ঢাকা, শনিবার ০৬, ডিসেম্বর ২০২৫ ৯:০৬:০৪ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

সেভ দ্য চিলড্রেনের জরিপ: ভালো নেই দেশের শিশুরা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত : ১১:২৪ এএম, ২ জুন ২০১৭ শুক্রবার

নানা কারণে শিশুরা শৈশবের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। হারিয়ে যাওয়া শৈশবকালীন অবস্থা বিবেচনা করে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৪ নম্বরে। আর এদের মধ্যে মেয়েশিশুদের অবস্থা বেশি নাজুক।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘স্টোলেন চাইল্ডহুড বা চুরি হয়ে যাওয়া শৈশব-২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। গণমাধ্যমকে জানাতে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনটিতে সাতটি সূচক আমলে নেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো: শিশুমৃত্যু হার, অপুষ্টি, শিক্ষাবঞ্চিত শিশুর হার, শিশুশ্রম, শিশুবিবাহ, অপ্রাপ্তবয়সে বাচ্চা প্রসব ও শিশুর প্রতি সহিংসতা। সবগুলো সূচকেই বাংলাদেশের শিশুদের শৈশবকালীন অধিকার ও সুযোগের ক্ষেত্রে বঞ্চনার চিত্র ফুটে উঠেছে।

বিশ্বের ১৭২টি দেশের শিশুদের তুলনামূলক চিত্র দেখতে প্রতিবেদনটি তৈরি করে সেভ দ্য চিলড্রেন। এতে শিশু-কিশোরদের শৈশব কোথায় সবচেয়ে নিরাপদ আর কোথায় বিপজ্জনক অবস্থায় আছে, তা দেখা হয়েছে। এ প্রতিবেদনে প্রতিটি দেশের সরকার অনুমোদিত তথ্য ব্যবহার করা হয়।

প্রতিবেদনটি বলছে, বাংলাদেশ হাজারে ৬৮০ নম্বর পেয়ে ১৩৪ নম্বরে আছে। সর্বোচ্চ নম্বর ৯৮৫ পেয়ে নরওয়ে প্রথম অবস্থানে রয়েছে। আর দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশের অবস্থান মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও ভারতের পেছনে; আর নেপাল, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের আগে।

প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের মাত্র সাতটি দেশে অপ্রাপ্তবয়সে (১৫-১৯) সন্তান প্রসবের হার বেশি, এর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ হার প্রায় ৮৩ শতাংশ। আর এ বয়সে দেশের শতকরা ৪৪ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। শিক্ষার সুযোগ থেকেও দেশের শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে। ২৮ শতাংশ অর্থাৎ ৫৫ লাখ শিশু শিক্ষার বাইরেই থেকে যায়। এ ছাড়া শিশুমৃত্যুর হার ও খর্বকায় শিশুর সংখ্যা এখনো অনেক বেশি। এ হার এখন যথাক্রমে ৩৮ ও ৩৬ শতাংশ।

প্রতিবেদনটিতে ১৭২টি দেশের মধ্যে কোন দেশ শৈশব সময়ের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আর কোথায় বিপজ্জনক বা অরক্ষিত সে বিষয়ে বৈশ্বিক একটি সূচক প্রকাশ করা হয়েছে। এই সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও ভারতের পেছনে। তবে নেপাল, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে এগিয়ে। সূচকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ইউরোপের দেশগুলো। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে এবং সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার দেশগুলো। এদের মধ্যে সর্বনিম্নে রয়েছে নাইজার।

এই প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে মাত্র ১০টি রাষ্ট্রে পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ খর্বকায় শিশু বাস করে। এর মধ্যে ভারতে সবচেয়ে বেশি ৪৮.২ মিলিয়ন। এই ১০টি রাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান অষ্টম, যেখানে প্রায় ৫৫ লাখ খর্বকায় শিশুর বসবাস।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রতি সাত সেকেন্ডে ১৫ বছরের কম বয়সী একজন মেয়ের বিয়ে হচ্ছে এবং বাংলাদেশে ১৫-১৯ বছর বয়সী মেয়েদের বিয়ের হার শতকরা ৪৪ ভাগ। প্রতিবছর প্রায় ১৭ মিলিয়ন কিশোরী মেয়ে শিশুর জন্ম দিচ্ছে এবং এই জন্মের অর্ধেকই ঘটছে বিশ্বের সাতটি দেশে, যার মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও রয়েছে ব্রাজিল, কঙ্গো, ইথিওপিয়া, ভারত, নাইজেরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। সেভ দ্য চিলড্রেনের এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিশ্বে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন বা তারও বেশি শিশুর শৈশব নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।

সংস্থাটির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. ইশতিয়াক মান্নান বলেন, বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করলেও এই সূচক বলছে দেশে শিশুদের অবস্থা ভালো নয়। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে শিশুদের প্রতি বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি আরও বলেন, শিশুদের প্রতি বিনিয়োগ করলে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ বেশি।

অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গ্লোবাল ক্যাম্পেইন পরামর্শক টনি মাইকেল গোমেজ। এ সময় তিনি বলেন, একটি শিশুর জন্মস্থান নির্ধারণ করে দেয় শিশুটিকে কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, শহরের ও হাওরের শিশুরা বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে পৃথক পৃথক সুবিধা পায়। এ সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসা উচিত।