ঢাকা, সোমবার ০৬, মে ২০২৪ ৭:০৫:৫২ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু, নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:১৪ পিএম, ২৬ জুলাই ২০২১ সোমবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

করোনা মহামারির মধ্যেই দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গু রোগী। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশের তাপমাত্রা সারা বছর অ্যাডিস মশা জন্মানোর উপযোগী। তবে বৃষ্টিপাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাডিস মশার ঘনত্ব বেড়ে যায়। শীতকালে যখন বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত হয় না, তখনও ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়। তবে সংখ্যা কম।

বাংলাদেশে আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী হয়। তবে জুন, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর এই চারটি মাসকে ডেঙ্গুর মূল মৌসুম বলা হয়। সেই অনুযায়ী এই ডেঙ্গুর মৌসুমে করোনার মধ্যে প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে হাসপাতালে।

সারাদেশে রোগটির তেমন প্রকোপ না থাকলেও রাজধানীবাসী এডিস মশাবাহী রোগটি নিয়ে বেশ চিন্তিত। কারণ ২০১৯ সালের দুঃসহ স্মৃতি তাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি জুলাই মাসের ২৫ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৩০৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১০৫ জন। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু সন্দেহে মারা গেছেন তিনজন। যদিও আইইডিসিআর ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছর এক হাজার ৬৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাইরের ৪৭ জন। এখনো রাজধানীতে ৪৬০ জন ও রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ছয়জন ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

রোববার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে সংস্থাটির মুখপাত্র ও পরিচালক (সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম ডেঙ্গু নিয়ে অবহেলা না করার আহ্বান জানিয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার এন্টিজেন কিটের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে এ পরীক্ষাটি বিনামূল্যে করার সুযোগ রয়েছে। ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে বিলম্ব না করে সরকারি কিংবা বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডেঙ্গু পরীক্ষা করুন।’

পরিষ্কার পানি জমা হয়, এ রকম পাত্র, ফুলের টব, হাঁড়ি-পাতিল, চিপসের প্যাকেট বাড়ির আশপাশে না রাখতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। দু-তিন দিনের বেশি সময় যাতে কোথাও পানি জমে না থাকে, সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারের চেষ্টা

এদিকে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ডেঙ্গু যেন নতুন আতঙ্ক হিসেবে দেখা না দেয় সেই চেষ্টা করছে সরকার। রোববার এডিস মশার প্রাদুর্ভাব ও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় করণীয় ঠিক করতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এক জরুরি সভা করেছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী জানান, এডিসসহ অন্যান্য মশার প্রাদুর্ভাব ও ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণে যে এলাকায়, অর্থাৎ যে বাসাবাড়িতে রোগী পাওয়া যাবে, হাসপাতাল থেকে সেই ব্যক্তির নাম-ঠিকানা নিয়ে তার বাসাসহ ওই অঞ্চল চিহ্নিত করে বিশেষ চিরুনি অভিযান চালানো হবে।

ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে গঠিত ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সমন্বয় সেল’ এবং দুই সিটি করপোরেশনে তথ্য পাঠানোর জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন মন্ত্রী।

তাজুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যেসব অঞ্চলকে এডিস মশার হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, অর্থাৎ যে অঞ্চল থেকে বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে, সেসব এলাকায় সোমবার (২৬ জুলাই) থেকে চিরুনি অভিযান চালানো হবে।’

ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা হাসপাতাল

এদিকে রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায় আলাদা হাসপাতাল নির্ধারণ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল, টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালসহ আরও কয়েকটি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা হবে।

মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তদর থেকে এই বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী আপনারা ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা নেবেন।’

দেশের ইতিহাসে ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল সবচেয়ে বেশি। ওই বছর প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু বিস্তৃত হয় ৬৪ জেলায়। সেসময় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়ায় এবং এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৪৮ জনের মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। যদিও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের কাছ থেকে আড়াইশ’র বেশি মানুষের এই রোগে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

মাঝে করোনা প্রাদুর্ভাবের বছর ২০২০ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম ছিল। মোট এক হাজার ৪০৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন। এদের মধ্যে সাতজন ডেঙ্গুতে মারা যান। এবার করোনার প্রকোপ গতবারের চেয়ে বেশি। এই অবস্থায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করলে তা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

-জেডসি