ঢাকা, শনিবার ১৩, ডিসেম্বর ২০২৫ ৩:৩৮:২৯ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

করোনায় বাল্যবিয়ে বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনক হারে

অনলাইন ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:৫৮ পিএম, ৬ ডিসেম্বর ২০২০ রবিবার

করোনায় বাল্যবিয়ে বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে

করোনায় বাল্যবিয়ে বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে

দেশে করোনা মহামারির মধ্যে বেড়ে গেছে বাল্যবিয়ে। আগের তুলনায় এই সময়ে বাল্যবিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩ শতাংশ। বিগত ২৫ বছরের মধ্যে এবারই এ হার সবচেয়ে বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাকালে অভিভাবকের কাজকর্ম না থাকা, সন্তানের স্কুল খোলার নিশ্চয়তা না থাকা এবং অনিরাপত্তাবোধ থেকে দেশে বেড়েছে বাল্যবিয়ে।

বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার হিসাব মতে, মে, জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে আশঙ্কাজনক হারে বাল্যবিয়ে বেড়ে গেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, করোনাকালে বাল্যবিয়ের দু’একটি ঘটনা প্রশাসন বন্ধ করতে পারছে বটে। কিন্তু অসংখ্য বাল্যবিয়ের ঘটনা প্রশাসনের আগোচরে হরহামেশাই ঘটছে।

জাা গেছে, অক্টোবরে জাতীয় সংসদ ভবনে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি করোনাকালে বাল্যবিয়ে এবং নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা বিষয়ে বৈঠক করে। এতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যপত্রে বলা হয়, কুড়িগ্রাম, নাটোর, যশোর, কুষ্টিয়া, নরসিংদী ও ঝালকাঠি জেলায় বাল্যবিয়ে বেড়ে গেছে।

সংসদীয় কমিটিতে উত্থাপিত মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনাকালের প্রথম তিন মাসে (মার্চ- জুন ’২০) ২৬৬টি বাল্যবিয়ে ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। তবে এই সময়ে সারা দেশে ২৩১টি বাল্যবিয়ে হয়েছে। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক, ৭১টি বাল্যবিয়ে হয়েছে উত্তর জনপদের জেলা কুড়িগ্রামে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাটোর জেলায়, ২৩টি। ১৫টি করে বাল্যবিয়ে হয়েছে যশোর ও কুষ্টিয়ায়। এছাড়া ঝালকাঠিতে ১০টি, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নরসিংদীতে আটটি করে, গাইবান্ধা ও কক্সবাজারে সাতটি করে, নীলফামারী ও লক্ষ্মীপুরে ছয়টি করে এবং চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে পাঁচটি করে বাল্যবিয়ে হয়েছে।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত জুনে দেশে ৪৬২ জন কন্যাশিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়। তার মধ্যে ২০৭টি বাল্যবিয়ে রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এদিকে গত মে মাসেও ১৭০টি বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসন ও সচেতন মানুষের আন্তরিকতা ও সক্রিয় উদ্যোগে ২৩৩টি বিয়ে বন্ধ করা গেছে।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম এ প্রসঙ্গে জানান, ‘দেশে ৫৯ শতাংশ মেয়ের বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যায়। আর ২২ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৫ বছরের আগে। বাল্যবিয়ে দেওয়াতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ।’

কেন করোনাকালে বাল্যবিয়ে বেড়েছে? এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘ভাইরাস সংক্রমণ রোধে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহুদিন ধরে বন্ধ। বহু মানুষ কাজ হারিয়ে বেকার। কাজ না থাকায় অনেকের ঘরেই অভাব। জীবনযাপন অনিশ্চিত। সামাজিক নিরাপত্তার বিষয় চিন্তাভাবনা করে অনেক বাবা-মা শিশুকন্যাকে নিজের কাছে রাখতে সাহস পাচ্ছেন না। তারা অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। তাই তড়িঘড়ি বিয়ে দিচ্ছেন।’

ইউনিসেফের সহযোগিতায় পরিচালিত চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮-এর ব্যবস্থাপক চৌধুরী মো. মোহাইমেন বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। চলতি বছরের এপ্রিলে চাইল্ড হেল্পলাইনে বাল্যবিবাহ-সংক্রান্ত ৪৫০টি ফোনকল আসে। অথচ মার্চে এ সংখ্যা ছিল ৩২২। মহামারির আগে যেখানে আমরা বাল্যবিবাহ-সংক্রান্ত ১০০টি কল পেতাম, এখন সেখানে কমবেশি ১৮০টি ফোনকল পাচ্ছি।’

চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ সূত্রে জানা যায়, এ সময়ে বাল্যবিবাহ-সংক্রান্ত ফোনকলের সংখ্যা আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে। অনেক পরিবারই করোনা মহামারির কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বাধ্য হয়ে তারা গ্রামে ফিরে গেছে। আর্থিকভাবে বিপন্ন এসব পরিবারের অভিভাবকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মেয়েদের নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আবার করোনাকালে অনেক প্রবাসী অবিবাহিত যুবক দেশে ফিরে এসেছেন। বাবা-মাও তাদের অপ্রাপ্তবয়স্কা কন্যাকে এরকম যুবকদের কাছে বিয়ে দিতে পেরে নিরাপদ ও স্বস্তিবোধ করছেন।

সেভ দ্য চিলড্রেনের গ্লোবাল রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৫ লাখ মেয়ে বাল্যবিয়ে করতে বাধ্য হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। চলতি বছর বাল্যবিয়ের শিকার ১০ লাখ মেয়ের সন্তানসম্ভবা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ২ লাখ মেয়ে নতুন করে বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে পড়বে। বাংলাদেশের জন্য এর প্রভাব অশুভ। বাংলাদেশ এরই মধ্যে বাল্যবিয়ের কুফল ও অভিশাপে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। ২০-এর কোঠায় বয়স, এমন প্রায় ৫০ শতাংশেরও বেশি নারীর বিয়ে হয়েছে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই। ১৮ শতাংশের বিয়ে হয়েছে ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগে। মহামারির কারণে এই সংখ্যাটি কয়েকগুণ বেড়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ের শিকার হতে পারে আরো অতিরিক্ত ২৫ লাখ মেয়ে। গত ২৫ বছরের মধ্যে এবারই বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি। ২০২৫ সালে বাল্যবিয়ের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে মোট ছয় কোটি দশ লাখ পর্যন্ত হতে পারে বলে সংস্থাটি আশঙ্কা প্রকাশ করছে।

সূত্র : বাসস