ঢাকা, সোমবার ০৬, মে ২০২৪ ৭:৪২:০০ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

মহাশূন্য থেকে ক্যাপসুলে এলো গ্রহাণুর টুকরো

অনলাইন ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:০১ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ বুধবার

ছবি: ইন্টারনেট

ছবি: ইন্টারনেট

মহাশূন্য থেকে গত সপ্তাহে পৃথিবীতে ফিরে আসা একটি ক্যাপসুল খোলার পর তার ভেতরে একটি গ্রহাণুর কুচকুচে কালো পাথর ও মাটির টুকরো পেয়েছেন জাপানী বিজ্ঞানীরা। রাইয়ুগু নামে এই গ্রহাণুর টুকরো সংগ্রহ করে তা একটি ক্যাপসুলে ভরে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিল জাপানের মহাকাশ সংস্থা আইএসএএস-র পাঠানো হায়াবুসা-টু মহাকাশযান।

যেসব পদার্থ দিয়ে সৌরজগতের সৃষ্টি হয়েছিল, সেগুলোর যে ক’টি এখনো টিকে আছে তার একটি হচ্ছে এই রাইয়ুগু নামের গ্রহাণু। শুধু তাই নয়, মহাশূন্যের গভীর থেকে (ডিপ স্পেস) এই প্রথম বড় পরিমাণে মাটি-পাথর পৃথিবীতে পাঠানো হলো।

হায়াবুসা-টু মহাকাশযানটি ২০১৮ সালের জুন মাসে প্রথম রাইয়ুগুতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিল। আর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে হায়াবুসা-২ প্রথমবারের মত সেই এক কিলোমিটার চওড়া গ্রহাণুটির ওপর অবতরণ করে।

তার পর ট্যান্টালাম নামে একটি ধাতুর তৈরি বুলেট দিয়ে গ্রহাণুটির ওপর “গুলি করা হয়।” এতে যেসব টুকরো ছিটকে পড়ে সেগুলোকে সংগ্রহ করা হয় একটি নল দিয়ে।

গত ৫ ডিসেম্বর শনিবার হায়াবুসা-টুর নমুনা বহনকারী ক্যাপসুলটি পৃথিবীতে ফিরে আসে। প্যারাসুটের সাহায্যে এটি অস্ট্রেলিয়ার উমেরা’র মরুভুমিতে নিরাপদে অবতরণ করে।

জাপানী বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত ক্যাপসুলটির তিনটি প্রকোষ্ঠের মধ্যে মাত্র একটি খুলেছেন।

বাকি দুটি প্রকোষ্ঠের একটিতে রাইয়ুগুর মাটির নিচের পদার্থ সংগৃহীত হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা এই রাইয়ুগু থেকে এমন বিশুদ্ধ পদার্থ সংগ্রহ করতে চেয়েছিলেন যা মহাশূন্যের বিকিরণ বা অন্যান্য কারণে শত কোটি বছরেও পরিবর্তিত হয়ে যায়নি। এ কারণে তাদেরকে বিস্ফোরক ব্যবহার করে তামার তৈরি একটি ক্ষেপণাস্ত্রের মতো জিনিস নিক্ষেপ করে গ্রহাণুটির উপরিতলে আঘাত করতে হয়েছিল।

এর ফলে ২০ মিটার চওড়া একটি গর্ত সৃষ্টি হয় রাইয়ুগুর বুকে। এর পর হায়াবুসা-টু তাতে অবতরণ করে এবং ওই গর্ত থেকে সংগ্রহ করে বিশুদ্ধ মহাজাগতিক পদার্থের কণা। বিজ্ঞানীরা ক্যাপসুলের এই প্রকোষ্ঠটি পরীক্ষা করে দেখবেন আরো পরে।

জাপানের মহাকাশ সংস্থা আরো ঘোষণা করেছে, ক্যাপসুলের ভেতর থেকে যে গ্যাস সংগ্রহ করা হয়েছে – তাও ওই গ্রহাণু থেকে পাওয়া।

বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, সম্ভবত সংগৃহীত মাটি-পাথরের ভেতরেই ওই গ্যাস আটকে ছিল এবং সেটাই নির্গত হয়েছে।

তার মানে হচ্ছে, ডিপ স্পেস বা মহাশূন্যের গভীর থেকে সংগ্রহ করা এটাই প্রথম গ্যাসের নমুনা।

সৌরজগতে পৃথিবীর মত পাথুরে গ্রহগুলো যে ধরণের শিলা দিয়ে তৈরি – এই গ্রহাণুগুলোও তৈরি সেই একই শিলা দিয়ে। কিন্ত এগুলো কোন কারণে সূর্যের চারদিকে ঘুরতে থাকা কোন গ্রহের সাথে জোড়া লেগে যায়নি, বরং আলাদা ভাবেই মহাশূন্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এগুলোর মধ্যে আবার রাইয়ুগু হচ্ছে একটি বিশেষ শ্রেণীর গ্রহাণু – যা সবচেয়ে প্রাচীন শ্রেণীর মহাজাগতিক পাথর। এগুলোকে বলে সি-টাইপ বা ‘কার্বনেশিয়াস এ্যাস্টরয়েড’।

প্রাণ সৃষ্টির আদি মালমশলাও এই গ্রহাণুতেই? ধারণা করা হয়, সৌরজগতের জন্মের প্রথম দিকে পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির জন্য পানিসহ আরো যেসব উপাদান দরকার – তা হয়তো এইসব গ্রহাণু থেকেই এসেছিল।

২০১৮ সালে যখন জাপানি মহাকাশযান হায়াবুসা-টু রাইয়ুগুতে পৌঁছায়, তখন এর কুচকুচে কালো রঙ দেখে বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।

একারণে মহাকাশযানটি যখন গ্রহাণুটির উপরিতলের কাছাকাছি যায়, তখন নিয়ন্ত্রণকারীদের লেজার সেন্সরগুলোকে এমনকি নতুন করে উচ্চতা মেপে নিতেও হয়েছিল। সূত্র: বিবিসি

-জেডসি