ঢাকা, শুক্রবার ২৯, মার্চ ২০২৪ ১৮:১১:১০ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

অগ্নিকন্যা কল্পনা দত্তের জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

অনলাইন ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৪:৩২ পিএম, ২৭ জুলাই ২০২০ সোমবার

অগ্নিকন্যা কল্পনা দত্তের জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

অগ্নিকন্যা কল্পনা দত্তের জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

অগ্নিকন্যা কল্পনা দত্ত। আজ ২৭ জুলাই তার জন্মদিন। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব তিনি। কল্পনা চট্টগ্রাম বিপ্লবের একজন অন্যতম বিপ্লবী নেত্রী। অবিভক্ত বাংলার (বর্তমানে বাংলাদেশ) চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে তার জন্ম হয়।

শহীদ ক্ষুদিরাম এবং বিপ্লবী কানাইলাল দত্তের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি বেথুন কলেজ-এ গড়ে ওঠা ছাত্রী সংঘ-এ যোগদান করেন। পূর্ণেন্দু দস্তিদারের মাধ্যমে তিনি মাস্টার দা সূর্য সেনের সাথে পরিচিত হন এবং মাস্টার দা প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি, চট্টগ্রাম শাখায় যোগদান করেন। তার বিপ্লবী মনভাবের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে 'অগ্নিকন্যা' বলেছেন।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন : কল্পনা দত্তের জন্ম বৃটিশ ভারতের বর্তমানে বাংলাদেশের তৎকালীন চট্টগাম জেলার শ্রীপুরে, ১৯১৩ সালের ২৭ জুলাই। বাবা বিনোদবিহারী দত্তগুপ্ত ছিলেন সরকারী কর্মী। মা শোভনাবালা। কল্পনা দত্তের ঠাকুরদা ডাক্তার দুর্গাদাস দত্ত ছিলেন চট্টগ্রামের একজন বিশেষ প্রভাবশালী ব্যক্তি। ইংরেজ সরকার তার ব্যক্তিত্বকে সম্মান দিত। ফলে তাদের বাড়ি পুলিশের নজরের বাইরে ছিল।

শৈশব থেকেই কল্পনা মানসিক দিক থেকে ব্যতিক্রমী ছিলেন। শৈশবে তিনি কামনা করতেন সংসারে যেন দুঃখ না থাকে, সবাই যেন সুখে দিন কাটাতে পারে। এই যে চাওয়া এই চাওয়াই তাকে দেশের প্রয়োজনে বিপ্লবী করে তুলেছে।

চট্টগ্রাম থেকে ১৯২৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করার পর কল্পনা দত্ত কলকাতা যান এবং বেথুন কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। বেথুন কলেজে পড়তে পড়তে তিনি নানা ধরনের বিপ্লবী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পরেন। শহীদ ক্ষুদিরাম এবং বিপ্লবী কানাই লাল দত্তের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি বেথুন কলেহে গড়ে ওঠা ছাত্রী সংঘে যোগ দেন।

চট্টগ্রামে ফিরে আসা : ১৯৩০ সালে কল্পনা দত্ত আবার চট্টগ্রামে ফিরে যান। এই সময় পুর্নেন্দু দস্তিদারের মাধ্যমে তিনি মাস্টার দা সূর্য সেনের সাথে পরিচিত হন এবং মাস্টার দা প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি, চট্টগ্রাম শাখায় যোগদান করেন। তখন চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের নেতৃবৃন্দ গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিং, লোকনাথ বল প্রমুখ বিচারাধীন বন্দী। সেই সময় নারীদের বিপ্লবী দলে প্রবেশের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। কিন্তু মাস্টার দা এই সমস্ত নিয়ম নীতি শিথিল করে কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে তার দলে নেন।

কলকাতা থেকে ফেরার সময় তিনি গোপনে কিছু বিষ্ফোরক নিয়ে আসেন, এছাড়াও গোপনে গান কটনও তৈরি করেছিলেন। এই সময় বিপ্লবী নেতৃবৃন্দের বিচার ও সাজা রুখতে তিনি বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি কোর্ট এবং জেলে ডিনামাইট দ্বারা বিষ্ফোরনের পরিকল্পনা করেছিলেন, যাতে বিপ্লবী নেতৃবৃন্দ পালাতে সক্ষম হন।

কিন্তু তার পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়। ফলে তার বিপ্লবী কর্মকান্ডের উপর কিছু প্রতিবন্ধকতা আসে। যাই হোক এই সময় তিনি প্রায়ই মাস্টার দার সাথে তার গ্রামে ঘুরে গ্রামের মানুষের সুখ দুঃখের খবর নিতেন। এরই সাথে সাথে তিনি ও তার সহযোদ্ধা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রতিদিন গুলি চালনোর প্রশিক্ষন নিতেন।

ইউরোপীয় ক্লাবে আক্রমণ : ১৯৩১ সালে সূর্য সেন, কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে চট্টগ্রামের ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের দায়িত্ব দেন। নির্দিষ্ট দিনের এক সপ্তাহ আগে পুরূষের ছদ্মবেশে একটি সমীক্ষা করতে গিয়ে তিনি ধরা পরেন ও গ্রেফতার হন। জেলে বসে তিনি অপারেশন পাহারতলী এবং বীরাঙ্গনা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আত্মহননের খবর শোনেন।

গ্রেফতার ও নির্বাসন : জামিনে মুক্তি পেয়ে মাস্টার দার নির্দেশে তিনি কিছু দিন আত্মগোপন করে থাকেন। ১৯৩৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশ তাদের গোপন ডেরা ঘিরে ফেলে। কল্পনা এবং মনিন্দ্র দত্ত পালাতে সক্ষম হলেও মাস্টার দা বন্দী হন। কিছুদিন পর কল্পনা এবং তার কিছু সহযোদ্ধা পুলিশের হাতে ধরা পরেন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন মামলায় মাস্টার দা ও তারকেশ্বর দস্তিদারকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়। কল্পনা দত্ত যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হন।

পরবর্তী জীবন : ১৯৩৯ সালে মুক্তি লাভের পর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্কে সাম্মানিকসহ স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। তারপর তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যান। ১৯৪৩ সালে সিপিআই নেতা পূরণচাঁদ যোশীর সাথে তার বিয়ে হয়। এর পর তিনি চট্টগ্রামে ফিরে যান এবং দলের নারী ও কৃষক সংগঠনকে চাঙ্গা করেন।

১৯৪৬ সালে সিপিআই প্রার্থী হয়ে তিনি চট্টগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। কিন্তু জয়ী হতে পারেন নি। স্বাধীনতার পর তিনি ভারতে চলে আসেন। ১৯৫০ সালে ইণ্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে চাকরি নেন। পরে দিল্লী থাকতেন। সেখানে নারী আন্দোলনে মুখ্যভূমিকা পালণ করেন।

ভারত ও তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার যথেষ্ট অবদান ছিল। ‘অল ইণ্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ রাশিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। ‘চট্টগ্রাম অভ্যুত্থান’ তার প্রণীত গ্রন্থ।

১৯৯৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতার শেঠ সুখলাল কারনানী মেমোরিয়াল হাসপাতালে কল্পনা দত্ত যোশীর ৮২ বছর বয়সে জীবনাবসান হয়। তিনি ছিলেন আমৃত্যু ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে কল্পনা দত্ত যোশী একটি চিরস্মরণীয় নাম। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে অসীম সাহস ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে চির জাগরুক হয়ে আছেন এবং থাকবেন।

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে : বলিউডে, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন নিয়ে ‘খেলে হাম জি জান সে’ শীর্ষক একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে, যার অন্যতম প্রধান চরিত্র কল্পনা দত্ত। এই ছবিতে তার চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিখ্যাত বলিউড অভিনেত্রী দীপিকা পাডুকোন।