ঢাকা, মঙ্গলবার ৩০, এপ্রিল ২০২৪ ১৫:৩৬:০২ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

করোনায় শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নতুন প্রকল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:৪৬ এএম, ২ সেপ্টেম্বর ২০২০ বুধবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলবে কেউ বলতে পারছেন না। এরইমধ্যে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করেছে সরকার। বার্ষিক পরীক্ষা হবে না বলে আভাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনার কারণে তিন কোটি ৮৬ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন থমকে গেছে। অনেক শিশু স্কুলের বাইরে ও নিম্নমাধ্যমিক স্তরে অসম শিখন চালু রয়েছে- এ দুটি কারণ উদ্বেগজনক দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায়। করোনার কারণে ঝরেপড়া ও অসম শিখন সমস্যায় বাল্যবিয়ে আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ অবস্থায় স্কুল বন্ধ থাকার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য পাঠ্যপুস্তকের ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি ও বিতরণ, শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্থানীয় জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ এবং জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশ কোভিড-১৯ স্কুল সেক্টর রেসপন্স (সিএসএসআর)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, যখন স্কুল খোলা হবে তখনই এ প্রকল্পের সুবিধা পাবে কয়েক কোটি শিক্ষার্থী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে যেসব নির্দেশনা তৈরি হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে প্রকল্প থেকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা বিশ্বব্যাপী শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে অর্থায়ণ করছে গ্লোবাল পার্টনার শিপ ফর অ্যাডুকেশন (জিপিই)। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুদান পেতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০ মিলিয়ন ডলার চেয়ে আবেদন করে। মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করে ১৫ মিলিয়ন বা ১২৬ কোটি টাকা দিতে সম্মত হয়। তবে বাংলাদেশে সংস্থাটির কোনো অফিস না থাকায় বিশ্ব ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা ছাড় হবে। তবে মনিটরিং করবে জিপিই। সরকার ১২৮ কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্প গ্রহণ করেছে। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত দুই বছর মেয়াদ ধরা হয়েছে। প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। জিপিই অনুদান হিসেবে দিবে ১২৬ কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও রাজস্ব খরচ হিসেবে সরকার অর্থায়ন করবে মাত্র এক কোটি ৮৭ লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় উদ্যোগী হলেও পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন কমিটিতে থাকবে।

জানা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় নতুন শিক্ষাবর্ষে স্কুলে ভর্তি, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে (পরীক্ষা) ও লেখাপড়ার ক্ষতি পূরণে সহায়তা, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সেবা প্রদান, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলার জন্য বিদ্যালয় ব্যবস্থার প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা, দূরশিক্ষণ কার্যক্রমকে ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখা এবং মূল বিদ্যালয়ের সঙ্গে দূরশিক্ষণ কার্যক্রমকে একীভূত করা, জরুরি পরিস্থিতি তথা দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধের পরিস্থিতিতে কৌশল ও মানসম্মত পরিচালনা কার্যপ্রণালী প্রণয়নে সব ধরনের কারিগরি সহায়তা সেবা প্রদান নিশ্চিত করা হবে। এছাড়াও যখনই স্কুল খোলা হবে তখন প্রায় ২০ হাজার প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া হবে। পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য থাকবে বিশেষ স্কিম।

এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) রতন চন্দ্র পণ্ডিত বলেন, সারা বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে প্রকল্পটি আনতে হয়েছে। আমদের প্রস্তাব জিপিইর পছন্দ হওয়ায় ১৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে। এ প্রকল্পটি করোনায় শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে সরকারের নানা উদ্যাগকে দারুভাবে সহযোগিতা করবে। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য হচ্ছে-কোভিড-১৯ সংকট মোকাবিলা এবং উত্তোরণের জন্য বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনার প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত করোনা সংক্রান্ত ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলার জন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা। প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ২৫ লাখ শিক্ষার্থীকে (১২ লাখ ৪৫ হাজার লাখ ছাত্র এবং ১২ লাখ ৯৫ হাজার ছাত্রী) একীভূত দূরশিক্ষণ (টিভি, রেডিও ও অনলাইন) সহায়তা দেওয়া।

এছাড়াও ৩২ লাখ ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে (১৫ লাখ ৯০ হাজার ছাত্র ও ১৬ লাখ ৫০ হাজার ছাত্রী) প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের সরকারি বিদ্যালয়ে পুনঃভর্তি (যারা চলতি শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছিল) নিশ্চিত করা। মূল বিদ্যালয় ব্যবস্থার সঙ্গে দূরশিক্ষণ কার্যক্রমকে পুরোপুরি কার্যকর ও একীভূত করা। প্রথম থেকে দশম শ্রেণির পুরো শিক্ষাবর্ষের জন্য পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ ডিজিটাল কনটেন্ট সমৃদ্ধ ৩৫টি বিষয়ের কার্যক্রমের (সাবজেক্ট প্রোগ্রাম) সহায়তা করা। এক লাখ ৫০ লাখ দুর্গম এলাকার শিশুদের শিক্ষা উপকরণ দেওয়া। স্কুল বন্ধ থাকায় ১৫ লাখ শিশুর শিক্ষার্থীকে করোনার নেতিবাচক প্রভাব থেকে উত্তরণ করতে উদ্ধুদ্ধকরণ প্রচারণা ও কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ। নিরাপদে ফের স্কুল খোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ২০ হাজার স্কুল খোলা। শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল তৈরি করা। স্কুল বন্ধের কারণে শিক্ষার ক্ষতি পরিমাপ করতে তিন লাখ ৫০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা। দুই লাখ শিক্ষককে প্রতিকারমূলক শিক্ষা, দূরশিক্ষণ কৌশল এবং সামগ্রমিক ও সামস্টিক মূল্যায়ন চর্চা এসব বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা। দূরশিক্ষণ ব্যবস্থার জন্য স্থায়ী পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সরকারের নিয়মিত কার্যক্রমের মধ্যে অন্তর্ভুক্তকরণ। মূল বিদ্যালয় ব্যবস্থার জন্য মানসম্মত জরুরি পরিচালনা কার্যপ্রণালী তৈরি করা এবং শিখন কার্যক্রম তরান্বিত করতে সরাসরি ইন্টারভেশন থেকে তিন কোটি ৫৯ লাখ শিক্ষার্থী উপকৃত হবে।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হবে- স্কুল বন্ধ থাকায় ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য কনটেন্ট তৈরি ও বিতরণ করা। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্থানীয় জনগনের সঙ্গে যোগাযোগ এবং জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ। সরকারি নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ফের স্কুল চালু করার পরিকল্পনা তৈরি করা। নিরাপদে স্কুল চালু করতে তৈরি করা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করা। করোনার সংকটে যেসব শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে তাদের আবার স্কুলে ভর্তিতে সহায়তা করা। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে (পরীক্ষা) ও লেখাপড়ার ক্ষতি পূরণে সহায়তা করা। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সেবা প্রদান। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলার জন্য বিদ্যালয় ব্যবস্থার প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা। দূরশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং মূল বিদ্যালয়ের সঙ্গে দূরশিক্ষণ কার্যক্রমকে একীভূত করা। জরুরি পরিস্থিতি তথা দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধের পরিস্থিতিতে কৌশল ও মানসম্মত পরিচালনা কার্যপ্রণালী প্রণয়ন। সব কার্যক্রমের কারিগরি সহায়তা সেবা প্রদান নিশ্চিত করা।

প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠালে ২০ দফা মতামত দিয়ে ফেরত পাঠায়। এরমধ্যে স্কুল নতুন করে খুললে কীভাবে সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। বর্তমানে জুম ও দূরশিক্ষণ পরিচালিত হচ্ছে সেগুলো কীভাবে সমন্বয় করা হবে। কমিশনে মতামতের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় স্কুল খোলার পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস নিতে একটি গাইড লাইন তৈরি করেছে মন্ত্রণালয়।

তাতে বলা হয়েছে, বিদ্যালয় খোলার ঘোষণা দেওয়ার অন্তত ১৫ দিন আগে শিক্ষক, কর্মচারী এবং এসএমসি সদস্যদের উপস্থিতিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করা। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ক্লাস উপযোগী করে বিদ্যালয়ে পরিচ্ছন্ন করে তোলা, বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, স্কুলের গেটে বা প্রবেশের স্থানে হাত ধোয়ার জন্য সাবান ও পানির ব্যবস্থা করা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে প্রবেশ এবং থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা মেপে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ করানো। শ্রেণিকক্ষে আগের মতো এক বেঞ্চে তিন-চারজন না বসিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে পাঠদান করা, ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে চতুর্থ শ্রেণিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া, গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্যক্রম নির্বাচন করে কোন দিন কোন বিষয়ের ক্লাস নেওয়া হবে তা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ও এসএমসির সদস্যদের নির্ধারণ করে দেওয়া, স্কুল চলাকালীন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক মুখে মাস্ক পরতে বাধ্য করা। স্কুলের নোটিস বোর্ডে বিদ্যালয় শিক্ষক, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যোগাযোগ নম্বর লিখে ঝুলিয়ে রাখা, কেউ অসুস্থ হয়ে গেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহায়তায় তাকে চিকিৎস দেওয়া।

-জেডসি