ঢাকা, রবিবার ২৮, এপ্রিল ২০২৪ ০:৩৯:৪১ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

৭০ বছর পর ছেলেকে ফিরে পেয়ে আপ্লুত শতবর্ষী মা

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৭:৫৯ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ শনিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

হারিয়ে যাওয়ার ৭০ বছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন শতবর্ষী মা মঙ্গলের নেছা। ১০ বছর বয়সে হারিয়ে যান একমাত্র ছেলে কুদ্দুছ মুন্সি। এরপর থেকে ছেলেকে ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখতেন মা। 

শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সে স্বপ্ন পূরণ হলো মা মঙ্গলের নেছার। হারিয়ে যাওয়া ১০ বছরের শিশু কুদ্দুছ মুন্সি এখন ৮০ বছরের বৃদ্ধ। দীর্ঘ ৭০ বছর পর সেই মা ফিরে পেলেন একমাত্র ছেলেকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে ছেলে কুদ্দুছ মুন্সিকে ফিরে পান মঙ্গলের নেছা।  

ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আশ্রাফবাদ গ্রামের বোন ঝড়না বেগমের বাড়িতে মা ছেলের এই মিলন হয়। ছেলেকে ফিরে পেয়ে ১১০ বছর বয়সী মা আবেগ আপ্লুত হয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এই দৃশ্য দেখে সেখানে উপস্থিত শতাধিক নারী পুরুষের চোখেও পানি চলে আসে। মঙ্গলের নেছা বলতে থাকেন, ‘কুদ্দুছ তুই একদিন ফিরে আসবি এটা আমি বিশ্বাস করতাম। আল্লাহর কাছে তোকে ফিরে পাওয়ার এই দোয়াই করেছি। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন।’

জানা যায়, সাত বছর বয়সে কুদ্দুছ মুন্সির বাবা কালু মুন্সি মারা যান। এরপর মা মঙ্গলের নেছা ১০ বছর বয়সী ছেলেকে লেখাপড়া করাতে পাশের বাড়ির জামাই নবীনগর উপজেলার দীর্ঘশাইল গ্রামের পুলিশ সদস্য আব্দুল আউয়ালের সঙ্গে রাজশাহী জেলার আত্রাই উপজেলায় পাঠান। সেখানে গিয়ে কুদ্দুছ মুন্সি হারিয়ে যান। অনেক খোঁজাখুজি করেও সে সময় কুদ্দুস মুন্সিকে আর খুঁজে পাননি আউয়াল মিয়া।

পরে কুদ্দুছ মুন্সিকে আত্রাই উপজেলার সিংশাইর গ্রামের সাদেক মিয়ার নিঃসন্তান স্ত্রী লালন পালন করেন। ৩০ বছরে বয়সে বাগমারা উপজেলার সবেদ মিয়ার মেয়ে শুরুজ্জাহানকে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতেই বসবাস করতে থাকেন কুদ্দুছ মুন্সি।

গত ১২ এপ্রিল আত্রাই উপজেলার সিংশাইর গ্রামে এমকে আইয়ূব নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুক আইডিতে কুদ্দুছ মুন্সির হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা জানিয়ে একটি ভিডিও আপলোড করেন। পরে ভিডিওটি ভাইরাল হয়। ৫ সেপ্টেম্বর ওই ভিডিওর সূত্র ধরে ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কয়েকজন যোগাযোগ করে আইয়ূবের সঙ্গে। তারা সেখানে যান এবং মায়ের সঙ্গে কথা কুদ্দুছ মুন্সিকে ভিডিও কলে কথা বলিয়ে দেন। এ সময় মঙ্গলের নেছা ছেলের হাতে থাকা কাটা দাগের চিহ্ন দেখে তাকে নিজ সন্তান হিসেবে শনাক্ত করেন।

কুদ্দুছ মুন্সি বলেন, ‘হারিয়ে যাওয়ার পর রাজশাহী জেলার আত্রাই উপজেলার সিংশারা গ্রামের সাদিক মিয়ার স্ত্রী আমাকে ছেলের মত লালন পালন করেন।  বিয়ের পর আমি আমার শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করে আসছি। কিন্তু মনে মনে আমার মা ও বোনদের খোঁজার চেষ্টা করেছি। আমার বিশ্বাস ছিল একদিন আমার মার সন্ধান আমি পাবো। মায়ের বুকে ফিরতে পেরে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ এখন আমি। বাকি জীবনটা মার সঙ্গেই থাকবো।’ 

আত্রাই উপজেলার এমকে আইয়ূব জানান, ‘কুদ্দুছ মুন্সি হারিয়ে যাওয়ার গল্প শুনে আমি আমার ফেসবুকে একটি ভিডিও আপলোড করি। সে ভিডিও সূত্র ধরে কুদ্দুছ মুন্সির বাড়ির কিছু লোকজন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। হাতের কাটা চিহ্ন দেখে তারা কুদ্দছ মুন্সিকে শনাক্ত করেন। ’

কুদ্দুছ মুন্সির ছেলে হাফেজ সোহেল মুন্সি বলেন, ‘কোনোদিন ভাবিনি আমার দাদিকে দেখতে পাবো। আমার বাবা তার মাকে ফিরে পাবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হয়েছেন। আল্লার কাছে শুকরিয়া।