ঢাকা, মঙ্গলবার ৩০, এপ্রিল ২০২৪ ৭:১০:০৮ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

একনেকে উঠছে ‘স্কুল মিল’ প্রকল্প, ব্যয় কমল ২ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:৪০ পিএম, ৩০ মে ২০২১ রবিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বিস্তর সমালোচনার পর কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের পরিকল্পনা বাদ রেখে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার সরবরাহের প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়েছে। এবার সেই প্রকল্প থেকে ব্যয় কমলো ২ হাজার ৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটির জন্য প্রথম পর্যায়ে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছিল ১৯ হাজার ২৯৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা। কিন্তু এতে ভেটো দেয় পরিকল্পনা কমিশন। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার গঠন করা হয় ব্যয় যুক্তিযুক্তকরণ কমিটি। ফলে এই টাকা কমিয়ে এখন ১৭ হাজার ২৯০ কোটি ২২ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের পুরো অর্থ যোগানো হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।

‘প্রাইমারি স্কুল মিল’ নামের এ প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেন, প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ১৪ জুলাই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। এটি এখন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পুষ্টির যোগান বাড়াতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৪৯২টি উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার ২১টি শিক্ষা থানার শিক্ষার্থীদের দুপুরে স্কুলে গরম খাবার দেওয়া হবে।  

গরম খাবার বলতে মূলত ডাল আর স্থানীয় সবজি দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানোর কথা বলা হয়েছে এখানে।

প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- ২০৩০ সালের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী সকল শিক্ষার্থীকে পর্যায়ক্রমে স্কুল মিল কার্যক্রমের আওতায় এনে তাদের শিক্ষা, পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় অবদান রাখা; নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার সরবরাহের মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা; শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমার এবং ভর্তি ও উপস্থিতির হার বাড়ানো।

২০২১ সালের জুন থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের জন্য শুরুতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল একহাজার ৯৬১ কোটি টাকা।

এর মধ্যে খিচুড়ি রান্না ও পরিবেশনের প্রশিক্ষণ নিতে ১ হাজার সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীর বিদেশ সফরের একটি প্রস্তাব ছিল, যা নিয়ে গতবছর ব্যাপক সমালোচনা হয়।

শেষ পর্যন্ত ১ হাজার লোকের বিদেশ সফরের ওই অংশটি বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব (পরিকল্পনা) মো. আশরাফুজ্জামান।

তিনি বলেন, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি) এখন প্রয়োজনভিত্তিক দেশে বা বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। ডব্লিউএফপির সাথে সমঝোতার স্মারকের আওতায় প্রকল্পে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হওয়ায় আমরা মূল প্রকল্প থেকে বিদেশে প্রশিক্ষণের অংশ বাদ দিয়েছি।

ডব্লিউএফপির এক চিঠিতে বলা হয়, ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত ৫ বছরে এই প্রকল্পে সংস্থাটি ৭০ লাখ ডলারের কারিগরি সহায়তা দেবে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৫৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সর্বপ্রথম ২০০১ সালে বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি শুরু করে। এ কর্মসূচির ইতিবাচক ফলাফল নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মাধ্যমে ২০১০ সালের জুলাই হতে ২০১৪ সালের জুনে দারিদ্র্য পীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং শীর্ষক একটি প্রকল্প দেশের ছয়টি বিভাগের ২৩টি জেলার নির্বাচিত ৮৬টি উপজেলায় বাস্তবায়নের জন্য নেয়। পরবর্তী সময় প্রকল্পটি তিন বার সংশোধন করা হয়।

সর্বশেষ দেশের আট বিভাগের ৩৯টি জেলার নির্বাচিত ১০৪টি উপজেলায় ৩১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রতিদিন পুষ্টিকর বিস্কুট সরবরাহের জন্য ৪ হাজার ৯৯১ কোটি ৯৭ লাখ টাকার প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই (তৃতীয় সংশোধনীসহ) একনেকে অনুমোদিত হয়। পরবর্তী সময়ে প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

এ প্রকল্পে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ৩৩৮ কিলোক্যালরি খাদ্য নেওয়াসহ দৈনন্দিন অনুপুষ্টি চাহিদার ৬৭ শতাংশ পূরণ করেছে। তাছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সমতাভিত্তিক ভর্তি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক ভর্তির হার ২০১০ সালের ৮৪ দশমিক ৮০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯ সালে ৯৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ হয়েছে।

-জেডসি