ঢাকা, শুক্রবার ২৯, মার্চ ২০২৪ ২:৫৪:১৭ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে প্রাথমিকের পরীক্ষা: প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৪:৩৩ পিএম, ২৭ জুলাই ২০২০ সোমবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

করোনার জন্য সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। সোমবার সকালে এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইরাব) আয়োজিত ‘করোনায় প্রাথমিক শিক্ষার চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রাথ‌মিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বা‌তি‌লের সিদ্ধান্ত আপাতত নেই। এই পরীক্ষা আ‌রো অ‌ধিকতর যু‌গোপ‌যো‌গি করার প‌রিকল্পনা র‌য়ে‌ছে সরকা‌রের। দ্রুত যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব না হয় তাহলে অন্যান্য শ্রেণির ক্ষেত্রে পরবর্তী ক্লাসে উঠার জন্য যেটুকু বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন সেই পাঠসূচিই সিলেবাসে রেখে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরির কাজ চলছে। স্কুল খুলতে যদি বেশি বিলম্ব হয় তাহলে শিক্ষাবর্ষ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানোর ইঙ্গিতও দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।

সোমবার (২৭ জুলাই) এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইরাব) আয়োজিত করোনায় প্রাথমিক শিক্ষায় চ্যালেঞ্জ ও উত্তোরণে করণীয় শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলবে সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত কিছু না জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গুজব ছড়ানো হচ্ছে কোরবানির পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। এর কোন ভিত্তি নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত আমরা নেইনি। কবে খোলা হবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। সিদ্ধান্ত হলেই জানানো হবে।

সিলেবাসের বিষয়ে তিনি বলেন, সেপ্টেম্বর বা তারও পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে কতটুকু সিলেবাস পড়ানো হবে এজন্য সংশোধিত সিলবাস তৈরির কাজ আমরা করছি। আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি আছে। প্রয়োজনে আরও বাড়তে পারে বা খুলতেও পারে। যদি খোলা হয় তাহলে আমাদের একধরণের প্রস্তুতি আছে, আর নাহলে আরেক ধরণের প্রস্তুতি নিতে হবে।

জাকির হোসেন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে যদি বিলম্ব হয় তাহলে পরবর্তী ক্লাসে উঠার জন্য শিক্ষার্থীরা যাতে দক্ষ হয় সেভাবে প্রয়োজনীয় বিষয় চিহ্নিত করে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করতে বলা হয়েছে। এই সংক্ষিপ্ত সিলেবাসেই শিক্ষাবর্ষ শেষ করার বিষয়ে জোর দেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে চলতি শিক্ষাবর্ষ ফেব্রয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়ে এবং পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ দুই মাস কমানোও হতে পারে। এরকম একটি পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আবার যদি সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হয় তাহলে ডিসেম্বরেই সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা গ্রহণ করা হতে পারে।

তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীসহ অন্যান্য পরীক্ষা কিভাবে আয়োজন করা যায় সেটা নিয়ে কাজ করছে প্রাথমিক শিক্ষা অ‌ধিদপ্ত‌র এবং এন‌সি‌টি‌বি, জাতীয় প্রাথ‌মিক শিক্ষা একা‌ডে‌মি (ন‌্যাপ)।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, আমরা এখন পরীক্ষা নিয়ে ভাবছি না। আমরা বলছি মূল্যায়ন। শিক্ষার্থী পরবর্তী ক্লাসের জন্য প্রস্তুত কিনা সেটা মূল্যায়ন করা হবে। শিক্ষকদের বলা হয়েছে পরবর্তী ক্লাসে উঠার জন্য বিদ্যমান ক্লাসের যে পাঠগুলো আবশ্যিক সেগুলো দিয়ে যেনো সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে। যার ভিত্তিতে স্কুল খুললে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে।

প্রযুক্তির বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদেরকেও শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে যুক্ত করতে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, অনলাইন, সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে আমরা ক্লাস সম্প্রচার করছি। কিন্তু প্রযুক্তির বাইরেও অনেক শিক্ষার্থী আছে। তাদেরকে আমরা এই কার্যক্রমে আনতে চাই। সেটা নিয়েই কাজ চলছে। সকলের কাছে মোবাইল ফোন আছে এজন্য আমরা রেডিওর মাধ্যমে ক্লাস সম্প্রচার করবো। এটি করলে ৯৬ ভাগ শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে। আগামী দুই-এক সপ্তাহের মাধ্যে এটি শুরু হবে। এছাড়া ৩৩৩৬ হট লাইন চালু করা হচ্ছে- এটার মাধ্যমে বিনামূল্যে ৫ মিনিট শিক্ষার্থীরা যে কোন শিক্ষকের সাথে কথা বলতে পারবেন। অনলাইনে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেন, কবে স্কুল খুলবে বলা কঠিন। তবে কনটেন্ট ম্যাপিং হচ্ছে, তিন মাস সময় পেলে কি করবো? রিকভারি প্ল্যান করা হচ্ছে। পোস্ট কভিডে স্বাস্থ্যবিধি কিভাবে মানা হবে? সেই পরিকল্পনা হচ্ছে। ইউনিসেফ, বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শগুলো মেনেই করা হবে।

গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষকরা কেমন আছেন? তারা কিভাবে চলছেন? তাদের নিয়ে মন্ত্রণালয়কে বসতে হবে। বিশেষ করে অভিভাকদের অনলাইনে যুক্ত করে তাদের কথা শোনা খুব প্রয়োজন। কিন্ডারগার্টেন স্কুল খুব বিপদে আছে। তাদেরকে যদি বিনাসুদে ঋণ দেয়া যায়। ব্যবসায়িদের হাজার হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়, কিন্তু শিক্ষায় কেন নয়? প্রণোদনা হিসেবে এটি করা হচ্ছে না কেন? শিক্ষকদের দুঃখ তাদের সাথে কেউ বসছে না, আলাপ করছে না।

ইন্টারনেটের কর কেন বাড়নো নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, আমরা আশা করেছিলাম প্রত্যাহার করা হবে? সেরকম ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোন কারণে সেটি করা হলো না? অনলাইন ছাড়া কিভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ করবো? তাহলে কেন কর বাড়ানো হলো?

যথাযথ পরিকল্পনা, বৃত্তির, স্বাস্থ্য, খাদ্য, নিরাপত্তার পরিধি বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ৪ কোটি শিক্ষার্থীর মাস্ক, হ্যান্ড ওয়াশ, সামাজিক দূরত্ব কি নিশ্চিত করতে পারবো? সেটা ভাবতে হবে। বন্যা কবলিত জেলার শিক্ষার্থীদের কথা কি ভাবছি? তারা মোবাইল ফোনে চার্জ দিতে পারে না। দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে যথাযথ কৌশল অবলম্বন করতে হবে।

ইরাবের সভাপতি মুস্তাক আহমদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হকের সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাব্বির নেওয়াজ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ জসিম। বক্তব্য রাখেন- ঝালকাঠি কীর্তিপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিমুল সুলতানা হ্যাপি, রংপুর ক্যাডেট কলেজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রওশন আরা বিথি, অভিভাবক রাশেদ রাব্বি, ইরাবের ট্রেজারার শরিফুল ইসলাম সুমন, যুগ্ম সম্পাদক ফারুক হোসাইন, দপ্তর সম্পাদক এমএইচ রবিন, মানব জমিনের পিয়াস সরকার, ডেইলি স্টারের মহীউদ্দীন আলমগীর, বিডিনিউজের শহিদুল ইসলাম ও রাইজিংবিডির আবু বকর ইয়ামিন।

-জেডসি