রিকশাচালক জেসমিন
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০২:১৫ পিএম, ১২ নভেম্বর ২০১৭ রবিবার | আপডেট: ০৮:২১ পিএম, ২৯ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার
সন্তানদের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে রিকশার প্যাডেলে পা রেখেছেন জেসমিন। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে সাওয়ারি টানতে টানতে পেড়িয়ে গেছে পাঁচ বছরের বেশি সময়। অনেক চড়াই-উতরাই পেড়িয়ে আজ তিনি সফল।
চট্টগ্রামের মোসাম্মৎ জেসমিন স্থাপন করেছেন এক ভিন্ন দৃষ্টান্ত৷ পুরুষশাসিত সমাজে তিনি বেছে নিয়েছেন এমন এক পেশা, যা মূলত পুরুষের কাজ হিসেবেই বিবেচিত৷ পাঁচ বছর আগে রিকশা চালানো শুরু করেন জেসমিন৷
স্থানীয়রা জেসমিনের নাম দিয়েছে ‘পাগলি খালা’৷ রিকশা চালানোর সময় তিনি মাথায় হেলমেটও পরেন৷ অন্য রিকশাওয়ালারা সচরাচর তা পরেন না৷
তিন সন্তানের মা জেসমিন৷সন্তানদের ক্ষুধার্ত রাখতে চান না তিনি, চান ভালো স্কুলে তাদের পড়াতে৷ আর তাই বেছে নিয়েছেন রিকশা চালকের পেশা৷
তিনি বলেন, আল্লাহ আমাকে একজোড়া হাত এবং একজোড়া পা দিয়েছেন৷ আমি ভিক্ষা করিনা - তারচেয়ে তার দেয়া উপহার কাজে লাগিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি৷
পাঁচ বছর আগে রিকশা চালানো শুরু করেন জেসমিন৷ এক প্রতিবেশী তাকে কয়েকদিন রিকশা চালানোর আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা গ্রহণ করেন৷
জেসমিন বলেন, শুধু নিজের কথা ভাবলে পরের বাড়িতে দাসী হতে সমস্যা ছিল না৷ কিন্তু সন্তান থাকলে সেটা সম্ভব নয়৷ আর ফ্যাক্টরির কাজ অনেক কঠিন এবং পয়সা অনেক কম৷
সবকিছু বিবেচনা করে শেষমেশ রিকশা চালানোকেই পেশা হিসেবে নেন এই নারী৷ তবে শুরুটা সহজ ছিল না৷ সমাজ থেকে বাধা এসেছিল।
জেসমিন বলেন, আমি নারী বলে কেউ কেউ আমার রিকশায় উঠতে অস্বীকার করেছে৷ কেউ কেউ মনে করতেন, আমি যেভাবে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করি ইসলামে তা করা বারণ৷ কেউ কেউ আবার আমি নারী বলে আমাকে ভাড়া কম দিয়েছে।
এখনো সুযোগ পেলে কেউ কেউ তাকে চটানোর চেষ্টা করেন৷ কিন্তু সেসব গায়ে মাখেন না জেসমিন৷ বরং রিকশা চালান সচেতনভাবেই৷
স্থানীয় এক ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছেন, রাস্তায় নিয়মকানুন মেনেই রিকশা চালান জেসমিন৷ এমনকি হেলমেটও পরেন, যা অন্য রিকশাওয়ালারা সচরাচর পরেন না৷
গত বছর থেকে জেসমিনের রিকশায় পরিবর্তন এসেছে৷এখন ব্যাটারিচালিত রিকশা চালান তিনি৷ গড়ে দৈনিক রোজগার আটশো টাকার মতো৷ দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করলে এমন আয় করতে পারেন তিনি৷ এ থেকে রিকশার দৈনিক ভাড়া মিটিয়ে বাকিটা তার নিজেরই থাকে৷
