ঢাকা, শনিবার ২৭, এপ্রিল ২০২৪ ০:২৩:১৫ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের শিকার মৃত কিশোরের পরিবার যা বলছে

বিবিসি বাংলা অনলাইন

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৬:৩৫ পিএম, ৮ জুলাই ২০২১ বৃহস্পতিবার

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

ঢাকায় অ্যানোরেক্সিয়া এবং বুলিমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এক কিশোরের মৃত্যুর পর তার পরিবার অভিযোগ করেছে, স্কুলের সহপাঠী ও শিক্ষকদের বুলিয়িং এর শিকার হবার ফলে এই ঘটনা ঘটেছে।

ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি পোষ্ট বুধবার রাত থেকে কয়েক হাজার মানুষ শেয়ার করেছেন, যাদের প্রায় সবাই বডিশেমিং, বুলিয়িংয়ের মত ইস্যুতে নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন, প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

কিশোরের বাবা মোঃ ফজলুল করিম বিবিসিকে বলেছেন, তার ছেলের ওজন স্বাভাবিকের চাইতে বেশি হবার কারণে, স্কুলে তাকে প্রায় নিয়মিতই বুলিয়িং ও উপহাসের শিকার হতে হত।

কিন্তু স্কুলে কখনো এ নিয়ে অভিযোগ জানাননি তারা। এখনো বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোন অভিযোগ জানাতে চান না তারা। কিন্তু পরিবার চায় স্কুলে বুলিয়িং বন্ধ করার জন্য যেন সরকার ব্যবস্থা নেয়।

এদিকে, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখা, ছেলেটি যেখানকার শিক্ষার্থী ছিল, তার কর্তৃপক্ষ বলছে বুলিয়িং এর কোন অভিযোগ সম্পর্কে তারা অবগত নন।

কী হয়েছিল?
ওই কিশোরের পরিবার জানিয়েছে, গত ২৫শে জুন রাতে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি করা হয়েছিল ছেলেটিকে। পরদিন রাত ১১টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে।

ছেলেটির বাবা মোঃ ফজলুল করিম বিবিসিকে বলেছেন, ২০২০ সালের জুন-জুলাইতে ছেলেটির ওজন ছিল ৯৩ কেজি। এরপর জুলাই মাসের দিকে সে খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে।

ডিসেম্বরে ছেলেটির ওজন দাঁড়ায় ৬০ কেজি। পরিবার ভাবছিল স্বাভাবিক নিয়মে ওজন কমছে ছেলেটির। জানুয়ারির শেষ দিকে ছেলেটির শারীরিক কিছু পরিবর্তন নজরে আসে সবার।

তার পায়ের গোড়ালি ফুলে গিয়েছিল, তার স্বাভাবিক প্রাণচাঞ্চল্য হারিয়ে গিয়েছিল এবং সে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ছিল।ফেব্রুয়ারিতে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানে ছেলেটি প্রথম জানায় সে ইন্টারনেট থেকে একটি জনপ্রিয় ডায়েট প্রোগ্রাম অনুসরণ করে ওজন কমাচ্ছিল। ওই সময়েই তার একটি মানসিক পরিবর্তনও হচ্ছিল।

তারা বাবা বলছেন, "সে ডাক্তারকে বলেছে কোন বেলায় সামান্য বেশি খেলে বাথরুমে গিয়ে বমি করে ফেলত। আমরা কেউ বিষয়টি খেয়াল করিনি।

"ওই সময়টাতে সে খেতে ভয় পেত, আবার যদি ওজন বেড়ে যায়, তাহলে আবার স্কুলে সবাই ক্ষেপাবে এমন একটি ভয় চেপে বসেছিল তার মনে, সেটা সে ডাক্তারের কাছে স্বীকার করেছিল।"

এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে ছেলেটিকে একইসঙ্গে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ডায়েটিশিয়ান, সাইেকালজিস্ট এবং সাইক্রিয়াটিস্টের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা দেয়া শুরু হয়।

কিন্তু ততদিনে তার ইমিউনিটি অর্থাৎ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে কমে গেছে। সেই সঙ্গে তার ওজন দ্রুত কমে যাচ্ছিল। মে মাসের দিকে তার ওজন দাঁড়ায় ২৯ কেজি।

চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, ছেলেটি অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা নামে একটি অসুখে ভুগছে।

যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য বিভাগ এনএইচএস বলছে, অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা আহার সংক্রান্ত একটি ব্যাধি, যা নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তির মধ্যে মানসিক সমস্যাও তৈরি করে।

এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি না খেয়ে থেকে অথবা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম খেয়ে ওজন কমাতে চান, এবং ওজন বেড়ে যাওয়া নিয়ে ভীতিতে ভোগেন। বিনোদন জগতের তারকাদের অনেকে এই রোগে ভোগেন বা ভুগতেন বলে জানা যায়।

এদিকে, নিয়মিত চিকিৎসা এবং মনোবিদের সাহায্যে ছেলেটির ওজন কিছুটা বাড়লেও, শেষ পর্যন্ত জুন মাসের শেষদিকে সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। সেই প্রেক্ষাপটেই ২৫ জুন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

স্কুলে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ আর উপহাসের শিকার: 
পরিবারের অভিযোগ বয়ঃসন্ধির সময় থেকে মানে ১১-১২ বছর বয়স থেকে ছেলেটিকে স্কুলে বাড়তি ওজনের জন্য প্রায়ই ব্যঙ্গ ও উপহাসের শিকার হতে হত। মাঝে মধ্যে বিষয়টি বাড়িতে এসে সে জানিয়েছে।

ছেলেটির বাবা মি. করিম বলেছেন, "গত বছর দুয়েক ধরে পরিস্থিতি এমন হল সে প্রায়ই স্কুলে যেতে চাইতো না। স্কুলে যাবার আগে বা কখনো স্কুলে যাওয়ার পর সে অসুস্থ হয়ে পড়ত।"

তিনি বলেন, "আমরা ভেবেছি স্কুলে যেতে চায় না, তাই এমন করছে। কখনো স্কুলে গিয়েও অসুস্থ হয়ে পড়ত, সেখান থেকে আমাদের ফোন দেয়া হত, নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু ও তো কোচিংয়ে যেত, সেখানে যাওয়ার আগে এমন করতো না।"

বুলিয়িংয়ের শিকার হবার ভয়েই ছেলে স্কুলে যেতে চায় না, এটা পরিবারের বুঝতে সময় লেগেছে।

এমন একটি পরিস্থিতি সম্পর্কে স্কুলে কেন কখনো অভিযোগ করা হয়নি, বিবিসির এমন প্রশ্নের জবাবে মি. করিম বলেছেন, "ও (ছেলে) নালিশ করতে দিতে চাইতো না।"

তিনি বলেছেন, "অভিযোগ করলে স্কুলে যদি আরো বিরূপ কোন পরিস্থিতির শিকার হতে হয়, এমন আশংকায় সে কখনো আমাদেরকে নালিশ জানাতে দিতে রাজি হত না।"

এখন ছেলের মৃত্যুর পর আর এ নিয়ে কোন অভিযোগ জানাতে চায় না পরিবার।

কিন্তু মি. করিম বলছেন, তিনি চান স্কুলগুলোতে যেন শিশু-কিশোরদের সাথে যত্নের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়। তারা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের শিকার হলে মানসিকভাবে কতটা ভেঙ্গে পড়তে পারে-সেটি যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়।

স্কুল কী বলছে?
মারা যাওয়া ছেলেটি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখায় দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল।

স্কুলের ওই শাখার প্রধান সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন বিবিসিকে বলেছেন, বুলিয়িংয়ের অভিযোগ সম্পর্কে তারা জানতেন না।

তিনি বলেছেন, "ছেলেটির ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল সত্যি, কিন্তু এজন্য তাতে কেউ খেপাচ্ছে বা কথা শোনাচ্ছে এরকম আমরা শুনি নাই। আমাদের কাছে কেউ এ নিয়ে অভিযোগও করেনি।"

তিনি বলেন, "অভিযোগ পেলে নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্ট শিক্ষক বা ছাত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতাম আমরা।"