কিশোর বয়সেই বঙ্গবন্ধু নেতাজির দ্বারা অনুপ্রাণিত হন: দীপু মনি
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৯:৫০ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০২১ শনিবার
কিশোর বয়সেই বঙ্গবন্ধু নেতাজির দ্বারা অনুপ্রাণিত হন: দীপু মনি
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, কিশোর বয়সেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
আজ শনিবার উপমহাদেশে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরোগামী নেতা নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মদিন এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি উপমহাদেশের এই দুই মহান নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক ওয়েবিনারের আয়োজন করে।
'নেতাজী ও বঙ্গবন্ধু: ভারতবর্ষের বৃটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ' শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপুমনি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী।
আলোচনায় অংশ নিয়েছেন, এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর শৈশবের বন্ধু অধ্যাপক ক্ষেত্রেশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পুত্র অধ্যাপক মহেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মুখার্জি তদন্ত কমিশনের অন্যতম সাক্ষী ও কলকাতা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক নন্দলাল চক্রবর্তী, নেতাজির আজাদ হিন্দ ফৌজের গবেষক ও কলকাতার শ্রী শিক্ষায়তন কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক মৈত্রেয়ী সেনগুপ্ত, নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি ও নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের অন্যতম অধিনায়ক লোকমান খান শেরওয়ানীর পৌত্রী শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম ও নির্মূল কমিটি যশোর শাখার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক সাজেদ রহমান।
ওয়েবিনারে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, উপমহাদেশে মানব মুক্তির জন্য যে মহান মানুষরা সংগ্রাম করেছেন তাঁদের মধ্যে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম সর্বাগ্রে আসে। নেতাজি ঔপনিবেশিক শাসন শোষণের কবল থেকে ভারতবর্ষের মানুষকে মুক্ত করার জন্য সশস্ত্র বিপ্লবের পথ বেছে নিয়েছিলেন, একইভাবে বঙ্গবন্ধুও বেনিয়া এবং হানাদার পাকিস্তানি শাসকদের কবল থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করার জন্য সশস্ত্র জনযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইয়ে অন্তত তিনবার নেতাজির কথা বলেছেন। অর্থাৎ কিশোর বয়সেই বঙ্গবন্ধু নেতাজির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে মহাত্মা গান্ধী অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে বিশ্বাস করতেন, নেতাজী বেছে নিয়েছিলেন সশস্ত্র সংগ্রামের পথ। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য সাফল্যের সঙ্গে মহাত্মা গান্ধী ও নেতাজীর দুই ধারার সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন। এ দুইজন মহান নেতার জীবন ও আদর্শ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আমাদের সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। মানব মুক্তির পথ আরও প্রশস্ত করতে হবে।
বাংলাদেশে নিয়োজিত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনস্বীকার্য ক্যারিশমা এবং তাদের ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তা যুগ যুগ ধরে ভারতীয় ও বাংলাদেশীদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে। তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজ সংগঠিত করার ক্ষেত্রে নেতাজির বীরত্বপূর্ণ প্রচেষ্টার কথা স্মরণ করেন, যা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চ-এর ভাষণ বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছিল। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিশ্ব ব্যক্তিত্বের এই ত্যাগ তরুণ প্রজন্মকে জাতি গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করতে অনুপ্রাণিত করবে।
ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য বক্তারা বলেন, নেতাজী ও বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন যুদ্ধ-সন্ত্রাস কবলিত বর্তমান বিশ্বে বহু সমস্যার সমাধান করতে পারে। ভারত ও বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তকে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও দর্শন তুলে ধরতে হবে, যাতে নতুন প্রজন্ম এই দুই মহান নেতার স্বপ্ন, নেতৃত্ব এবং আত্মত্যাগের মহিমা সম্পর্কে জেনে আলোকিত হতে পারে।
সভাপতির বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির বলেন, ভারতের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অতুলনীয় বীরত্ব ও আত্মত্যাগ ৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং অন্যান্য রচনা ও ভাষণে উল্লেখ করেছেন, কীভাবে অখণ্ড ভারতবর্ষের স্বাধীনতার সংগ্রামের মহান নেতা নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু এবং সূর্য সেন, প্রীতিলতা, বাঘা যতীন প্রমূখ অগ্নিযুগের বিপ্লবীরা তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।
তিনি বলেন, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর রাজনৈতিক দর্শন ছিল গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও একই দর্শনের বিশ্বাস করতেন, যা প্রতিফলিত হয়েছে দুই ভ্রাতৃপ্রতিম রাষ্ট্রের সংবিধানে।