কুমিল্লার শৈল্পিক ছোঁয়ায় ফিরবে মসলিন
অনলাইন ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৯:২৯ পিএম, ২ জুন ২০২১ বুধবার
কুমিল্লার শৈল্পিক ছোঁয়ায় ফিরবে মসলিন
হারিয়ে যাওয়া বাংলার ঐতিহ্যবাহী মসলিন পুনরুদ্ধারে কুমিল্লার চান্দিনা ও দেবীদ্বারে চরকায় সুতা কাটা শুরু হয়েছে। তৈরিকৃত সুতায় এ পর্যন্ত পাঁচটি মসলিন শাড়ি, সাতটি মসলিন ওড়না ও ছয়টি নমুনা কাপড় তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।
কুমিল্লার ওই দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা সোনাপুর ও রামপুরে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে শুরু হওয়া মসলিন সুতা দিনে দিনে সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর হচ্ছে। আট মেট্রিকাউন্ট থেকে বর্তমানে ৫৫৬ মেট্রিকাউন্ট সুতা তৈরি করছেন এখানকার তাঁতিরা, যা প্রকল্পের সাফল্য বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের সোনালী ঐতিহ্য মসলিন তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার প্রকল্প এর আওতায় চান্দিনা উপজেলার সোনাপুর, দেবীদ্বার উপজেলার রামপুর গ্রামের অন্তত ৪৯টি চরকায় সুতা তৈরির কাজ করছেন নারীরা। যার মধ্যে চান্দিনার সোনাপুর কারখানায় ৩৭টি চরকা। কেউ মাসিক বেতনে আবার কেউবা দৈনিক বেতনে ‘মসলিন-এর সূক্ষ্ম সুতা তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ফুটি কার্পাস তুলা নামের বিশেষ এক ধরনের তুলা দিয়ে তৈরীকৃত ওই সুতায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ তারাবো এলাকায় হ্যান্ডলুমে বুনন করা হয় মসলিন শাড়ি।
সূত্র মতে, ‘মসলিন’ শব্দটি এসেছে ইরাক থেকে। বিশেষ ওই শাড়ি ইরাকের ‘মসুল’ নামক স্থানে অতিসূক্ষ্মভাবে তৈরির ফলে তৎকালীন ইংরেজরা এ কাপড়ের নাম দিয়েছিল ‘মসলিন’। বাংলার মসিলন কাপড় নেওয়ার জন্য ব্রিটিশ রানি থেকে শুরু করে অভিজাত নারীরা অপেক্ষা করতেন। কাচের মতো স্বচ্ছ ওই মসলিন কাপড় একটি আংটির ভেতর দিয়ে অনায়াসে আনা-নেওয়া করা যেত এবং একটি দিয়াশলাই বক্সে রাখা যেত বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।
বর্তমানে দেশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান মাঠ, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে গাজীপুরের শ্রীপুর খামার, নরসিংদীর পলাশ এলাকার তাঁত বোর্ডের মাঠে বিশেষ ফুটি কার্পাস তুলা চাষাবাদ হচ্ছে। সেই তুলায় চান্দিনার সোনাপুর ও দেবীদ্বারের রামপুর এলাকার দুটি কারখানায় তৈরি হচ্ছে চরকায় কাটা সূক্ষ্ম ওই সুতা।
প্রকল্প পরিচালক ও তাঁত বোর্ডের প্রধান (পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন) মো. আইউব আলী জানান, ১৮৫৬ সালের পর বাংলাদেশে আর মসলিন তৈরি হয়নি। পাকিস্তান শাসনামল থেকে শুরু করে বাংলাদেশের ৪০ বছরেও কেউ উদ্যোগ নেয়নি। ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে ‘মসলিন’ পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দেন। তার পর থেকে শুরু হয় গবেষণা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক গবেষণা করে ‘ফুটি কার্পাস’ তুলা চাষ করে সাফল্য এনে দেন। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ‘বাংলাদেশ সোনালি ঐতিহ্য মসলিন তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার প্রকল্প’ শুরু হয়।
তিনি জানান, ওই প্রকল্পের অধীনে ৪০ জনের মধ্যে ছয়জনকে বাছাই করে চান্দিনার সোনাপুরে প্রশিক্ষণ দিয়ে শুরু করা হয় চরকায় সুতা তৈরির কাজ। হাতের চরকায় প্রথম দিকে ৮-১০ মেট্রিকাউন্ট সুতা তৈরি করলেও বর্তমানে ৫৫৬ মেট্রিকাউন্ট মিহি সুতা তৈরি করছেন এখানকার তাঁতিরা।
চান্দিনা ও দেবীদ্বারের চরকায় তৈরি সুতায় প্রথম দিকে ছয়টি নমুনা কাপড় তৈরি করা হলেও পরবর্তী সময়ে পাঁচটি শাড়ি তৈরি হয়। এর মধ্যে পরীক্ষামূলক প্রথম শাড়িটি ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়া হয়।
প্রকল্প পরিচালক আরো বলেন, ফুটি কার্পাস তুলায় প্রতিটি শাড়ি তৈরিতে খরচ হচ্ছে তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা। বাংলার ঐতিহ্য মসলিন পুনরুদ্ধার করতে আমাদের প্রকল্প নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
সূত্র: বাসস