসে নাতনীর নাম রেখেছিলেন ‘জিয়াও মুজি’।

কিন্তু কূটনৈতিক নিরাপত্তার কারণে ছদ্মনামের আড়ালে মাঝে মাঝে গোপন থেকেছে তার এই পোশাকি পরিচয়। জীবনযাপনে যুক্তরাষ্ট্রের ফাস্টলেডি ইভাঙ্কা ট্রাম্পের বিপরীত মেরুতে থাকা জি মিংজে প্রচারের আলোয় কার্যত আসতেই চান না।  

হ্যাঁ, বলছিলাম চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের একমাত্র সন্তানের কথা।  ‘জিয়াও মুজি’ শি’র কন্যা। বাইরের দুনিয়া প্রায় জানেই না চিনের প্রেসিডেন্টের একমাত্র সন্তানের নাম।

চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং এবং তার লোকসঙ্গীত শিল্পী স্ত্রী পেং লিউয়ানের মেয়ে জি-এর জন্ম ১৯৯২ সালের ২৭ জুন। ঝেজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট স্তরের পড়াশোনা শেষ করে জি পাড়ি দিয়েছিলেন আমেরিকায়, ২০১০ সালে।  গন্তব্য হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়।
কিন্তু তিনি যে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, সে খবর অন্তত দু’বছর পর্যন্ত নির্দিষ্ট স্তরের বাইরে প্রকাশিত হয়নি। চূড়ান্ত গোপনীয়তার মধ্যে ছদ্মনাম ও পরিচয়ে জি সেখানে পড়াশোনা করেন মনস্তত্ব এবং ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে।

জি যে সময় হার্ভার্ডে যান, তখনও তার বাবা চিনের প্রেসিডেন্ট হননি। কিন্তু তখন জি’র দাদা জি ঝোংজুন ছিলেন চিনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাবশালী নেতা। মাও সে তুং-এর শাসনকালে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন জি ঝোংজুন। ফলে প্রথম থেকেই হার্ভার্ডে চরম গোপনীয়তা পালন করতে হয়েছে জি-কে।

হার্ভার্ডে পড়ার সময় জি’কে ছায়ার মতো অনুসরণ করত বিশেষ নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী। বাইরে সাধারণ ছাত্রীর পরিচয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস করলেও নির্দেশ মতো বেশি ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে তিনি বন্ধুত্ব করতে পারেননি। অবসর সময়ে জি ভালবাসেন বিভিন্ন বিষয়ের উপর বই পড়তে।  ফ্যাশনেও আগ্রহ আছে তার।

নব্বইয়ের দশকে জি-এর শৈশবের কিছু ছবি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। তারপর থেকেই তিনি চলে যান গোপনীয়তার অন্তরালে। সংবাদমাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া, কোথাও ছিলেন না তিনি। এখনও যে তাকে বিশেষ প্রকাশ্যে দেখা যায়, সে রকমও নয়।  তার সম্বন্ধে তথ্য বা তার ছবি, দুই-ই বিরল।

তাকে প্রথম প্রকাশ্যে স্বপরিচয়ে দেখা যায় ২০১৩ সালে।  তার বাবার চিনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পরে।  বাবা এবং মায়ের সঙ্গে তিনি দেশবাসীকে বসন্তোৎসব এবং নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান।

চিনের ইউননান প্রদেশের লিয়াংজিয়াহে গ্রামেও গিয়েছিলেন জি। এই গ্রামেই তার বাবা শি চিন পিং ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত মোট ছয় বছর কাটিয়েছিলেন। সে সময় দল থেকে দূরে সরে তাকে সমাজসেবামূলক কাজ করতে হয়েছিল।

চিনা সংবাদমাধ্যমে জি সম্বন্ধে যেটুকু বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে তাকে সরল এবং মার্জিত তরুণী বলে বর্ণনা করা হয়েছে, যিনি সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ছোট থেকেই সামাজিক কাজে আগ্রহ দেখিয়েছেন জি। সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন তার মা পেং। ২০০৮ সালে বিধ্বংসী ভূমিকম্প হয়েছিল চিনের সিচুয়ান প্রদেশে। সে সময় ষোড়শী জি স্কুলে আবেদন করেছিলেন ছুটির জন্য। যাতে তিনি সিচুয়ানে গিয়ে উদ্ধারকাজে সামিল হতে পারেন।

জি-য়ের এই উদ্যোগে পূর্ণ সম্মতি ছিল তার বাবা-মায়ের। পেং পরে জানিয়েছিলেন, সিচুয়ানের অভিজ্ঞতা তার মেয়েকে জীবনসংগ্রামের পথে তৈরি হতে সাহায্য করেছিল।

ইতিমধ্যেই জি-কে তার বাবার উত্তরসূরি বলা হচ্ছে। শোনা যায়, পারিবারিক ধারা মেনে তিনিও দাদা-বাবার মত রাজনীতিতে পা রাখবেন।  কিন্তু বেশ কিছু মার্কিন ও তাইওয়ানের সংবাদমাধ্যমে আবার উল্টো সুরও শোনা যায়।

সে সব মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি, জি নাকি চিনের জীবন থেকে বেশি পছন্দ করেন মার্কিন শহর ম্যাসাচুসেটসে কাটানো দিনগুলি। মেয়ের ইচ্ছের কাছে হার মেনে চিনের প্রেসিডেন্ট নাকি তাকে আবার আমেরিকায় ফিরে পড়াশোনা করার অনুমতি দিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং নিজে কোনও দিন চিনের বাইরে গিয়ে থাকেননি। তার পড়াশোনার পর্বও সম্পূর্ণ কেটেছে নিজের জন্মভূমিতেই। অথচ তার দুই পূর্বসূরি নেতা জিয়াং জেমিন (চিনের প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন ১৯৯৩-২০০৩) এবং ডেং জিয়াও পিং দু’জনেই সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ায় গিয়েছিলেন উচ্চশিক্ষার জন্য। নেতা জিয়াও পিং তো কয়েক বছর কাটিয়েছেন ফ্রান্সেও।

কিন্তু শি চিন পিং কোনও দিন চিনের বাইরে থাকতে আগ্রহী ছিলেন না। শোনা যায়, এই কারণে নাকি প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়। কারণ তার প্রথম স্ত্রী কে লিংলিং চিন ছেড়ে ব্রিটেনে গিয়ে থাকতে চেয়েছিলেন। লিংলিংয়ের সঙ্গে শি’র তিন বছরের দাম্পত্যজীবন শেষ হয়ে যায় ১৯৮২ সালে। তার পাঁচ বছর পরে সঙ্গীতশিল্পী পেং লিউয়ানকে বিয়ে করেন শি চিন পিং।

তবে বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাবান এবং প্রভাবশালী এই রাষ্ট্রনেতা তার মেয়ের ব্যক্তিগত জীবনকে পর্দার আড়ালে রাখতেই পছন্দ করেন। ফলে, তার একমাত্র মেয়ে এখন কোথায় আছেন এবং কী করছেন, তা অধরাই রয়ে গেছে বাইরের বিশ্বের কাছে। হয়তো প্রকাশ্যে তখনই আসবে, যখন তারা চাইবেন।  

আমরাও সেদিনের অপেক্ষায় রইলাম।  শুভ জন্মদিন ‘জিয়াও মুজি’।