ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ৯:৪৮:১৭ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উদযাপিত হবে দুর্গাপূজা

এমরানা আহমেদ

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৩:৪৩ পিএম, ১৬ অক্টোবর ২০২০ শুক্রবার

করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উদযাপিত হবে দুর্গাপূজা

করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উদযাপিত হবে দুর্গাপূজা

বর্ষা আর শীতের মধ্যে ছোট সময়ের জন্য উঁকি দেয় শরৎকাল। আকাশটা চমৎকারভাবে বদলে যায়। কালো মেঘ হঠাৎ করে সাদা রঙ হয়ে যায় আর পেজা তুলোর মতো আকাশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে উড়ে বেড়ায়। বাতাসে ভেসে আসে শিউলি ফুলের মিষ্টি সুবাস। শহর ছাড়িয়ে শহরতলির যেখানে একটু-আধোটু খালি জায়গা পায় সেখানেই কাশফুলেরা তাদের সফেদ সাদা সৌন্দর্য নিয়ে দাড়িঁয়ে যায়। প্রকৃতির এই পরিবর্তনে ঠিক বোঝা যায় দুর্গাপূজা আসছে। বাতাসে উৎসবের গন্ধ। কুমার পল্লীতে শেষ-সময়ের কাজ চলছে। মা যে আসছেন, নিজের বাড়িতে। প্রকৃতি এভাবেই জানান দেয়, সনাতন ধর্মাম্বলীদের প্রধান উৎসব-প্রাণের উৎসব দুর্গাপূজার আগমনী বার্তা। দুর্গোবিলাসী দেবী দুর্গাকে বরণ করে নিবেন সনাতন ধর্মাম্বলীরা। 

দুর্গা উৎসবকে ঘিরে রাজধানীসহ সারাদেশে এরই মধ্যে নেয়া হয়েছে সব ধরনের ব্যবস্থা। পূজার এই কয়েকটি দিনের আনন্দের জন্য উৎসব প্রিয় বাঙালি অপেক্ষা করে থাকে। আনন্দঘন এই উৎসবকে কেন্দ্র করে পূর্জা মন্ডপগুলোতে চলছে তাই শেষ সময়ের প্রস্তুতি। এরই মধ্যে মৃৎ শিল্পীদের তুলির আঁচড়ে ফুঁটে উঠেছে প্রতিমার অবয়ব। রাত-দিন এক করে মন্ডপ সাজাতে ব্যস্ত কারিগররা। প্যান্ডেল, আলোক-সজ্জা আর মন্ডপ তৈরির কাজও প্রায় শেষ। 

রাজধানীর পুরান ঢাকার শাখাঁরি বাজারে অবস্থিত একটি পূর্জা মন্ডপের কারিগর বেলায়েত হোসেন এই প্রতিবেদকে জানান, পূজোর কাজ দেড়-দুই মাস আগে শুরু করেছি। আমাদের কাজ তাই প্রায় সমাপ্তির পথে।  

দেবী দুর্গার আরাধনার মধ্য দিয়েই সম্প্রীতির এই মহা আনন্দে মেতে উঠার আনন্দে পূর্জারি ও ভক্তরা। এ প্রসঙ্গে দেবাশিষ রায় নামে এক ভক্ত বলেন, ‘আমাদের হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে বড় একটা  উৎসব দুর্গাপূজা। যে পূজার জন্য আমরা প্রতি বছর অপেক্ষা করে থাকি’।

পলাশ নামে অন্য আরো একজন ভক্ত বলেন, ‘মায়ের এই আগমণী বার্তায় আমরা প্রত্যাশ করি মহামারি করোনার প্রকোপ করে যাবে এবং আমাদের ত্রিভূবণ প্রফুল্লতায় ভরে উঠবে’। 

পূর্জায় শুধু মন খুলে মেতে উঠা নয়, এর সাথে জড়িয়ে থাকে অসংখ্য মানুষের রুটি-রুজিও। কিন্তু অনন্যা বছরের থেকে ২০২০ সাল যেন আলাদা। এ বছর বাঙালি তথা বিশ্ববাসীর অভিধানে লকডাউন নামে একটি শব্দ যোগ হয়েছে। করোনার প্রতিকূলতায় বহু মানুষের প্রাণ গেছে। এমন কি অর্থনৈতিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে বাংলাদেশ, ভারতসহ গোটা বিশ্ব।

জানা গেছে, বাংলাদেশ পূর্জা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে দেশের সব জেলা-উপজেলায় অবস্থিত প্রত্যেকটি পূজা মন্ডপগুলোতে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে যাতে পূর্জা উদযাপিত হতে পারে, সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি। মন্ডপগুলোতে সার্বক্ষণিক টহল পুলিশের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বরাবরের মত এ বছরও দেশের প্রতিটি পূর্জামন্ডপ থাকবে গোয়েন্দা নজরদারী আওতাধীন। 

দুর্গাপূজা ২০২০: এবার দেবীর আগমন ও গমন কিসে? 
পিতৃপক্ষের সমাপ্তির সাথে সাথেই শুরু হয় দেবীপক্ষ। সচরাচর মহালয়া আর দূর্গাপুজোর মধ্যে ফারাক থাকে মূলত এক সপ্তাহের। কিন্তু এবারের চিত্রটা একটু অন্যরকম। কারণ পিতৃপক্ষের পরই আশ্বিন মাসের অধিকমাস বা মলমাস শুরু হয়েছে। তাই, মা দুর্গা আশ্বিনের বদলে কার্তিক মাসে মর্ত্যে আগমন করবেন। ২০২০ সালে মহালয়া হয়েছে ১৭ সেপ্টেম্বর, আর মহাষষ্ঠী পড়েছে ২২ অক্টোবর অর্থাৎ এই দুইয়ের মধ্যে প্রায় একমাসের ব্যবধান। হিন্দু ধর্মে, দুর্গাপূজা বা নবরাত্রি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎসব। 

দুর্গাপূজার তারিখ: 
এ বছর (২০২০ সাল) ১৭ সেপ্টেম্বর পিতৃপক্ষ শেষ হয়ে, ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে অধিকমাস শুরু হয়েছে। তাই, এবার মহাষষ্ঠী পড়েছে ২২ অক্টোবর এবং বিজয়া দশমী পড়েছে ২৬ অক্টোবর। 

মা দুর্গার গমনাগমন:
পুরাণ অনুযায়ী, মা দুর্গার আগমন ও গমনের জন্য বিভিন্ন বাহন রয়েছে এবং তার প্রত্যেকটি বাহন থেকে ভবিষ্যতে কী হতে চলেছে তার সঙ্কেতও মেলে। শাস্ত্র অনুযায়ী, মা দুর্গার গমনাগমন রোববার বা সোমবার হলে তার বাহন হবে গজ (হাতি)৷ আর শনিবার বা মঙ্গলবার হলে বাহন হবে ঘোটক (ঘোড়া)৷ আবার বৃহস্পতি বা শুক্রবারে তিনি দোলায় (পালকি সদৃশ) যাতায়াত করেন৷ বুধবার হলে বাহন হয় নৌকা৷ 

এ বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে দেবী দুর্গার দোলায় চড়ে বসুন্ধরায় আগমন করবেন। আর মা দুর্গা ফিরে যাবেন অর্থাৎ গমন করবেন গজে চড়ে। 

পঞ্জিকা মতে, মা দুর্গা যদি দোলায় চড়ে আসেন, তাহলে মড়কে ভরে যাবে বসুন্ধরা। এর ফল হল মর্ত্যে বহু মৃত্যু হবে। এটি নানা রোগ ও মহামারির সঙ্কেত দেয়। এই বহু মৃত্যু হতে পারে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যুদ্ধের কারণেও। 

গজ বা হাতিতে চড়ে গমনকে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। গজ হল দেবী অন্নপূর্ণা এবং বিশ্বকর্মার বাহন। তাই গজে গমনের ফলে শস্যপূর্ণ হবে বসুন্ধরা। এর ফলে মর্ত্যে কৃষিকাজের পাশাপাশি শিল্পের উন্নতি ও প্রসার ব্যাপকভাবে হয়। জীবনের সব ক্ষেত্রেই সুখ, শান্তি বজায় থাকে।

পঞ্জিকা বলছে, এ বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে মহালয়ার ঠিক ১ মাস বাদে আয়োজিত হতে চলেছে দুর্গাপূজা। কারণ, আগামী বছর দুটি অমাবস্যা একমাসে পড়েছে। আর তার জন্যই পূজা একমাস পিছিয়ে আশ্বিনের জায়গায় কার্তিকে হবে।