ঢাকা, শনিবার ০৪, মে ২০২৪ ৯:২৭:১৫ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

কুমিল্লার খাদি: করোনায় ৫ মাসে বিক্রি কমেছে ১৮৬ কোটি টাকা

ইউএনবি

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:১৬ পিএম, ১৩ অক্টোবর ২০২০ মঙ্গলবার

কুমিল্লার খাদি: করোনায় ৫ মাসে বিক্রি কমেছে ১৮৬ কোটি টাকা

কুমিল্লার খাদি: করোনায় ৫ মাসে বিক্রি কমেছে ১৮৬ কোটি টাকা

কুমিল্লার ঐতিহ্যের স্মারক খাদি কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও করোনার কারণে তসে চাহিদা অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। গত পাঁচ মাসে ১৮৬ কোটি টাকা বিক্রি কমেছে। লোকসানের মুখে থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠানে কর্মচারি ছাঁটাই করা হয়েছে। নগরীর দোকানগুলোতে বিক্রি কম হওয়ায় কাপড়ের উৎপাদনও কমে গেছে।

কুমিল্লায় খাদি কাপড় বিক্রির চার শতাধিক দোকান রয়েছে। করোনার কারণে এপ্রিল-মে দোকান বন্ধ থাকে। জুন থেকে সীমিত পরিসরে দোকান খুললেও বিক্রি কমেছে।

দোকানিরা জানান, শুধুমাত্র রমজানের ঈদে কুমিল্লায় ১২০ কোটি টাকার মতো খাদি কাপড় বিক্রি হতো। পুরো বছরের ঘাটতি পুষিয়ে যেত রোজার ঈদে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে ২৪ কোটি টাকার কাপড় বিক্রি করেন তারা। করোনার কারণে এবারের রমজানের ঈদ পড়ে যায় সাধারণ ছুটির মধ্যে। সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার পর প্রথম দুই মাসে ১৪৪ কোটি টাকার খাদি কাপড় কম বিক্রি হয়। ছুটি শেষ হওয়ার পর ধীরে ধীরে ক্রেতা বাড়তে থাকলেও বিক্রি কমে যায় অর্ধেক। বিভিন্ন জেলা-উপজেলার দোকানগুলোতে পাইকারিতে প্রচুর খাদি কাপড় বিক্রি হলেও এখন তা ৮০ ভাগ কমে গেছে। জুন থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের পর্যন্ত আরও ৪২ কোটি টাকার খাদি কাপড় কম বিক্রি হয়।

বিক্রেতারা জানান, বর্তমানে খাদি কাপড়ের বিক্রি ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে। কিছু প্রতিষ্ঠান অনলাইন ব্যবসা চালু রেখেছে। আবার অনেকে পণ্য ছেড়ে দিচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে।

এদিকে টানা দুই মাস দোকান বন্ধ ও দোকান খোলার পর বিক্রি কমে যাওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানে এক হাজার কর্মচারী ছাঁটাই করা হয়েছে। জীবনের তাগিদে অনেকে অটোরিকশা, কেউবা ভ্রাম্যমাণ সবজি ও ফল বিক্রিসহ নানা পেশা বেছে নিয়েছেন।

৫০ বছর ধরে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতায় খাদি কাপড় উৎপাদন করা সীতাহরণ দেবনাথ জানান, এ কাপড় উৎপাদনের সাথে বেশকিছু বিষয় জড়িত আছে। তা হচ্ছে তাঁতী, সুতা কাটুনী, ব্লক কাটার ও রঙের কারিগর। বংশ পরম্পরায় তাঁতীর কাজ করা লোকের অভাব কয়েক বছর ধরে। করোনায় উৎপাদন কম হওয়ায় তাঁতীর সংখ্যা আরও কমেছে।

কুমিল্লার মনোহরপুরের খাদি ভূষণের ব্যবস্থাপক স্বপন ভট্টচার্য জানান, এখানে প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার টাকার খাদি কাপড় বিক্রি হতো। কুমিল্লায় বেড়াতে আসা পর্যটকরা খাদি কাপড় নিয়ে যেতেন। অন্যান্য জেলার খুচরা দোকানদাররাও কুমিল্লা থেকে খাদি কাপড় কিনতেন। ভ্রমণ ও চলাচলে সীমাবদ্ধতার কারণে খাদি কাপড়ের বিক্রি কমে গেছে।

তিনি বলেন, ‘খাদি কাপড়ের ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত অনেক ছেলেকে চোখের সামনে কর্মহীন হয়ে পড়তে দেখেছি, যা বেদনাদায়ক।’

কান্দিরপাড়ের খাদি কুটির শিল্প ভবনের স্বত্বাধিকারী তপন ভট্টচার্য বলেন, ১৯৩১ সাল থেকে বংশ পরম্পরায় খাদি কাপড়ের ব্যবসা করছি। করোনায় ৫০ শতাংশের নিচে বিক্রি নেমে গেছে।

প্রসিদ্ধ খাদি ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম লিমন জানান, দোকান খোলার পর পাইকারি বিক্রি কমে গেলেও বর্তমানে ব্যবসায় কিছুটা গতি এসেছে। তবে তা অনলাইন নির্ভর।

কুমিল্লার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন বলেন, ‘বেশিরভাগ ব্যবসাতেই ধস নেমেছে। খাদি যেহেতু আমাদের ঐতিহ্যের ধারক, সেহেতু এর সংকট কাটানোর জন্য কী করণীয় তা আগে নির্ধারণ করব।’ ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে সমগ্র ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলনের সময় কুমিল্লায় খাদি শিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সেই সময় বিদেশি পণ্য বর্জন করার জন্য ডাক ওঠে। সর্বত্র এক আওয়াজ ‘মোটা কাপড়-মোটা ভাত’। সেই মোটা কাপড় এখন মিহি হয়েছে। কাপড়ে লেগেছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। বর্তমান খাদির পাঞ্জাবি, শার্ট, প্যান্ট, ফতুয়া, চাদর ও থ্রিপিস বিক্রি হচ্ছে।