ঢাকা, রবিবার ০৫, মে ২০২৪ ১৮:৪৫:৩৭ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

পদ্মায় ফেরিডুবি: চালকের কৌশলে বেঁচে গেল ৪ শতাধিক মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৪:৫২ পিএম, ৭ ডিসেম্বর ২০২০ সোমবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার আসার পথে মাঝপদ্মায় ড্রেজারের পাইপের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ফেটে যায় ডাম্ব ফেরি রানীগঞ্জের তলা। যাত্রী ও যানবাহন ঘাটে নামিয়ে দেয়ার পর নোঙর করে রাখা অবস্থাতেই ডুবে যায় ফেরিটি। ডুবে যাবার আগে কীভাবে সাহসিকতার সাথে ফেরিটিতে থাকা ১৯টি যানবাহনসহ চার ৪ শতাধিক মানুষকে রক্ষা করেছেন, সেই বর্ণনা দিলেন চালক মোঃ ফজলুল করিম।

রাণীগঞ্জ নামের এই ফেরিটি একটি ডাম্ব ফেরি। অর্থাৎ এই ফেরিনৌকার নিজস্ব ইঞ্জিন নেই, যানবাহন ওঠানোর পর অন্য একটি শক্তিশালী জাহাজ ফেরিটিকে ঠেলে নিয়ে যায়।

ব্রিটিশ শাসনামলে এই মডেলের ফেরিগুলোর প্রচলন হয়। যার কিছু এখনো পদ্মা নদীতে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের মধ্যে চলাচল করে। রাণীগঞ্জ ফেরিটির বয়স অন্তত ৬০ বছর হবে।

রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফেরিটি ৭টি ট্রাক, ৫টি যাত্রীবোঝাই বাস ও ৭টি ছোট গাড়ি মাওয়ার শিমুলিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে যায় ফেরিটি। পাশেই চলছে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ। ফেরিটিতে যাত্রী ও কর্মীসহ চার শতাধিক মানুষ ছিল। রাত ১১টার দিকে পদ্মা সেতু সংলগ্ন হাজরা চ্যানেলের কাছাকাছি পৌঁছানোর পর সেতু স্থাপনের কাজে ব্যবহৃত ড্রেজারের পাইপের সাথে প্রবল বেগে ধাক্কা খায় ফেরিটি। শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়ে ফজলুল করিম দেখতে পান ফেরির তলা ফেটে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে।

প্রাথমিকভাবে সাব মার্সিবল পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। বুঝতে পারেন হাতে সময় কম। যে কোনো সময় ফেরি ডুবে যেতে পারে। এমন অবস্থায় ফেরির কর্মচারীদের তিনি দায়িত্ব দেন বালি, কম্বলসহ যা আছে সেগুলো দিয়ে যতোটা সম্ভব পানি ঢোকা ঠেকাতে। এরপর তিনি দ্রুত গতিতে ঘাটের দিকে রওনা হন।

তখনও ঘন কুয়াশা না পড়ায় ২০ মিনিটের মধ্যে বাংলাবাজার ঘাটে পৌঁছে যায় ফেরিটি। ততক্ষণে ফেরির ওপরে পানি উঠতে শুরু করেছে বলে জানান ফজলুল করিম। কিন্তু তিনি কোন যাত্রীকে এ বিষয়ে কিছু জানাননি।

একে একে সব গাড়ি আনলোড করার পর তিনি ঘাটের উল্টো পাশেই ফেরিটি নোঙর করেন। ফেরির কর্মী ও পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। মধ্যরাতে সম্পূর্ণ ফেরিটি ডুবে যায়।

ফজলুল করিমের পদবী ইনচার্জ মাস্টার। তিনি বলেন, আমার জীবনে এমন অভিজ্ঞতা এটাই প্রথম। আমার মাথাতে এটাই ছিল যে ঘাবড়ানো যাবে না। আমি ধৈর্য হারাই নাই আর জাহাজের কোন যাত্রীকে বুঝতে দেই নাই যে এই ঘটনা ঘটেছে। কেউ বুঝেও নাই, কতো বড় বিপদ থেকে আল্লাহয় আমাদেরে বাঁচাইছে।

পরে সোমবার বেলা একটার দিকে পুরো ফেরিটির ভেতরে পানি প্রবেশ করে পদ্মায় ডুবে যায়। ফেরিটি উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ।

এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন ফজলুল করিম।

-জেডসি