ঢাকা, শনিবার ২৭, এপ্রিল ২০২৪ ২:০৭:২৮ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

সেই বজ্রকণ্ঠ ভাষণ: ৫০ বছর পরও আবেদনময়

প্রত্যয় ফয়সাল

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:০৮ পিএম, ৭ মার্চ ২০২১ রবিবার

সেই বজ্রকণ্ঠ ভাষণ: ৫০ বছর পরও আবেদনময়

সেই বজ্রকণ্ঠ ভাষণ: ৫০ বছর পরও আবেদনময়

কিশোর লেখার প্রিয় ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয় জানো ৭ মার্চ বাঙালির জীবনে এক ঐতিহাসিক দিন। এ দিনটির বিশেষ আবেদন রয়েছে আমাদের জীবনে। ১৯৭১ সালের এদিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালিন রেসকোর্স ময়দানে (এখন যেখানে শিশুপার্ক দাঁড়িয়ে আছে) তাঁর বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা দিয়েছিলেন এক বজ্রকণ্ঠ ভাষণ। ঐতিহাসিক এই ভাষণে তিনি ঘোষণা করেন আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামের। তিনি বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তাঁর ভরাট বজ্রকণ্ঠের আহবানে আলোড়িত হয়ে ওঠে সারা দেশ, জাতি। ঘাবড়ে যায় পৈশাচিক পাক শাসকের দল; নড়ে ওঠে তাদের ক্ষমতার ভীত।
ঐতিহাসিক ভাষণে উৎসাহিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর সে ডাকেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে সমগ্র জাতি। নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান, আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি ও সমগ্র জাতির বিশাল ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা।
সেদিন রাজধানী ঢাকা ছিল মিছিলের শহর। ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সব মিছিলই এসে থামে রমনা রেসকোর্স ময়দানে। রেসকোর্স রূপ নেয় জনসমুদ্রে। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে লাখো মানুষে সয়লাব হয়ে যায় বিশাল ময়দান। বাতাসে উড়ে বাংলার মানচিত্র আঁকা লাল সূর্যের অসংখ্য পতাকা। আকাশে উত্থিত বাঁশের লাঠির সঙ্গে লাখো কণ্ঠের স্লোগানে কেঁপে উঠে জনসমুদ্র, সারা শহর।
ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল ৩টা ২০ মিনিট। সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি আর হাতকাটা কালো কোট পরে বাঙালির প্রাণপুরুষ প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু দৃপ্তপায়ে উঠে আসেন মঞ্চে। দাঁড়ান মাইকের সামনে। ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে জানিয়ে দেন বাঙালির মুক্তির কথা; স্বাধীনতার কথা।
মাইকের সামনে প্রিয় নেতা শেখ মুজিব তাঁর বজ্রকণ্ঠে দিলেন সেই ঐতিহাসিক ভাষণ। তিনি বললেন, তিনি বাঙালির মুক্তি চান। কিন্তু পাকিস্তানিরা বাঙালির মুক্তি দিতে চায় না। আর তাই এবার আর চেয়ে-চিন্তে মুক্তি পাওয়া যাবে না। মুক্তির জন্য সংগ্রাম করতে হবে।
২৫ মার্চ সংসদ অধিবেশনের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিলো। কিন্তু শেখ মুজিব বলে দিলেন, ‘রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি, শহীদের রক্ত মাড়িয়ে ২৫ তারিখের অধিবেশনে যোগ দিতে যাবো না।’ তার আগে সব শহীদদের বিচার করতে হবে। আন্দোলনের সময় পাকিস্তানি শাসকেরা শত শত বাঙালিকে গুলি করে হত্যা করেছিলো। আগে সেসব হত্যার বিচার করতে হবে। তারপর অধিবেশনে যোগ দেবার কথা আসবে।
তিনি বললেন, ‘আজ থেকে কোর্ট-কাচারি, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। কোনো কর্মচারি অফিসে যাবেন না-এ আমার নির্দেশ। গরীবের যাতে কষ্ট না হয় তার জন্য রিকশা চলবে, ট্রেন চলবে আর সব চলবে।... শুধু পূর্ব বাংলার আদান-প্রদানের জন্য ব্যাংকগুলো দু’ঘণ্টার জন্য খোলা থাকবে। পূর্ব বাংলা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে টাকা যেতে পারবে না।... টেলিগ্রাফ টেলিফোন বাংলাদেশের মধ্যে চালু থাকবে, তবে সাংবাদিকরা বহির্বিশ্বে খবর পাঠাতে পারবেন।’
তিনি বললেন, ‘বাংলার ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো, যার যা আছে তাই নিয়ে শত্র“র মোকাবিলা করতে হবে। ...আমরা তাদের ভাতে মারবো-পানিতে মারবো।’ উদাত্ত কণ্ঠে তিনি আরও বললেন-‘আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, যদি আমার সহকর্মীরা না থাকেন, আপনারা সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন।... বাঙালিরা যখন মরতে শিখেছে-তখন কেউ তাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।’
তিনি বললেন, ‘আপনারা আমার উপর ছেড়ে দেন-আন্দোলন কিভাবে করতে হয় তা আমি জানি।’ তিনি আরও বললেন, ‘যার যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকুন। মনে রাখবেন রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্ল¬াহ। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ... জয় বাংলা।’
সেদিন সেই ভাষণে দুলে উঠেছিলো পাকিস্তান নামের দেশটির ভিত্তিমূল পর্যন্ত। সেই ভাষণে শেখ মুজিব পুরো বাঙালি জাতিকে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ দিক নির্দেশনা। আর তার কথা বাঙালিরা পালন করেছিলো অক্ষরে অক্ষরে। সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো বাংলার সাত কোটি মানুষ।
রেসকোর্স ময়দান থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সরাসরি প্রচারের সমস্ত আয়োজন ছিল রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রের। প্রচার শুরুও হয়েছিল। কিন্তু সামরিক কর্তৃপক্ষ প্রচার বন্ধ করে দিলে বেতারের সমস্ত বাঙালি কর্মচারি বেতার ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। বন্ধ হয়ে যায় বেতার। ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে পড়ে নানা গুজব। পরে গভীর রাতে সামরিক কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধুর পূর্ণ ভাষণ সম্প্রচারের অনুমতি দিতে বাধ্য হয়।