ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ১২:২৭:০৮ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

এবার বিশ্ব বাজারে ঢুকছে বাংলাদেশের ইন্টারনেট

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:৩৭ এএম, ২ ডিসেম্বর ২০২০ বুধবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রসার ও বিকাশের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ : ভিশন – ২০২১’ ঘোষণা করেছিলেন। মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে ডিজিটাল সেবা পৌঁছেছে সারাদেশে। ডিজিটালের সুবিধাভোগী প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহরে আপামর মানুষের কণ্ঠে আজ ধ্বনিত হচ্ছে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলার কথা। শেখ হাসিনার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ আর স্বপ্ন নয় বাস্তবে রুপ নিয়েছে। শুধু কী তাই নয়! ডিজিটালের উন্নয়নে বিশ্ব ইন্টারনেট বাজারে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। বিশ বছর আগে যেখানে ইন্টারনেট সম্পর্কে দেশের সিংহভাগ মানুষ জানতোই না। সেখানে আজ সেই ইন্টারনেট সেবা আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব, ভারত, নেপাল ও ভুটান। এদের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ভুটান ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য প্রস্তাব দিয়েছে, আর অনানুষ্ঠানিকভাবে আগ্রহ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব ও নেপাল।

বিদেশীদের এই আগ্রহের কারণে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনকি এটাকে আরো গতিশিল করতে ও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন প্রকল্প অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক। মঙ্গলবার (০১ ডিসেম্বর) গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়।

সভা শেষে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম বলেন, প্রকল্পটি নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়েছেন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন দেশেও ব্যান্ডউইথের চাহিদা বাড়ছে। এছাড়া ২০২৫ সালে একটি সাবমেরিন ক্যাবল অকেজো হয়ে যাবে। এ জন্য সময়োপযোগী একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়েছেন। প্রকল্পের আওতায় সাবমেরিন ক্যাবল ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে স্থাপন করা হবে।

প্রকল্প প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহের কথা তুলে ধরে ড. শামসুল আলম বলেন, ইন্টারনেট সেবা রিমোট (প্রত্যন্ত) এলাকায় নিয়ে যেতে বিটিসিএলকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শুধু নগরে নয়, হাওর-বাওড় ও পাহাড়ি এলাকায় ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে বিটিসিএলকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে একটি তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সরকার যে ‘রূপকল্প ২০২১’ ঘোষণা করেছিল সেই ঘোষণার আলোকে ইতোমধ্যে জেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা, মোবাইল মানি ট্রান্সফার, বিমানের টিকিট, ই-টেন্ডারিংসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বাণিজ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সঙ্গে নতুন করে সরকার আইসিটি অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সুবিধা সম্প্রসারণ ও সহজ করার কথা ভাবছে।

সূত্র জানিয়েছে, সিঙ্গাপুর থেকে ফ্রান্স পর্যন্ত সংযুক্ত এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৬ সাবমেরিন ক্যাবলটি ভারত মহাসাগর, আরব সাগর, লোহিত সাগর হয়ে ভূ-মধ্য সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। ক্যাবলটির কোর ল্যান্ডিং স্টেশন হবে সিঙ্গাপুর, ভারত, জিবুতি, মিসর ও ফ্রান্সে। বাংলাদেশের ব্রাঞ্চটি বঙ্গোপসাগর হয়ে কক্সবাজারে ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। ফলে এসব এলাকাকে প্রকল্প এলাকা হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উদ্যোগে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। চলতি বছরের অক্টোবরে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দকৃত মোট ৬৯৩ কোটি ১৬ লাখ ৭১ হাজার টাকার মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৯২ কোটি ৩৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা এবং বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) ৩০০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার জোগান দেবে। প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ের মধ্যম অগ্রাধিকার তালিকায় ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপিতে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল।

পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া প্রকল্প প্রস্তাবনায় জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় সাবমেরিন ক্যাবল ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম সংগ্রহ করে তা স্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে ১৩ দশমিক ২৭৫ কিলোমিটার কোর সাবমেরিন ক্যাবল, এক হাজার ৮৫০ কিলোমিটার ব্রাঞ্চ সাবমেরিন ক্যাবল, যন্ত্রপাতি স্থাপন, লাইট আপ এবং সিঙ্গাপুর ও ফ্রান্স ল্যান্ডিং স্টেশনে ক্যারিয়ার নিউট্রাল পিওপি পর্যন্ত ল্যান্ড ক্যাবল সংযোগ স্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে ল্যান্ডিং স্টেশনে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি স্থাপন, ডাটা সেন্টারের অবকাঠামো ও বৈদ্যুতিক কাজ, একটি ৫০০ কেভিএ স্ট্যান্ড বাই-ডিজেল জেনারেটর স্থাপন করা হবে। থাকবে স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপণ সিস্টেম, শীততাপ নিয়ন্ত্রণ সিস্টেম। প্রকল্পের আওতায় যন্ত্রপাতি স্থাপনের জন্য ভবন এবং একটি আন্তর্জাতিক মানের রেস্টহাউজ নির্মাণ করা হবে। একটি দুই হাজার ৪২৮ বর্গফুট দোতলা (নিচতলা খালি) ফাংশনাল বিল্ডিংসহ দুই হাজার ৫৯৫ বর্গফুট তিনতলা রেস্টহাউজ নির্মাণ করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশন তাদের মতামতে বলেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশব্যাপী আধুনিক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদানসহ বর্ধিষ্ণু চাহিদা পূরণে বিএসসিসিএলের সক্ষমতা অনেকাংশে বাড়বে। তাই ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ প্রস্তাবিত ‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করে।

এ প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানিয়েছেন, এ প্রকল্পটি শতভাগ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইসিটি যোগাযোগ বাড়বে। এতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হবে। এর ফলে দেশে-বিদেশে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সুবিধা প্রসারিত হবে, সহজ হবে।

-জেডসি