ঢাকা, বুধবার ২৪, এপ্রিল ২০২৪ ২৩:১৩:৪০ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

টিকটক তারকা হতে গিয়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন অনেক তরুণী

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:৫২ পিএম, ২ জুন ২০২১ বুধবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

স্মার্টফোনের জনপ্রিয় মিউজিক অ্যাপ টিকটকের ১৫ মিনিটের ভিডিওর নেশায় আসক্ত এ সময়ের তরুণরা। এই অ্যাপ ব্যবহার করে দ্রুত জনপ্রিয় হওয়ার লোভে পড়েছেন অনেকেই। আর এই সুযোগই নিচ্ছে একটি পাচারকারী চক্র। টিকটকের আড়ালে দ্রুত তারকা খ্যাতি এবং দেশের বাইরে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মানবপাচার করা হচ্ছে ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল একটি ভিডিওর সূত্র ধরে উঠে আসে টিকটকের আড়ালে মানবপাচারের ভয়াবহ চিত্র। এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত টিকটক হৃদয়সহ দেশ ও দেশের বাইরে অনেককে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

টিকটক হৃদয়ের ফাঁদে পড়ে ভারতে পাচার হওয়ার ৭৭ দিন পর দেশে ফিরে আসা এক কিশোরী রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মামলা করেছেন। মঙ্গলবার মধ্যরাতে ওই কিশোরী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ৩। এই মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বুধবার বেলা ১১টায় রাজধানীর শ্যামলীতে তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তেজগাঁও জোনের ডিসি মো. শহিদুল্লাহ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মেহেদী হাসান, মহিউদ্দিন ও আব্দুল কাদের।

ডিসি শহিদুল্লাহ বলেন, টিকটক হৃদয়ের মাধ্যমে ভারতে পাচার হওয়া এক কিশোরী তিন মাসের নির্মম নির্যাতন ও বন্দিদশা থেকে পালিয়ে দেশে ফিরে হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেছেন। এই মামলায় ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এরমধ্যে বাংলাদেশের ৫ জন। তারা দেশে অবস্থান করছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। বাকি ৭ জন ভারতের নাগরিক।

টিকটকের গ্রুপের মাধ্যমে হাতিরঝিলের মধুবাগ ব্রিজ এলাকায় হৃদয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় ওই কিশোরীর। হৃদয় তাকে কখনো টিকটক স্টার বানানো, কখনো ভালো বেতনের চাকরির অফার দিয়ে প্রলুদ্ধ করে।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নারায়ণগঞ্জের অ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ড পার্কে ৭০/৮০ জনকে নিয়ে টিকটক হ্যাংআউট ও একই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের আফরিন গার্ডেন রিসোর্টে ৭০০ থেকে ৮০০ জন তরুণ-তরুণকে নিয়ে পুল পার্টির আয়োজন করে হৃদয় বাবু। ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ায় বাউল লালন শাহ মাজারে আয়োজিত টিকটিক হ্যাংআউটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয় এই মানবপাচারকারীর চক্রের অন্যান্য সহযোগীদের সহায়তায় কৌশলে এই কিশোরীকে ভারতে পাচার করে হৃদয় বাবু। পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ার পর থেকে পালিয়ে দেশে ফেরা পর্যন্ত তার লোমহর্ষক করুন কাহিনী কল্পনাকেও হার মানিয়েছে।

মামলার বাদী ওই কিশোরীরর বরাত দিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ভারতে পাচারের পর তাকে ব্যাঙ্গালুরুর আনন্দপুর এলাকায় পর্যায়ক্রমে কয়েকটি বাসায় রাখা হয়। ভারতে অবস্থানের সময়ে এ চক্রের মাধ্যমে পাচার হওয়া আরো কয়েকজন বাংলাদেশী কিশোরীকে দেখেন, যাদেরকে তিনি আগেই চিনতেন। পাচারের শিকার অনেকেই তার পূর্বপরিচিত। তাদেরকেও সুপার মার্কেট, সুপার শপ, বিউটি পার্লারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয়েছে।

ব্যাঙ্গালুরুতে পৌঁছার কয়েকদিন পরই ভিকটিমকে চেন্নাইয়ের ওইয়ো (OYO) হোটেলে ১০ দিনের জন্য পাঠানো হয়। সেখানে তিনি অমানবিক শারীরিক ও বিকৃত যৌন নির্যাতনের শিকার হন। সামান্য দয়াও দেখায়নি এ চক্রের সদস্যরা। বরং কৌশলে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে কিংবা জোরপূর্বক বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করে পরিবারের সদস্য পরিচিতদের তা পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে জিম্মি করে রাখা হয় তাকে। ভারতে পাচারের ৭৭ দিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওর ঘটনার ভিকটিম জেসমিন মীমের সহযোগিতায় দেশে ফিরে আসেন এই কিশোরী।

মামলায় অভিযুক্ত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনকে সাতক্ষীরা জেলার সীমান্তবর্তী দাবকপাড়া কালিয়ানী এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাচারের কাজে ব্যবহৃত ২ টি মোটরসাইকেল, একটি ডায়রি, ৪টি মোবাইল ও ১টি ভারতীয় সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, তারা একটি মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য। এই কিশোরীসহ তারা এক হাজারের বেশি নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করেছে।

গ্রেপ্তার মেহেদী হাসান একাই প্রায় ৭-৮ বছর ধরে ভারতে নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে।

গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল ও ডায়রিতে হৃদয় বাবু, সাগর, সবুজ, রুবেলের ভারতীয় মোবাইল নম্বর পাওয়া গেছে। পাশাপাশি তার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত ডায়রিতে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া জেসমিনের আধার নম্বর ও ভারতে পাচার হওয়া উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণীদের নাম ও মানবপাচারে জড়িত ব্যক্তিদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে।

এই চক্রটি সীমান্তবর্তী এলাকায় পাচারের কাজে ব্যবহারের জন্য ঘর নির্মাণ করেছে। সেখানে পাচারের জন্য আনা তরুণীদের রেখে পরে মোটরসাইকেলে সীমান্ত পার করে ভারতীয় দালালের হাতে তুলে দেয়া হতো।

 

-জেডসি