ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮, মার্চ ২০২৪ ১৫:৪৮:৩৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের নায়িকা অরুণা আসফ আলী

ট্রেশ জফি

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:৪৯ পিএম, ১৭ জুলাই ২০২১ শনিবার

অরুণা আসফ আলী

অরুণা আসফ আলী

অরুণা আসফ আলী ভারতীয় উপমহাদেশের একজন স্বনামধন্য রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার অবদান অপরিসীম। তাকে বলা হয় ভারত ছাড়ো আন্দোলনের নায়িকা। সক্রিয় স্বাধীনতা সংগ্রামীর পাশাপাশি অরুণা ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ, সমাজতান্ত্রিক, রাজনীতিবিদ ও সংবাদপত্র প্রকাশক।

তিনি ছিলেন বাঙালী ব্রাহ্ম পরিবারের মেয়ে। তার প্রকৃত নাম ছিল অরুণা গাঙ্গুলী। তার জন্ম হয় ১৯০৯ সালের ১৬ জুলাই তখনকার পঞ্জাব প্রদেশের (বর্তমানে হরিয়ানা) কালকা নামের এক ছোট শহরে। অরুণা ১৯৯৬ সালের ২৯ জুলাই সাতাশি বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের আদি নিবাস পূর্ব বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশের) বরিশাল জেলায়। তার বাবার নাম উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়। মা অম্বালিকা দেবী ব্রাহ্ম সমাজের নেতা ও ব্রহ্ম সঙ্গীত রচয়িতা ত্রৈলোক্যনাথ সান্যালের কন্যা। 

অরুণার এব কাকা নগেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কনিষ্ঠা কন্যা মীরা দেবীর বিয়ে হয়। আরেক কাকা ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় 'বম্বে টকিজে'র চলচ্চিত্র পরিচালক। 

১৯২৮ সালে অরুণা মুক্তি সংগ্ৰামী ও দেশকৰ্মী আসফ আলীকে বিয়ে করেন। নাম পরিবর্তন করে হন অরুণা আসফ আলী। 

অরুণা আসফ আলী ছিলেন ভারতের মুক্তি সংগ্ৰামের পুরোধা ব্যক্তি। তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সদা সক্রিয় ছিলেন। তিনি লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে জড়িত হন। বিয়াল্লিশের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে তিনি সক্ৰিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন। একই বছর ৯ আগস্ট অরুণা আসফ আলী মুম্বাই গোয়ালিয়া টেংক ময়দানে ইউনিয়ন জেক নামিয়ে এনে তার জায়গায় ত্রিরঙা পতাকা উড়িয়ে সংগ্ৰামী সকলের মাঝে উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্ৰামে জড়িত থাকায় তাকে বেশ কয়েকবার জেলে যেতে হয়েছিল।

১৯৪২ সালের ৮ আগস্ট নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটি ভারত ছাড়ো প্রস্তাব গ্রহণ করলে অরুণা দেশবাসীকে এই শেষ সংগ্রামটিতে অংশগ্রহণ করতে আহ্বান জানান। এই খবর পাওয়ার সাথে সাথে ব্রিটিশ সরকার মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরুসহ প্রধান প্রধান নেতাদের গ্রেপ্তার করে। আর এর সাথে সাথেই চারদিকে বিদ্রোহ শুরু হয়। 

দেশের জনতা রাজপথে বেরিয়ে এসে বন্দে মাতরম, মহাত্মা গান্ধী কী জয়, ব্রিটিশ ভারত ছাড়ো ধ্বনিতে আকাশ কাঁপিয়ে তোলে। এ সময় আন্দোলনকে আরও সক্রিয় করতে বহু নেতা আত্মগোপন করেন। অরুণা আসফ আলী ছাড়াও আত্মগোপন করা নেতাদের মধ্যে ছিলেন- জয়প্রকাশ নারায়ণ, রাম মনোহর লোহিয়া, অচ্যুৎ পট্টবর্ধন। 

আত্মগোপনকারী নেতারা গোপনে থেকে দেশব্যাপী বেশ কিছু আক্রমণ পরিচালনা করেন। এই সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৭০ টা রেল স্টেশন, ৫৫০ টা পোষ্ট অফিস, ৭০ টা পুলিশ স্টেশন এবং ৮৫ টা সরকারি আবাসিক বাড়ি ধ্বংস করেন। অনেক জায়গায় রেললাইন, টেলিফোন, টেলিগ্রাফ লাইন সংযোগহীন করে দেওয়া হয়। 

সে সময় আসামের সড়কপথ আর জলপথে রেল বগির উপরে ফেলা হয় এবং উড়োজাহাজ ঘাঁটিতে অগ্নি সংযোগ করা হয়। সে সময়ে আসামে আত্মগোপন করা সকলের ভিতরে ছিলেন-শঙ্কর বরুয়া, জ্যোতিপ্রসাদ, ব্রজ শর্মা, লক্ষ্মীপ্রসাদ গোস্বামী, গহণ চন্দ্র গোস্বামী আদি। তাদের নেতৃত্বেই এই কাজগুলো সম্পন্ন হয়। 

অরুণা আসফ আলী আত্মগোপন করেন সাতারা, বালিয়া, নাগপুর এলাকায়। এ সব জায়গায় ঘুরে ঘুরে তিনি সমান্তরাল সরকার গঠন করার চেষ্টায় কাজ করে যান। অরুণা আসফ আলী আসামেও আসেন এবং আসামে নিজ নেতা-কর্মী সক্রিয় আন্দোলনের পরামর্শ দেন।

পরে তিনি কংগ্ৰেসের প্ৰতি আস্থা হারিয়ে ভারতীয় জাতীয় কংগ্ৰেস ত্যাগ করেন। যোগ দেন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে। ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পর, তিনি গরীব জনসাধারণের সাথে মিলে কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করেন। তিনি দিল্লী মহানগরের প্ৰথম নারী মেয়র।

সমাজে প্ৰগতি আর শান্তি আনতে তার প্ৰচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ১৯৬৪ সালে আন্তর্জাতিক লেনিন শান্তি পুরষ্কারে ভূষিত হন। ১৯৯১ সালে তাকে জওহরলাল নেহরু পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৯৯৭ সালে ভারত সরকার তাকে দেশের সর্ব্বোচ্চ সম্মান ভারত-রত্ন উপাধিতে সম্মানিত করে। ১৯৯৮ সালে তার স্মৃতিতে একটি স্ট্যাম্প প্রকাশ করে ভারত সরকার।

তিনি জাতীয় নারী ফেডারেশনের সভানেত্রী ছিলেন। জাতীয় নারী কনফারেন্সের সাথে জড়িত থাকার কারণে দিল্লি কংগ্রেস কমিটির সভানেত্রী হন।

গতকাল ছিলো এই সাহসী নেত্রীর ১১২তম জন্মবার্ষিকী। জন্মবার্ষিকীতে তার প্রতি রইলো শ্রদ্ধা।