ঢাকা, রবিবার ০৫, মে ২০২৪ ১৫:২৮:০৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

বীর মুক্তিযোদ্ধা রাবেয়া, ছদ্মবেশে ঘুরতের তথ্যের সন্ধানে

অনু সরকার

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৮:১৮ পিএম, ২৫ মার্চ ২০২১ বৃহস্পতিবার

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

বীর মুক্তিযোদ্ধা রাবেয়া খাতুন। ১৯৭১ সালে বয়স ছিলো মাত্র ১৪। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দীর্ঘ নয় মাস দেশের ভেতরে থেকে কাজ করেছেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র আনা-নেওয়া এবং ছদ্মবেশে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করেছেন এই কিশোরী৷ পাক সেনাদের কবল থেকে বাঁচতে কচুরিপানায় মাথা ঢেকে নদীতে লুকিয়ে ছিলেন৷

গাজীপুরের কালীগঞ্জে ১৯৫৭ সালের পহেলা জুলাই জন্ম গ্রহণ করেন রাবেয়া খাতুন৷ তার বাবার নাম আলী আজম খাঁ এবং মা আউলিয়া খাতুন৷ ১৯৭১ সালে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন রাবেয়া৷ তবে এই অল্প বয়সেই নারীনেত্রী ফোরকান বেগম এবং তার মা মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া বেগমের সাহচর্য এবং উৎসাহে মুক্তিযুদ্ধের জন্য কাজ করেন রাবেয়া৷

রাবেয়া এবং তার সঙ্গিরা বিডিআর-এর এক কমকর্তার কাছে স্থানীয়ভাবে গোয়েন্দাগিরি এবং প্রাথমিক নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন৷ কিশোরী রাবেয়া যুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থেকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় অস্ত্র বহন করে নিয়ে যেতেন৷ ছদ্মবেশে তথ্য সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিতেন৷

মুক্তিযুদ্ধে নিজের কাজ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি কখনো সালোয়ার কামিজ পরে, কখনো বোরকা পরে আবার কখনো ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে যেতাম৷ আমাদের গ্রামটা শীতলক্ষ্মা নদীর পাড়ে৷ ফলে অনেক সময় আমরা নৌকার মধ্যে ডাল-পালা, গাছের পাতা, কলা গাছ প্রভৃতি নিয়ে যেতাম৷ ফলে পাক সেনা কিংবা তাদের দোসররা দেখলেও যাতে মনে করতো, ছাগল-গরুর জন্য হয়তো এপার থেকে ওপারে খাবার নিয়ে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা নদীপথেই বেশি যাতায়াত করতাম৷ অনেক সময় অস্ত্রগুলোকে কাপড়ে পেঁচিয়ে নৌকার পাটাতনের নিচে রাখতাম৷ আর আমরা বোরকা পরে নাইয়রি সেজে যেতাম৷ কালীগঞ্জ উপজেলার গহীন জঙ্গলে মুক্তিযোদ্ধাদের শিবির ছিল৷ সেখানে গিয়ে আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতাম৷`

এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ফোরকান বেগমের নির্দেশ মত খাবার তৈরি করে ভারতে পাঠাতেন৷ কালীগঞ্জে পাক সেনারা বোমা ফেলতে শুরু করলে রাবেয়া এবং তার সঙ্গিরা পাশের গ্রামে এবং পরে ঘন বনের মধ্যে গিয়ে আশ্রয় নেন৷

দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রতিটি দিনই ছিল ঘটনাবহুল৷ এর মধ্য থেকে এক দিনের ঘটনা স্মরণ করে রাবেয়া খাতুন জানান, ‘বালু নদীর তীরে পূবাইল নামে একটি জায়গা আছে৷ সেখানে  দিয়ে আমরা বালু নদী পার হতে যাচ্ছিলাম৷ এমন সময় দেখি পাক সেনারা আসছে৷ তখন আমরা নদীর পানিতে নেমে কচুরিপানা দিয়ে মাথা ঢেকে বসেছিলাম৷ এভাবে বেশ কয়েক ঘণ্টা পানিতে ডুবে থেকে অপেক্ষা করি সবাই। পরে পাক সেনারা চলে যাওয়ার পর আমরা পানি থেকে উঠি। জঙ্গলের পাশ দিয়ে বাড়িতে ফিরে যাই৷`

দেশ স্বাধীন হলে আবারও লেখাপড়া শুরু করেন রাবেয়া৷ পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে এবং জাতীয় নির্বাচনের প্রচার অভিযানে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন৷ ১৯৭৪ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন৷ এরপরই বিয়ে হয়ে যায় তার৷

১৯৮৫ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে চাকুরিতে যোগ দেন৷ তিনি ঢাকায় যুব উন্নয়নের পোশাক শাখায় নির্দেশিকা হিসেবে চাকুরি করেছেন।

রাবেয়া খাতুন দুঃখের সাথে জানান, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ নেওয়ার গুরুত্ব বুঝতে না পারার কারণে তিনি কখনই এ ব্যাপারে চেষ্টা করেননি৷

সূত্র: ডয়চে ভেলে