বীর মুক্তিযোদ্ধা শিরিন বানু মিতিলের জন্মদিন আজ
অনলাইন ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৩:০২ পিএম, ২ সেপ্টেম্বর ২০২০ বুধবার
বীর মুক্তিযোদ্ধা শিরিন বানু মিতিলের জন্মদিন আজ
পাবনা জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি, বামপন্থী নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা শিরিন বানু মিতিলের জন্মদিন আজ ২ সেপ্টেম্বর। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখা মহীয়সী এই নারীর জন্ম ১৯৫১ সালের ২ সেপ্টেম্বর পাবনা জেলায়। বাবা খোন্দকার শাহজাহান মোহাম্মদ ও মা সেলিনা বানু।
বাবা ছাত্রজীবনে ও ১৯৫২ সাল পর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মা পাবনা জেলার ন্যাপ সভানেত্রী এবং ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকারের এমপি ছিলেন। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম হবার ফলে নিজেও ছিলেন রাজনীতি সচেতন। ছোটবেলা থেকেই ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যোগ দেন তিনি।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। এছাড়াও ১৯৭০-১৯৭৩ সাল পর্যন্ত পাবনা জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভানেত্রী এবং কিছু সময়ের জন্য পাবনা জেলা মহিলা পরিষদের যুগ্ম সম্পাদিকা ছিলেন।
২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো পাবনা জেলাও পাকহানাদারদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। সাধারণ মানুষের ওপর নেমে আসে অবর্ণনীয় অত্যাচার। ২৭ মার্চ পাবনার মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ করে। ২৭ মার্চ পাবনা পুলিশলাইনে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয় সেখানে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেয়। নারী হয়েও শত প্রতিকূলতার মাঝে তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এক আত্মীয়ের কাছে মাত্র ত্রিশ মিনিটে থ্রি নট থ্রি চালনা শিখে ফেলেন। কিন্তু নারী হিসেবে সে সময়কার সমাজে সম্মুখযুদ্ধে যাওয়া ছিল খুবই কঠিন ব্যাপার। তাই তিনি শহীদ বীরকন্যা প্রীতিলতাকে অনুসরণ করে পুরুষের পোশাক পরিধান করে পুরুষবেশে যুদ্ধে যোগ দেন।
২৮ মার্চ টেলিফোন এক্সচেঞ্জে ৩৬ পাকসেনার সঙ্গে জনতার এক তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সেই যুদ্ধে তিনি ছিলেন একমাত্র নারী যোদ্ধা। এই যুদ্ধে ৩৬ পাকসেনা নিহত এবং ২ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এছাড়াও ৩১ মার্চ পাবনার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপিত হয়। ৯ এপ্রিল নগরবাড়ীতে প্রচ- যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সে সময় কন্ট্রোল রুমের পুরো দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
এরপর ভারতের স্টেটসম্যান পত্রিকার সাংবাদিক মানব ঘোষ তার ছবিসহ পুরুষ সেজে যুদ্ধ করার খবরটি পত্রিকায় প্রকাশ করলে তার পক্ষে আর পুরুষ সেজে যুদ্ধ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু তার যুদ্ধ থেমে থাকেনি। পরবর্তীতে পাবনা শহর পাকবাহিনী দ্বারা দখল হলে তিনি ২০ এপ্রিল সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেন। সেখানে বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত একমাত্র নারীদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গোবরায় যোগ দেন। পরবর্তীতে মেজর জলিলের নেতৃত্বে পরিচালিত ৯ নং সেক্টরে যোগ দেন। দুঃসাহসী এ মুক্তিযোদ্ধার অবদান ও সাহসিকতা সর্বজন স্বীকৃত।
২০১৬ সালের ২১ জুলাই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।
আজ এই বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্মদিনে উইমেননিউজ২৪.কম-এর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা, শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।